আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখলেই সিলেট নগরবাসীকে চেপে ধরে জলজট আতঙ্ক। আধ ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় ভাসতে হয় নগরবাসীকে। পানি উঠে পড়ে সড়ক থেকে শুরু করে বাসাবাড়িতেও। বৃষ্টি থামলে সড়কের পানি নেমে গেলেও বাসাবাড়িতে জমে থাকে পানি। বৃষ্টি থামলে পাম্প দিয়ে সেচে বাসাবাড়ি জলমুক্ত করতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
সিলেট নগরীকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে ইতোমধ্যে ব্যয় করা হয়েছে হাজার কোটি টাকা। সড়ক সংস্কার, সড়কের পাশের ড্রেন গভীর ও উঁঁচু করা, ছড়া ও খাল উদ্ধার এবং খননসহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিসিক নগরবাসীকে জলাবদ্ধতার অভিশাপ মুক্তির যে স্বপ্ন দেখিয়েছিল বাস্তবে সেটির প্রতিফলন ঘটেনি। বরং উন্নয়নই হয়ে দাঁড়িয়েছে নগরবাসীর গলার কাঁটা। নগরবাসীর অভিযোগ, অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে জলাবদ্ধতা বেড়েছে। এক দশক আগেও নগরীর যেসব এলাকা জলাবদ্ধতামুক্ত ছিল এখন সেসব এলাকার মানুষকেও ভাসতে হয় অল্প বৃষ্টিতে। জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে নগরভবন কর্তৃপক্ষ একেক সময় একেক অজুহাত দাঁড় করালেও সেগুলো মেনে নিতে পারছেন না নগরবাসী। সর্বশেষ সুরমা নদী ভরাট হয়ে যাওয়াকে দায়ী করে সিসিক। কিন্তু গেল বছর সুরমা নদীর সিলেট নগরীর অংশ খনন করা হলেও তার কোনো সুফল মিলেনি।
এ বছর বর্ষার শুরুতেই পানিতে ভাসতে হয়েছে সিলেট নগরবাসীকে। আধা ঘণ্টা থেকে মাত্র এক ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরীর জেল রোড, তালতলা, কাজীরবাজার, কালীঘাট, খাসদবির, চৌকিদেখী, মিরাবাজার, শাহপরান, উপশহর, মাছিমপুর, সুবহানীঘাট, কদমতলী, বিমানবন্দর, বাগবাড়ী, ওসমানী মেডিকেল কলেজ রোড, রিকাবিবাজার, লামাবাজার, জামতলাসহ প্রায় অর্ধেক নগরীতে পানি উঠে যায়। সড়কে জমে হাঁটু থেকে কোমর অবধি পানি। সড়ক ও ড্রেন উপচে পানি ঢুকে বাসাবাড়ি, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি হাসপাতালেও।
বৃষ্টির পানি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঢুকে পড়ায় ব্যাহত হয় চিকিৎসাসেবা। ওসমানী মেডিকেল কলেজেও প্রবেশ করে পানি। এতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। অনেকের বাসাবাড়ি পানিতে সয়লাব হয়ে আসবাবপত্র পর্যন্ত নষ্ট হয়েছে।
সিলেট নগরীর ধোপাদিঘীর উত্তরপাড়ের সৈয়দ মাহফুজ আহমদ জানান, টানা বৃষ্টিতে তার বাসার সামনের সড়ক তলিয়ে যায়। তার বাসায়ও হাঁটুপানি জমে। পরে পাম্প লাগিয়ে পানি নিষ্কাশন করেছেন। তিনি বলেন, আগে এভাবে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো না। জলাবদ্ধতা নিরসনের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে সিসিক। কিন্তু উল্টো দুর্ভোগ বেড়েছে। এই ভোগান্তি বাড়ার কারণও কেউ জানে না।
সিলেট সিটির প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, নগরীর ছড়া ও খালের মুখে স্লুইস গেট নির্মাণ, শক্তিশালী পাম্প স্থাপন এবং শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়েই রয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে বাস্তবসম্মত প্রকল্প প্রণয়ন ও জরুরিভাবে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। এবার জলজটে সৃষ্ট সার্বিক সমস্যার সমাধানে সিলেট সিটির পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।