অস্ট্রেলিয়াতে সিরিজ জয়ের রেশ পুরোপুরি মিলিয়ে যায়নি এখনও। এবার আরেকটি কঠিন চ্যালেঞ্জেও দারুণ সাফল্য আদায় করে নিল পাকিস্তান। ব্যাটে-বলে চমৎকার অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিল তারা এক ম্যাচ বাকি রেখেই।
তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৮১ রানে হারাল পাকিস্তান। আগের ম্যাচে সফরকারী দলটি জিতেছিল ৩ উইকেটে। গত বছরের এপ্রিল থেকে শুরু করে এই নিয়ে টানা পাঁচটি ওয়ানডে সিরিজ জিতল পাকিস্তান। দক্ষিণ আফ্রিকায় গত এক যুগে চার সিরিজের তিনটিতেই তারা পেল জয়ের স্বাদ।
নিউ জিল্যান্ডসে বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তানের শুরুটা খুব ভালো ছিল না। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে শূন্য রানে ফেরেন আব্দুল্লাহ শাফিক। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান সাইম আইয়ুব এবার থামেন ২৫ রানে। তৃতীয় উইকেটে শতরানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন বাবর ও রিজওয়ান। রানের গতি যদিও খুব ভালো ছিল না। ১১৫ রানের জুটি আসে ১৪২ বলে। তবে এই জুটিই গড়ে দেয় পরে ঝড় তোলার ভিত।
বাবর ফিফটি করেন ৭৩ বলে। এরপর পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ৭৩ রানে আন্দিলে ফেহ্লুকোয়াইয়োর নিরীহ এত শর্ট বল তুলে দেন তিনি সরাসরি ফিল্ডারের হাতে। ৬২ বলে ফিফটি ছুঁয়ে রিজওয়ান ছুটছিলেন আরও দ্রুততায়। তার ৭ চার ও ৩ ছক্কার ইনিংস থামে অভিষিক্ত কোয়েনা মাফাকাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে।
পাকিস্তানের ইনিংস নতুন গতি পায় এরপর। কামরান গুলাম ও সালমান আগা ৫০ রানের জুটি গড়েন ৩৭ বলে। আগের ম্যাচের নায়ক সালমান বিদায় নেন ৩০ বলে ৩৩ রান করে। লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে পাকিস্তানকে বড় স্কোরে নিয়ে যান কামরান। এক ম্যাচ আগেই জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান এবার পাঁচছক্কায় করেন ৩২ বলে ৬৩। শেষ ১০ ওভারে পাকিস্তান তোলে ১০৫ রান।
৭২ রানে ৪ উইকেট নেন বাঁহাতি পেসার কোয়েনা মাফাকা, অভিষেকে যা ওয়ানডেতে ইতিহাসে সবচেয়ে খরুচে ৪ উইকেটের রেকর্ড। অভিষেকে তার চেয়ে কম বয়সে ৪ উইকেট অবশ্য নিতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকার কেউ (১৮ বছর ২৫৫ দিন)।
৩৩০ রান তাড়ায় প্রয়োজন ছিল টপ অর্ডারে বড় ইনিংস আর ভালো জুটি। কিন্তু সেটিই পায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা তাদের পেতে দেয়নি পাকিস্তান। প্রোটিয়াদের প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানই দুঅঙ্ক ছুঁয়েছেন। কিন্তু কেবল ক্লসেন ছাড়া উল্লেখযোগ্য ইনিংস খেলতে পারেননি কেউ। চোট কাটিয়ে ফেরা অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ফেরেন ১২ রানে। টনি ডি জর্জি, রাসি ফন ডার ডাসেন, এইডেন মার্করাম, সবাই ২০ ছুঁয়েও ৩৫ পর্যন্ত যেতে পারেননি।
পঞ্চম উইকেটে ক্লসেন ও ডেভিড মিলারের জুটি তবু লড়াইয়ে রাখে দলকে। কিন্তু ৭২ বলে ৭২ রানর জুটি থামে মিলারের ২৯ রানে বিদায়ে। এরপর এক পাশে ক্লসেন শট খেলে গেছেন, আরেকপাশে উইকেট পড়েছে নিয়মিত। দারুণ খেলেও তিন রানের জন্য পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরিটি পাননি ক্লসেন। তার বিদায়েই শেষ হয় ম্যাচ। ওয়ানডেতে সপ্তমবার ম্যাচে ৪ উইকেটের স্বাদ পান শাহিন শাহ আফ্রিদি। আরও তিনবার ৫ উইকেট তো আছেই। সিরিজের শেষ ম্যাচ জোহানেসবার্গে রবিবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ৪৯.৫ ওভারে ৩২৯ (সাইম ২৫, শাফিক ০, বাবর ৭৩, রিজওয়ান ৮০, সালমান ৩৩, কামরান ৬৩, ইরফান ১৫, আফ্রিদি ১৬, নাসিম ০*, রউফ ৬, আবরার ৪; ইয়ানসেন ১০-১-৭৩-৩, মাফাকা ৯.৫-১-৭২-৪, ফোরটান ১০-০-৪৯-১, ফেহ্লুকোয়াইয়ো ৯-০-৫৫-১, শামসি ৯-০-৫৭-০, মার্করাম ৩-০-২০-০)।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৩.১ ওভারে ২৪৮ (বাভুমা ১২, ডি জর্জি ৩৪, ফন ডার ডাসেন ২৩, মার্করাম ২১, ক্লসেন ৯৭, মিলার ২৯, ইয়াসসেন ৩, ফেহ্লুকোয়াইয়ো ১, ফোরটান ৯, মাফাকা ১, শামসি ১*; আফ্রিদি ৮-০-৪৭-৪, নাসিম ৮.১-০-৩৭-৩, রউফ ৮-১-৩৩-০, আবরার ৯-০-৪৮-২, সালমান ১০-০-৭১-১)।
ফল: পাকিস্তান ৮১ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে পাকিস্তান ২-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: কামরান গুলাম।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ