চক। অনেকে বলেন খড়িমাটি। ব্ল্যাকবোর্ডে লেখার কাজে ব্যবহার করা হয়। শিক্ষকরা হাতে ধরার সুবিধার জন্য একটু বাকি থাকতে সেটি ফেলে দেন। সেই ফেলে দেওয়া চক দিয়ে বাংলাদেশে প্রথম ক্ষুদ্র ভাস্কর্য তৈরি করেছেন কুমিল্লার শিক্ষক সামিউল আলম জাহেদ। জাহেদ চারুকলার শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন কুমিল্লা নগরীর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজে। সেই ভাস্কর্য দিয়ে তিনি অর্জন করেছেন জাতীয় পুরস্কারও। বাড়ি কুমিল্লা শহরতলির চাঁনপুরে।
জাহেদ জানান, ফেলে দেওয়া চকে তিনি সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান, ব্যাটম্যানদের প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলতেন। এরপর নতুন চকে শুরু করেন। বন্ধুদের অনেকে আড়ালে মুখ টিপে অবজ্ঞার হাসি হেসেছেন। চকে আবার ভাস্কর্য! সঙ্গে তিনি রং দিয়ে ছবি আঁকেন। গিটারে সুর তোলেন। তবে তাঁর মন পড়ে থাকে চকে। টেবিলের ড্রয়ারে রাখা চকের ভাস্কর্যগুলো নেড়েচেড়ে দেখেন। কিছু পোকা খাদ্য বানিয়েছে। কিছু ভেঙে গেছে। কিন্তু তাঁর মন ভাঙতে পারে না। ভাবতে থাকেন কীভাবে তাঁর কাজকে মজবুত করা যায়। চকে ভাস্কর্য ফুটিয়ে তোলার পর তিনি সেগুলো গামে ডুবিয়ে নেন। শুকালে সেগুলো শক্ত হয়ে যায়।
২০০০ সাল থেকে ২০১৭ সাল। নিজের বানানো ভাস্কর্যগুলো ড্রয়ারে ফেলে রেখেছিলেন জাহেদ। চারুকলার শিক্ষার্থী বন্ধু শাকের এসব ভাস্কর্য দেখে তাঁকে জানান এসব মিনিয়েচার ভাস্কর্য। এগুলো নিয়ে প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া সম্ভব। ১৭ বছর পর জাহেদ বুঝতে পারেন তিনি যা তৈরি করেছেন সেগুলো শিল্প। ৭২টি মিনিয়েচার ভাস্কর্য নিয়ে অংশ নেন জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনীতে, জিতে নেন পুরস্কার।
ঢাকা আর্ট কলেজ থেকে ২০১৯ সালে এমএফএ (প্রিন্টিং অ্যান্ড ড্রয়িং) পাস করেন জাহেদ। তিনি জানান, এই শিল্প নিয়ে যেতে চান বহুদূর। চকের গায়ে ফুটিয়ে তুলছেন বাঙালির আড়াই হাজার বছরের ইতিহাস। সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছেন। তাঁর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতীয় তলায় চকের যত কারবার। প্রথমে কম্পাসের কাঁটা আর সুই দিয়ে কাজ করলেও এখন বিশেষ ধরনের কাঁটা সংগ্রহ করেছেন। চকের মন্ড বানিয়ে বিভিন্ন চিত্রকর্ম ফুটিয়ে তোলেন। চকের মাথায় শেরে বাংলা, বঙ্গবন্ধু, মাদার তেরেসা, লিবার্টি স্ট্যাচু, রবীন্দ্র ও নজরুলসহ অনেক মনীষীর দেখা মেলে।
কুমিল্লা আর্ট স্কুলের প্রিন্সিপাল সুলতান শাহরিয়ার বলেন, জাহেদ সৃজনশীল ছেলে। তাঁর কাজে আমরা মুগ্ধ। তিনি আগামীতে আরও ভালো করবেন। কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নার্গিস আক্তার বলেন, জাহেদ আমাদের প্রতিষ্ঠানের চারুকলার শিক্ষক। তিনি আন্তরিকভাবে চারুকলার পাঠ দিচ্ছেন। তাঁর সংস্পর্শে আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা বিকাশ করতে পারবে।