শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিমানবন্দর মোড়ে আন্ডারপাস হচ্ছে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

বিমানবন্দর মোড়ে আন্ডারপাস হচ্ছে

এক বছরে বিমানবন্দর সংলগ্ন গোলচত্বর এলাকায় প্রায় অর্ধশত দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন ২৫ জন। ডানে বিমানবন্দর পথচারী আন্ডারপাস প্রকল্পের নকশা ছবি : রোহেত রাজীব

রাজধানীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশন বিমানবন্দর মোড়ে নির্মাণ করা হচ্ছে আন্ডারপাস। বিমানবন্দরের তিনটি টার্মিনাল, বিআরটি (বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট), মেট্রোরেল স্টেশন এবং আশকোনা হাজী ক্যাম্পকে সংযুক্ত করে নির্মিত হতে যাচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পথচারী আন্ডারপাস প্রকল্প। এই টানেলের দৈর্ঘ্য হবে ১ কিলোমিটারের বেশি।

এর ফলে বিমানবন্দর মোড়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের পারাপারের ভোগান্তি দূর হবে। মানুষকে ফুটওভারব্রিজে তুলতে পুলিশের নিত্যদিনের ভোগান্তি কমবে। দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পাবে মানুষ। গত বুধবার গণভবনে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পথচারী আন্ডারপাস প্রকল্প বিষয়ক একটি উপস্থাপনা দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার জানান, প্রকল্পের উপস্থাপনা দেখে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, খুব সুন্দর হয়েছে। যা যা চাচ্ছিলাম তার সব কিছু এখানে আছে। এটা হলে একটা ল্যান্ডমার্ক জিনিস ঘটবে। ওই এলাকায় যানজট ও দুর্ঘটনাও কমে আসবে। মানুষ রেলে এসে নেমেই বিমানে উঠতে পারবে, পরিবেশও ভালো হবে। তিনি বলেন, মানুষ যাতে সহজে এবং সুন্দরভাবে সেবা পায় সেটি মাথায় রেখে সব থেকে ইউনিক, সুন্দর এবং টেকসই হতে হবে এই প্রকল্পটি। প্রায় ১১৮৩ দশমিক ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ৭০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এই আন্ডারপাস নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সেনাবাহিনীর সদর দফতর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। আন্ডারপাসটিতে এয়ারকন্ডিশনের (এসি) পাশাপাশি প্রাকৃতিক আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকবে। কোনো কারণে বিদ্যুৎ বিঘ্নিত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে প্রাকৃতিক অক্সিজেন প্রবাহের জন্য ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থাও থাকবে। এখানে আটটি প্রবেশ এবং বের হওয়ার পথ থাকবে। একই সঙ্গে এখানে থাকবে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও। প্রায় দেড় লাখ লিটার পানি রিজার্ভ রাখা হবে। আন্ডারপাস টানেলে ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতি তুলে ধরা হবে। পুলিশের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত এক বছরে বিমানবন্দর সংলগ্ন গোলচত্বর এলাকায় রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে প্রায় অর্ধশত দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন ২৫ জন। আহতের সংখ্যা শতাধিক। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে প্রাণে বাঁচলেও পঙ্গু হয়েছেন অনেকে। বিমানবন্দর থানার একজন কর্মকর্তা জানান, মহাসড়ক হওয়ায় এখানে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান চালকরা। ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও অনেক যাত্রী অনীহার কারণে কিংবা হাতে ভারী ব্যাগ থাকার কারণে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হন। ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন পথচারীরা। এ ছাড়া বিমানবন্দরে গ্রাম থেকে আসা সাধারণ মানুষ ট্রাফিক সিগন্যাল বুঝতে পারেন না। রাস্তায় স্পিড ব্রেকারও দুর্বল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি যত দ্রুত বাস্তবায়ন করা যাবে ততই মানুষের ভোগান্তি লাঘব হবে। কারণ, বিমানবন্দর ঘিরে মানুষের পদচারণ দিন দিন বেড়েই চলছে। বিমানবন্দর মোড়ে ইতোমধ্যেই দুটি পাঁচ ও তিন তারকা মানের হোটেল ও একটি বৃহদাকার শপিং কমপ্লেক্স তৈরি হয়েছে। এই তিনটি প্রতিষ্ঠান চালু হলে এখানকার জনসমাগম অনেক বেড়ে যাবে। এই বাড়তি মানুষের চাপ সামাল দেওয়ার জন্য জরুরি ভিত্তিতে আন্ডারপাস নির্মাণ করা প্রয়োজন। কারণ, শাহজালালের বিকল্প নতুন আরেকটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও কত বছরে নির্মাণ হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এদিকে পুরনো ফুট ওভারব্রিজ ভেঙে নতুন যেটি নির্মাণ করা হয়েছে তাতে মানুষের ভিড় সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। শাহজালালের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শেষ হলে এই বিমানবন্দরে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ অনেক বেড়ে যাবে। তখন আরও অনেক সুপরিসর বিমান নামবে শাহজালালে। ফলে এয়ার ট্রাফিক বেড়ে যাবে শাহজালাল বিমানবন্দরে। পাশাপাশি বাড়বে মানুষ ও যানবাহনের চাপ। এ জন্য শাহজালাল ঘিরে একটি ফ্লাইওভার তৈরি করাও জরুরি হয়ে পড়েছে।

শাহজালালের দ্বিতীয় ও নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালকে যুক্ত করে নতুন আরেকটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা প্রয়োজন। যেটির দুটি লুপ উত্তরা এবং দক্ষিণে র‌্যাডিসন হোটেলের দিকে সম্প্রসারিত হতে পারে। এর ফলে বিমানবন্দরগামী হাজার হাজার যানবাহন এয়ারপোর্ট রোডের যানবাহনের ভিড় এড়িয়ে সহজেই বিমানবন্দরে যেতে-আসতে পারবে। বিমান যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারবে। এই সড়কের যানজটে পড়ে প্রতিদিন যে অসংখ্য মানুষ ফ্লাইট মিস করে তা লাঘব হবে।

সর্বশেষ খবর