দুইশ ছাড়ানো রান তাড়ায় পাথুম নিসাঙ্কা ও কুসাল মেন্ডিসের ব্যাটে জবাবটা ভালোই দিচ্ছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু শেষ দিকে পাল্টে গেল দৃশ্যপট। শেষ পাঁচ ওভারে মুখ থুবড়ে পড়ল লঙ্কানদের ব্যাটিং। নাটকীয় ধসে ৩০ রানে শেষ ৯ উইকেট হারিয়ে ফেলল তারা। বড় জয়ে সিরিজ শুরু করল ভারত। পাল্লেকেলেতে শনিবার (২৭ জুলাই) তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ভারত জয় ৪৩ রানে।
ভারতের টি-টোয়েন্টি দলের নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচটি সূর্যকুমার যাদব স্মরণীয় করে রাখেন বিধ্বংসী ফিফটিতে। তার সঙ্গে ইয়াশাসভি জয়সওয়াল, শুবমান গিল ও রিশাভ পান্তের কার্যকর ইনিংসে ২১৩ রানে পুঁজি গড়ে ভারত। ২ ছক্কা ও ৮ চারে ২৬ বলে ৫৮ রান করেন সুরিয়াকুমার। ঝড়ো উদ্বোধনী জুটিতে ২১ বলে ৪০ রান করেন জয়সওয়াল, ১৬ বলে ৩৪ গিল। মন্থর শুরুর পর পুষিয়ে দিয়ে পান্ত করেন ৩৩ বলে ৪৯।
রান তাড়ায় শ্রীলঙ্কাকে দারুণ কিছুর স্বপ্ন দেখানো নিসাঙ্কা ৪ ছক্কা ও ৭ চারে ৪৮ বলে ৭৯ রানের ইনিংস খেলেন। ২৭ বলে ৪৫ রান করার পথে ১ ছক্কা ও ৭ চার মারেন মেন্ডিস। তবে পরের দিকের ব্যাটসম্যানরা পারেননি নিজেদের কাজটা করতে। এই দুইজন ছাড়া আর কেউ ২০ রানও পার করতে পারেননি। তাতে ১৭০ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। জয় দিয়ে ভারতের কোচ হিসেবে পথচলা শুরু করলেন গৌতাম গাম্ভির। বিপরীত অভিজ্ঞতা হলো লঙ্কানদের নতুন কোচ সানাৎ জায়াসুরিয়া ও নতুন অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কার।
জয়সওয়াল ও শুবমান গিলের তাণ্ডবে উদ্বোধনী জুটিতে ৭৪ রান পায় টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ভারত। পরপর দুই বলে বিদায় দেন দুই ওপেনার। ষষ্ট ওভারের শেষ বলে ক্যাচ তুলে দেন ১ ছক্কা ও ৬ চারে ১৬ বলে ৩৪ রান করা গিল। জয়সওয়ালের ২ ছক্কা ও ৫ চারের ইনিংস থামে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে স্টাম্পড হয়ে। দলকে আরেকটি বড় জুটি উপহার দেন সূর্যকুমার ও পান্ত। দুইজনকেই অবশ্য দ্রুত ফেরাতে পারত শ্রীলঙ্কা। কিন্তু ১৫ রানে সূর্যকুমারের ও ১১ রানে পান্তের ক্যাচ ছাড়েন দলটির ফিল্ডাররা।
জীবন পেয়ে চমৎকার ব্যাটিংয়ে ভারতকে বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে নেন সূর্যকুমার। আরেকপ্রান্তে অধিনায়ককে কেবল সঙ্গ দিয়ে যান পান্ত। তাদের ৪৩ বল স্থায়ী ৭৬ রানের জুটিতে পান্তের অবদান কেবল ১৭ বলে ১৬। দুইজনের যুগলবন্দি ভাঙেন মাথিশা পাথিরানা; এলবিডব্লিউ হন সূর্যকুমার। পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসের সুবাদে ১৬তম বার ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে নেন সূর্যকুমার। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ভিরাট কোহলির সঙ্গে যা যৌথভাবে সর্বোচ্চ।
হার্দিক পান্ডিয়াকে বোল্ড করা লঙ্কান পেসার পাথিরানা নিজের শেষ ওভারে বিদায় করেন রিয়ান পারাগ ও পান্তকে। ৪ ওভারে ৪০ রান দিয়ে ৪ শিকার ধরেন পাথিরানা।
বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় নিসাঙ্কা ও মেন্ডিসের ব্যাটে পাওয়ার প্লেতে ৫৫ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। তাদের ৫২ বল স্থায়ী ৮৪ রানের বিধ্বংসী উদ্বোধনী জুটি ভাঙে মেন্ডিসের বিদায়ে। এরপর কুসাল পেরেরাকে নিয়ে ৩৩ বলে ৫৬ রানের জুটি গড়েন নিসাঙ্কা। যেখানে পেরেরার অবদান কেবল ১০ বলে ১২।
এই দুইজনের জুটিতে দারুণ এক জয়ের স্বপ্ন দেখছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু পঞ্চদশ ওভারে দুই থিতু ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন আকসার প্যাটেল। জায়গা বানিয়ে খেলার চেষ্টায় বোল্ড হন নিসাঙ্কা। ছক্কার চেষ্টায় বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন ২০ রান করা পেরেরা। এরপর বালির বাঁধের মতো ভেঙে পড়ে লঙ্কানদের ব্যাটিং। ১ উইকেটে ১৪০ রান থেকে ১৭০ রানে অলআউট হয়ে যায় আসালাঙ্কার দল। অনিয়মিত স্পিনার পারাগ পান ৩ উইকেট। দুটি করে প্রাপ্তি আর্শদিপ সিং ও আকসারের। দুই দলের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি একই মাঠে রোববার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ২১৩/৭ (জয়সওয়াল ৪০, গিল ৩৪, সুরিয়াকুমার ৫৮, পান্ত ৪৯, পান্ডিয়া ৯, পারাগ ৭, রিংকু ১, আকসার ১০*, আর্শদিপ ১*; মাদুশাঙ্কা ৩-০-৪৫-১, আসিথা ৪-০-৪৭-১, থিকশানা ৪-০-৪৪-০, হাসারাঙ্গা ৪-০-২৮-১, কামিন্দু ১-০-৯-০, পাথিরানা ৪-০-৪০-৪)
শ্রীলঙ্কা: ১৯.২ ওভারে ১৭০ (নিসাঙ্কা ৭৯, মেন্ডিস ৪৫, পেরেরা ২০, কামিন্দু ১২, আসালাঙ্কা ০, শানাকা ০, হাসারাঙ্গা ২, থিকশানা ২, পাথিরানা ৬, আসিথা ০*, মাদুশাঙ্কা ০; আর্শদিপ ৩-০-২৪-২, সিরাজ ৩-০-২৩-১, আকসার ৪-০-৩৮-২, বিষ্ণই ৪-০-৩৭-১, পান্ডিয়া ৪-০-৪১-০, পারাগ ১.২-০-৫-৩)
ফল: ভারত ৪৩ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে ভারত
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ