শেষ বিকালে হঠাৎই পাল্টে গেল ম্যাচের চিত্র। মাত্র ৪৫ রানের মধ্যে চার উইকেট হারিয়ে দিশাহারা ভারত। জিততে হলে আরও ১০০ রান করতে হবে সফরকারীদের। হাতে ছয় উইকেট আছে। কিন্তু ড্রেসিং রুমে স্বীকৃত ব্যাটসম্যান মাত্র দুজন- রিশভ পান্থ ও শ্রেয়াস আইয়ার। তৃতীয় দিন শেষ বিকালে মিরপুরের উইকেটের যে আচরণ, তাতে ১০০ রানই এখন ভারতীয়দের কাছে মনে হচ্ছে দূরের বাতিঘর।
যদিও তৃতীয় দিন শেষে ঢাকা টেস্টের যে সমীকরণ- সাধারণ দৃষ্টিতে মনে হবে এগিয়ে ভারত। কিন্তু ম্যাচের যে পরিস্থিতি, পাহাড় সমান চাপ এবং উইকেটের যে অবস্থা-তাতে বাংলাদেশ জিতে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
জয়ের মতো যথেষ্ট পুঁজি অবশ্য পায়নি বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থতার পরিচয় দেন দলের ওপরের দিকের ব্যাটসম্যানরা। জাকির হাসানের ফিফটি ছাড়া আর কেউই পারেননি বলার মতো ইনিংস খেলতে। মাত্র ১১৩ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর মনে হচ্ছিল, তিন দিনেই হয়তো হেরে যাবে বাংলাদেশ।
তবে শেষ দিকে নুরুল হাসান সোহান ও তাসকিন আহমেদকে নিয়ে দলকে দুইশ পার করান লিটন। ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। সোহান ও তাসকিনের ব্যাট থেকে আসে ৩১ রানের দুটি ইনিংস। এই দুই জুটিতে রান ওঠে ১০৬। ভারতের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৪৫।
খালি চোখে এটি তেমন বড় কিছু নয়। কিন্তু তৃতীয় দিনে শেষ বিকেলে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৪ উইকেট আদায় করে নেয় বাংলাদেশ। লোকেশ রাহুলকে ফিরিয়ে প্রথম ব্রেক থ্রু দেন সাকিব আল হাসান। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ ফিরিয়ে দেন চেতেশ্বর পুজারা, শুবমান গিল ও বিরাট কোহলিকে। ভারত দিন শেষ করে ৪ উইকেটে ৪৫ রান নিয়ে।
মাঠের পারফরম্যান্সের সেই আত্মবিশ্বাস দিনশেষে ফুটে উঠল সংবাদ সম্মেলনে লিটনের কণ্ঠেও। তিনি বলেন, অবশ্যই জেতা সম্ভব। আমরা যদি আগামীকাল (রবিবার) সকালে ২-১ উইকেট নিয়ে নিতে পারি, অবশ্যই জেতা সম্ভব।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ পিছিয়ে ছিল ৮৭ রানে। সেখান থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে কিছুটা হলেও লড়াই করতে পারে তারা। এরপর সাকিব-মিরাজদের বোলিংয়ে ম্যাচ মোড় নেয় নাটকীয় দিকে। লিটনের মতে, বাংলাদেশই এখন এগিয়ে আছে ম্যাচে।
তিনি বলেন, অবশ্যই, এ মুহূর্তে আমরাই এগিয়ে। তারা চাপে আছে। আমরা ভালো পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামলে তারা ভেঙে পড়তে পারে। এটাই আমাদের লক্ষ্য। আমাদের জিততে হবে। পরিকল্পনা এটুকুই।
স্বল্প পুঁজি নিয়ে লড়াই করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের পরিকল্পনা ছিল ভারতের সামনে ২০০ রানের বেশি লক্ষ্য দেওয়ার। সেটি সম্ভব না হলেও মিরপুরের উইকেটে ভরসা রেখে জয়েই চোখ রাখছেন লিটন।
তিনি জানান, আমরা জানি মিরপুরে চতুর্থ ইনিংস সবসময়ই কঠিন। সব ব্যাটারের জন্যই। আমরা ২০০-২২০ লক্ষ্য দিতে চেয়েছিলাম। তবে যে স্কোর দাঁড় করেছি, এখনও আরও ১০০ রান দরকার। অনেক কঠিন কিন্তু। এখন যে অবস্থা, এই লক্ষ্য জয়ের জন্য যথেষ্ট।
বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা জোরাল করার মূল কারিগরদের একজন মেহেদী হাসান মিরাজ। ভারতের ৪ উইকেটের ৩টিই নিয়েছেন তিনি। ব্রডকাস্টারের সঙ্গে কথোপকথনে বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার বললেন, চতুর্থ সকালে শুরুটা ভালো করকে চান তারা।
লিটন বলেন, আমরা শুরু থেকেই ইতিবাচক চিন্তা করছিলাম। আমাদের মনে হচ্ছিল, এখানে ব্যাটিং করা সহজ হবে না। আমাদের ভালো সুযোগ রয়েছে। যদিও তাদের ব্যাটিং লাইনআপ খুব ভালো। তবে আমরা যদি আগামীকাল (রবিবার) সকালে দ্রুত ২ উইকেট নিতে পারি, তাহলে (জয়ের) দারুণ সুযোগ আছে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ