গত সাত মাসে ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলে সাত অধিনায়ক দেখা গেছে। তারা হলেন- বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, রিশাভ পান্ত, হার্দিক পান্ডিয়া, জাসপ্রিত বুমরাহর পর শিখর ধাওয়ান। একেক সিরিজে দলটির একেক জনের নেতৃত্বে খেলাটা যেন দলটির অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বার বার অধিনায়ক পরিবর্তন নিঃসন্দেহে দলের জন্য চ্যালেঞ্জিং। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড-বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলিও মনে করেন, বিষয়টি ভালো কিছু নয়। একই সঙ্গে অসহায় কণ্ঠে তিনি বললেন, পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
ভারত দলে কোহলির নেতৃত্বের পথচলা শেষ হওয়ার পরই মূলত এই সংকটটা তৈরি হয়েছে। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে শেষ হয় কোহলির এই সংস্করণের নেতৃত্বের অধ্যায়। পরে তাকে ওয়ানডের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রোহিতকে সীমিত ওভারের দুই সংস্করণেই অধিনায়ক করে বিসিসিআই। গত জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট সিরিজ শেষে হুট করে লাল বলের ক্রিকেটের নেতৃত্বও ছেড়ে দেন কোহলি। পরের মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের আগে টেস্টের অধিনায়কত্বও পান রোহিত।
জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কেপ টাউন টেস্ট ছিল ভারতের অধিনায়ক হিসেবে কোহলির শেষ ম্যাচ। ওই সিরিজে জোহানেসবার্গে দ্বিতীয় টেস্টে তিনি চোটের কারণে না থাকায় নেতৃত্ব দেন রাহুল। রোহিতের চোটে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও অধিনায়কত্ব করেন তিনি। চোট কাটিয়ে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে ভারতকে নেতৃত্ব দেন রোহিত। পরে ঘরের মাঠেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে রোহিতকে বিশ্রাম দিয়ে শুরুতে রাহুলকে নেতৃত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু রাহুল চোটে ছিটকে যাওয়ায় অধিনায়ক করা হয় কিপার-ব্যাটসম্যান পান্তকে।
এরপর আয়ারল্যান্ড সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজে নেতৃত্ব দেন অলরাউন্ডার পান্ডিয়া। একই সময়ে গত বছরের স্থগিত হওয়া টেস্ট ম্যাচটি নতুন সূচিতে খেলতে ইংল্যান্ডে ছিল ভারতের লাল বলের দল। কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচে রোহিত কোভিড আক্রান্ত হওয়ায় এজবাস্টনে এই টেস্টে অধিনায়কত্ব করেন পেসার বুমরাহ। আসছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ওয়ানডে সিরিজের জন্য অধিনায়ক করা হয়েছে ধাওয়ানকে। কেননা, টানা খেলায় বিশ্রামের অংশ হিসেবে এই সিরিজের দলে রাখা হয়নি রোহিত, কোহলি, পান্ত, পান্ডিয়া, বুমরাহকে। একেক সিরিজে একেক অধিনায়ক নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিষয়টি নিয়ে এবার কথা বললেন স্বয়ং বোর্ড প্রধান।
সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি বলেন, আমি পুরোপুরি একমত, এত অল্প সময়ের মধ্যে ৭ জন আলাদা অধিনায়ক থাকা আদর্শ ব্যাপার নয়। কিন্তু এটি অনিবার্য পরিস্থিতির কারণে ঘটেছে। যেমন, রোহিত দক্ষিণ আফ্রিকায় সাদা বলের সিরিজে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল, কিন্তু এই সফরের আগে সে চোটে পড়ল। তাই আমরা কেএলকে (লোকেশ রাহুল) ওয়ানডের নেতৃত্ব দিয়েছিলাম এবং এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজের জন্যও, সিরিজটি শুরু হওয়ার একদিন আগে সেও চোটে পড়ল।
তিনি আরও জানান, ইংল্যান্ডে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সময় রোহিত কোভিড আক্রান্ত হলো। এই পরিস্থিতিতে কারও দোষ নেই। সূচিই এমন যে আমাদের খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিতে হচ্ছে এবং এরপর চোটাঘাত তো আছেই। ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের ব্যাপারটিও মাথায় রাখতে হয়। প্রতিটি সিরিজে প্রধান কোচ রাহুলের (দ্রাবিড়) অবস্থাটা আমরা বুঝতে পারি। অনিবার্য পরিস্থিতির কারণে আমাদের নতুন অধিনায়ক বেছে নিতে হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ