মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

আবর্জনা ফেলার জায়গা নেই ঢাকায়!

জয়শ্রী ভাদুড়ী

আবর্জনা ফেলার জায়গা নেই ঢাকায়!

সাভারের আমিনবাজার ল্যান্ডফিল্ডে ময়লার স্তূপ ছবি : রোহেত রাজীব

রাজধানীর বর্জ্য ফেলার ল্যান্ডফিল ভরাট হয়ে যাওয়ায় ময়লা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। মাতুয়াইল ও আমিনবাজার ল্যান্ডফিল প্রায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। কিন্তু প্রকল্প অনুমোদনে সময়ক্ষেপণ করায় রাজধানীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলটি উত্তর সিটি করপোরেশনের আমিনবাজারের তুলায় দ্বিগুণ। এটি ১৯৯০ সালে ৫০ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয়। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে আরও ৫০ একর জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে ১০০ একরে সম্প্রসারণ করা হয়। এতে প্রতিদিন দুই হাজার ৭০০ থেকে তিন হাজার ৩০০ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়। ল্যান্ডফিল ২০১৬ সালের মধ্যে ভরাট হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সিটি করপোরেশন ভাগ হওয়ায় উত্তরের বর্জ্য এখন আর এখানে ফেলা হয় না। সে কারণে এখনো কিছু জায়গা ফাঁকা রয়েছে। তবে আগামী বছরের মধ্যে ভরাট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় নতুন করে বর্জ্য ডাম্পিংয়ের প্রকল্পের মাধ্যমে আরও ৮১ দশমিক  শূন্য ৯ একর জমি অধিগ্রহণ করছে ডিএসসিসি। কিন্তু নগরীর জনসংখ্যা ও আয়তন বৃদ্ধি পাওয়ায় এ জায়গাটুকু আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ভরাট হয়ে যাবে বলে মনে করেন কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, নতুন সম্প্রসারিত ৮১ একরের মধ্যে ৫০ একর ল্যান্ডফিল ও ৩১ একর জায়গা বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হবে। এতে বড় ধরনের একটি দগ্ধকরণ অংশ নির্মাণ করা হবে। এর আবার দুটি পৃথক অংশ থাকবে। একটিতে সাধারণ বর্জ্য এবং অন্যটিতে ইলেকট্রনিক বর্জ্য দগ্ধ করা হবে। ইলেকট্রনিক বর্জ্য পোড়ার পর যে নির্যাস থাকবে তা দিয়ে কয়লা জাতীয় দ্রব্য উৎপাদন করা হবে। সেটি ‘বর্জ্য থেকে উৎপাদিত জ্বালানি’ (রিফিউজড ডিরাইভ ফুয়েল) হিসেবে ব্যবহারের কথা রয়েছে। পাশাপাশি এ বর্জ্য দগ্ধকরণ প্রক্রিয়ায় যে তাপ বা শক্তি উৎপাদন হবে তা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ অংশ থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫-৬ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

এ বিদ্যুৎ উৎপাদনে মালয়েশিয়া, চীন, কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইইউসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র সংস্থাটির কাছে প্রস্তাবও পাঠিয়েছে। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৪৯ কোটি টাকা। তবে ভূমি অধিগ্রহণে সরকারি ব্যয় বাড়ায় প্রকল্প ব্যয় আরও বাড়তে পারে। গত বছরের ২৮ মার্চ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ অংশটি একনেকে অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের বাকি অংশ একনেক অনুমোদন দিলেই আন্তর্জাতিক পরামর্শক নিয়োগ দেবে ডিএসসিসি। পরে ডিজাইনের কাজ ও তা যাচাই-বাছাইয়ের পর এলজিইডি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে অন্যান্য কাজ শুরু হবে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, উত্তর সিটির ল্যান্ডফিলটি ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৫০ একর জমির ওপর নতুন করে নির্মাণ করা হয়। ২০০৭ সাল থেকে এতে বর্জ্য ফেলা শুরু হয়। জাপানি বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় নির্মিত এ প্লান্টের মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এখনো এতে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এতে প্রতিদিন তিন হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়। মেয়াদ শেষ হলেও নতুন করে এর আয়তন বাড়ানো হয়নি। এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘আমাদের ল্যান্ডফিলটি ভর্তি হয়ে গেছে। এর পাশে নতুন করে আরও ৮১ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে।’ এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ল্যান্ডফিলের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রকল্পটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে এসব বর্জ্য পরিশোধন করে জ্বালানিতে রূপান্তর করার। কারণ বর্জ্য পরিশোধনের কাজ শুরু না করলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কঠিন হয়ে পড়বে।

সর্বশেষ খবর