হ্যারি টেক্টরের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম জয়ের স্বপ্ন দেখছিল আয়ারল্যান্ড। রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার ম্যাচে শেষ ওভারে সমীকরণ খুব কঠিন ছিল সফরকারীদের জন্য। কিন্তু শেষ ওভারে মাইকেল ব্রেসওয়েলের তাণ্ডবে পিষ্ট হলো আইরিশদের জয়ের আশা। অবিশ্বাস্য এক জয়ে অঘটন এড়াল নিউজিল্যান্ড। ডাবলিনের ম্যালাহাইডে রবিবার (১০ জুলাই) প্রথম ওয়ানডেতে ১ উইকেটে জিতেছে কিউইরা। আয়ারল্যান্ডের ৩০০ রান পেরিয়ে গেছে ১ বল বাকি থাকতে।
ক্রেইগ ইয়াংয়ের করা শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ২০ রান। প্রথম দুই বলে দুটি চার মারেন ব্রেসওয়েল। পরের বলে শাফল করে ওড়ান ছক্কায়। চতুর্থ বলে আবার মারেন বাউন্ডারি। ইয়াং যেন ভেবে পাচ্ছিলেন না বল ফেলবেন কোথায়। ২ বলে যখন ২ রান প্রয়োজন, তখনও বাউন্ডারিকেই আপন করে নেন কিউই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। ছক্কায় শেষ করে দেন ম্যাচ। শেষ ১০ ওভারে ১০১ রানের সমীকরণ মেলান ১০ ও ১১ নম্বর ব্যাটসম্যানকে নিয়ে। এই ব্যাটিং বীরত্বের জন্য ব্রেসওয়েল জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
আগের তিন ওয়ানডে মিলিয়ে ব্রেসওয়েলের রান ছিল মোটে চার। এবার তিনি ৮২ বলে ৭ ছক্কা ও ১০ চারে ১২৭ রানের ইনিংসে ফিরলেন দলের জয়কে সঙ্গে নিয়ে। ম্যাচের শেষ ভাগে নায়ক তিনিই। তবে প্রথম অংশে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি গড়ে দিয়েছিলেন টেক্টর। তিন ছক্কা ও ১৪ চারে খেলেছিলেন ১১৩ রানের চমৎকার ইনিংস।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি আয়ারল্যান্ডের। ২৬ রানে দুই ওপেনারকে হারায় তারা। পল স্টার্লিংকে বোল্ড করে দেন দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা লকি ফার্গুসন। ম্যাট হেনরির বলে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবার্নি। দুইজনের কেউই যেতে পারেননি দুই অঙ্কে।
এরপর আয়ারল্যান্ডের ইনিংস এগোয় মূলত টেক্টরকে ঘিরে। ভারতের বিপক্ষে কদিন আগে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে সামর্থ্যের ঝলক দেখানো তরুণ এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরির পথে উপহার দেন তিনটি পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি। তৃতীয় উইকেটে অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের ৬০ রানের জুটিতে গড়েন প্রাথমিক প্রতিরোধ। থিতু হলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি ম্যাকব্রাইন। এক ছক্কা ও চারটি চারে ফেরেন ৩৯ রান করে।
এরপর ৯৪ রানের জুটিতে প্রায় সমান গতিতে রান তোলেন কার্টিস ক্যাম্পার ও টেক্টর। ৭১ বলে ফিফটি করেন দারুণ ছন্দে থাকা টেক্টর। ওয়ানডেতে এটি তার টানা চতুর্থ পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস, সবশেষ ১১ ওয়ানডেতে অষ্টম। তাদের জমে যাওয়া জুটি ভাঙেন অভিষিক্ত গ্লেন ফিলিপস। এক ছক্কা ও পাঁচ চারে ৪৭ বলে ৪৩ রান করে বোল্ড হয়ে যান ক্যাম্পার। পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর রানের গতিতে দম দেন টেক্টর। লেগ স্পিনার ইশ সোধির ওভারে ছক্কা ও দুই চার মেরে আশির ঘরে পৌঁছে যান তিনি। ব্লেয়ার টিকনারকে টানা চারটি চার হাঁকিয়ে ১০৯ বলে কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কে পা রাখেন টেক্টর। এরপর এগোতে পারেননি বেশি দূর।
রান তাড়ায় নিউজিল্যান্ডের শুরুটা ছিল নড়বড়ে। ১৯ রানের মধ্যে বিদায় নেন ফিন অ্যালেন ও উইল ইয়াং। এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা করছিলেন মার্টিন গাপটিল। তবে টম ল্যাথাম ও হেনরি নিকোলসকে বিদায় করার পর এই ওপেনারকে বোল্ড করে আইরিশদের চালকের আসনেই রাখেন ক্যাম্পার। ১২০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা নিউ জিল্যান্ড ঘুরে দাঁড়ায় ব্রেসওয়েলের ব্যাটে। তাকে খুব একটা সঙ্গ দিতে পারেননি ফিলিপস। মূলত লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নিয়ে দলকে অসাধারণ এক জয় এনে দেন ব্রেওয়েল।
সপ্তম উইকেটে সোধির সঙ্গে গড়েন ৬১ রানের জুটি। সেখানে সোধির অবদান একটি করে ছক্কা ও চারে ৩৫ বলে ২৫। ম্যাট হেনরি ফেরেন শূন্য রানে। এরপর ম্যাচে নিজেদের সেরা জুটি পায় নিউ জিল্যান্ড। নবম উইকেটে ফার্গুসনের সঙ্গে ব্রেসওয়েল গড়েন ৬৪ রানের জুটি। এক চারে ফার্গুসন ৮ রান করে বিদায় নেওয়ার সময় নিউ জিল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ১ ওভারে ২০। সেটা মিলিয়ে দিয়ে নায়কের বেশেই মাঠ ছাড়েন ব্রেসওয়েল। ৫১ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন তিনি। এরপর বাড়ান রানের গতি। ৭৪ বলে আসে তার সেঞ্চুরি। মূলত তার এই খুনে ব্যাটিংয়েই ভাঙে আইরিশদের জয়ের স্বপ্ন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আয়ারল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩০০/৯ (স্টার্লিং ৫, বালবার্নি ৯, ম্যাকব্রাইন ৩৯, টেক্টর ১১৩, ক্যাম্পার ৪৩, টাকার ২৬, ডকরেল ১৮, অ্যাডায়ার ০, সিমি ৩০, ক্রেইগ ইয়াং ০*; হেনরি ১০-১-৬২-১, ফার্গুসন ১০-১-৪৪-২, টিকনার ১০-০-৭১-২, সোধি ১০-০-৬২-২, ব্রেসওয়েল ৮-০-৪২-০, ফিলিপস ২-০-৯-১)
নিউজিল্যান্ড: ৪৯.৫ ওভারে ৩০৫/৯ (গাপটিল ৫১, অ্যালেন ৬, উইল ইয়াং ১, ল্যাথাম ২৩, নিকোলস ৭, ফিলিপস ৩৮, ব্রেসওয়েল ১২৭*, সোধি ২৫, হেনরি ০, ফার্গুসন ৮, টিকনার ০*; অ্যাডায়ার ৭-১-৪৩-২, ক্রেইগ ইয়াং ৯.৫-০-৭৮-১, লিটল ৬-০-৪৬-১, ক্যাম্পার ১০-০-৪৯-৩, সিমি ১০-০-৫২-০, ম্যাকব্রাইন ৭-০-৩৩-১)
ফল: নিউজিল্যান্ড ১ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মাইকেল ব্রেসওয়েল
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে নিউ জিল্যান্ড
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ