২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৯:১৭
খবর বিবিসির

গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে উদ্বেগ, বাজারে বাড়ছে আরও নিরাপদ প্রযুক্তির চাহিদা

অনলাইন ডেস্ক

গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে উদ্বেগ, বাজারে বাড়ছে আরও নিরাপদ প্রযুক্তির চাহিদা

সুইজারল্যান্ডের এআরএমএ ইন্সট্রুমেন্টস-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী পিম ডোনকার্স বলেছেন, ‘মানুষ বুঝতে পারে না যে নিরাপত্তা এবং স্মার্টফোনের কখনো একসঙ্গে চলতে পারে না।’ এআরএমএ ইন্সট্রুমেন্টস একটি প্রযুক্তি কোম্পানি যেটি অতি-সুরক্ষিত যোগাযোগ ডিভাইস তৈরি করে। তাই, পিম ডোনকার্স স্মার্টফোনের সম্ভাব্য নিরাপত্তা দুর্বলতা সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করতে বেশি আগ্রহী।

তিনি স্মার্টফোনকে একটি মৌমাছির সঙ্গে তুলনা করেন, যেখানে "তৃতীয় পক্ষ ভিতরে এবং বাইরে উড়ে যায়, বাণিজ্য করে এবং ব্যবহারকারীর ডেটা যে সমস্ত সেন্সরের মাধ্যমে সংগৃহীত হয় তার অপব্যবহার করে"। তিনি বলেন, ‘যে কোনো নিরাপদ যোগাযোগের জন্য স্মার্টফোন কখনই উপযুক্ত নয়। এটা কখনই পুরোপুরি নিরাপত্তা দিতে পারবে না।’

স্মার্টফোনের গোপনীয়তার ত্রুটিগুলি সম্পর্কে পিম ডোনকার্সের এ উদ্বেগ মোটেও অমূলক নয়। সম্প্রতি ইসরায়েলের এনএসও গ্রুপের পণ্য স্পাইওয়্যার পেগাসাস আলোচনায় চলে আসে। ৫০ হাজারের বেশি ব্যবহারকারীর ফোনে এ স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে আড়িপাতা হয়েছিল। গত জুলাইয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পেগাসাস আইফোন এবং অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে নিজে থেকে ইনস্টল হয়ে যেতে পারে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের বার্তা, ছবি এবং ইমেল, রেকর্ড কল এবং এমনকি গোপনে মাইক্রোফোন এবং ক্যামেরা সক্রিয় করতে পারে।

একসময় ধারনা করা হতো, একটি ফোন দূর থেকে অ্যাক্সেস করার ক্ষমতা শুধু হাতে গোণা কয়েকটি দেশের হাতেই আছে। কিন্তু প্রযুক্তি খুব দ্রুত এগিয়েছে এবং উচ্চ পর্যায়ের গুপ্তচরবৃত্তি এবং নজরদারি ক্ষমতা এখন অনেক দেশের হাতে চলে গেছে, এমনকি ব্যক্তি এবং নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীও তা করতে সক্ষম।

গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে নিরাপত্তা প্রযুক্তির বিষয়ে গ্রাহকদের আগ্রহ বেড়েছে। গোপনীয়তা রক্ষায় এনক্রিপ্ট করা স্মার্টফোন থেকে শুরু করে অনলাইন সার্চ ইঞ্জিন এবং মানচিত্রের চাহিদাও বেড়েছে।

গোপনীয়তা সংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মোবাইল ডিভাইসগুলোর গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হওয়ায় অনেকে ব্যবহারকারী নানা ঝামেলায় পড়েছেন। 

পিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৭২% আমেরিকান মনে করেন তারা ফোন ব্যবহার করার সময় যা করেন তা বিজ্ঞাপনদাতারা, প্রযুক্তি সংস্থা বা অন্যান্য কোম্পানি ট্র্যাক করছে। পিউ দ্বারা জরিপ করা প্রায় অর্ধেক মানুষ বলেছিলেন, তারা বিশ্বাস করেন তাদের বেশিরভাগ অনলাইন কার্যক্রম সরকার ট্র্যাক করে।

ডেটা গোপন রাখার জন্য নিরাপত্তা ক্যামেরা তৈরি করে আইওটেক্স। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা উন্নয়ক বিষয়ক বিভাগের প্রধান ল্যারি পাং বলেছেন, ‘আমরা সবাই তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘন, হ্যাক এবং অন্যান্য অনুপ্রবেশের আতঙ্কে ভুগছি। কর্পোরেশন এবং সরকার আমাদের গোপনীয়তা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রকৃতপক্ষে নিজেদের সুবিধার পেছনে ছোটে।’

গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে পড়ে এখন প্রযুক্তি সংস্থাগুলি মোবাইল ডিভাইস ক্রয়ে উৎসাহিত করতে নিজেদের পণ্যকে 'অতি-সুরক্ষিত' বলে দাবি করছে।

ফিনল্যান্ডের বিটিয়াম একটি ফোন বিক্রি করে যার মধ্যে একটি গোপনীয়তা মোড রয়েছে যা ডিভাইসের মাইক্রোফোন, ক্যামেরা এবং ব্লুটুথ নিষ্ক্রিয় করে রাখতে পারে।

বিটিয়ামের ভাইস প্রেসিডেন্ট টেরো সাভোলাইনেন সতর্ক করে বলেছেন, এত সব ব্যবস্থা থাকার পরও মোবাইল ডিভাইস সেই ব্যক্তির কাছেই নিরাপদ যিনি এটি সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে জানেন।

তিনি বলেন, ‘যদি আপনার কাছে একটি নিরাপদ ফোন থাকে, তার মানে এই নয় যে আপনি নিরাপদ রয়েছেন। ব্যবহারকারীকে নিরাপদে ডিভাইসটি কীভাবে ব্যবহার করতে হয় সে বিষয়ে জানতে হবে। ডিভাইসের অ্যাপ্লিকেশনগুলিকে অত্যধিক প্রবেশাধিকার দিলে তা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে বাড়াতে পারে। একটি অনিরাপদ গুগল অ্যাকাউন্ট সাইবার অপরাধীদের, অথবা অন্যদের আপনার গোপন তথ্যে প্রবেশাধিকারের সুযোগ দিতে পারে।’

সাইলেন্ট পকেট, একটি মার্কিন-ভিত্তিক কোম্পানি যা ওয়ালেট, ল্যাপটপ ব্যাগ এবং ট্রাভেল ব্যাগসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করে। এগুলো ওয়্যারলেস এবং রেডিও-ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি) সিগন্যাল ব্লক করতে পারে। এর প্রতিষ্ঠাতা অ্যারন জার জানান, তাদের পণ্য বেশ কয়েক বছর ধরেই বাজারে আছে। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর সময় বিভিন্ন দেশে কন্টাক্ট ট্রেসিং (করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থান শনাক্তে এ প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু হয়েছিল) শুরুর পর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়। এরপরই তাদের পণ্যের বিক্রি বেড়েছে। 

সাধারণত গুগলসহ বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে আমরা যা সার্চ করি তা স্টোর করে রাখা হয়। সম্প্রতি Xayn নামে একটি ব্রাউজার এসেছে বাজারে। এরইমধ্যে এটি ২ লাখ ১৫ হাজারের বেশি বার ডাউনলোড করা হয়েছে। এর কোম্পানি দাবি করেছে, তারা ব্যবহারকারীর পরিচয় ও তাদের তথ্য স্টোর করে রাখে না। Xayn ব্রাউজারটি যারা ডাউনলোড করেছে তাদের বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রের, এরপরেই আছে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, নেদারল্যান্ড ও রাশিয়া। 


বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর