রাজনৈতিক ডামাডোলে নীরবে থাবা বসাচ্ছে ডেঙ্গু। প্রতিদিন রাজধানীসহ সারা দেশে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। চলতি মাসের ১৮ দিনে প্রাণ হারিয়েছেন ১৮ জন। সিটি করপোরেশনগুলোতে মেয়র কাউন্সিলররা আত্মগোপনে থাকায় জোর নেই মশক নিধন কার্যক্রমে। ডেঙ্গুর মৌসুম সঙ্গে বৃষ্টিতে বাড়ছে ঝুঁকি।
সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগেই ৩ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। আর ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম দেশে থাকলেও রয়েছেন আত্মগোপনে। এ বছরের শুরু থেকে রবিবার পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৭৪ জনের, যাদের মধ্যে ৫২ জনই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। প্রায় ৭০% মৃত্যুই ঘটেছে ঢাকায়। আর আক্রান্তের প্রায় ৪২% রোগীই ভর্তি হয়েছেন রাজধানীতে।
এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত সর্বোচ্চ সংখ্যায় উঠেছিল জুলাইয়ে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে গত মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৬৬৯ জন। কিন্তু আগস্ট মাসের ১৮ দিনেই এই সংখ্যা পেরিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৩১ জনে। আর এ ১৮ দিনে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের যা এ বছরের যে কোনো মাসের চেয়ে বেশি। এ বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৫৫১ জন।
আক্রান্ত বাড়তে থাকলেও মশক নিধনে নেই তেমন কোনো কার্যক্রম। রাজধানীর রামপুরা মধুবাগ এলাকার বাসিন্দা সীমা আফরোজ বলেন, গত এক মাসে আমাদের এলাকায় সকাল-সন্ধ্যায় কোনো মশার ওষুধ ছিটানো কিংবা ফগিং চোখে পড়েনি। বাসায় ছয় মাসের শিশু আছে। সারাক্ষণ মশার ভয়ে থাকতে হয়। এই কয়েক দিনে মশার উৎপাতও বেড়েছে কয়েক গুণ। উত্তর বাড্ডা এলাকার সরওয়ার টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মী মারুফ হোসেন বলেন, আন্দোলনের সময় থেকে গত এক মাসের বেশি এই এলাকায় মশা তাড়ানোর কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। আসরের আজানের পর থেকে বসে থাকতে পারি না। মশার কামড়ে হাত-পা, মুখ ফুলে যায়, চুলকায়। শরীর জ্বর জ্বর লাগলেই মনে হয় ডেঙ্গুর কবলে পরলাম নাকি। চট্টগ্রামেও মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ মানুষ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, এখন ডেঙ্গুজ্বরের মৌসুম চলছে। প্রায়ই থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযুক্ত জায়গা তৈরি হচ্ছে। এডিস মশা বাড়ছে, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তও রোগীও বাড়ছে। এখনই মশক নিধনে নজর না দিলে আগামী মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৫ জন, মারা গেছেন ১৪ জন। ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩৯ জন, মারা গেছেন তিনজন। মার্চে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১১ জন, মারা গেছেন পাঁচজন। এপ্রিলে আক্রান্ত হয়েছেন ৫০৪ জন, মারা গেছেন দুজন। মে মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৪৪ জন, মারা গেছেন ১২ জন। জুনে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৯৮ জন, মারা গেছেন আটজন। জুলাইতে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৬৬৯ জন, মারা গেছেন ১২ জন। আগস্টের গত ১৮ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ২৩১ জন, মারা গেছেন ১৮ জন। ঢাকাসহ সারা দেশেই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৮০ জন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের মধ্যে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৪২২ জন। বাকি আক্রান্তদের মধ্যে চট্টগ্রাম ও বরিশালে বেশি। এ বছর আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৬১ দশমিক ১ শতাংশ, নারী ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ। গত বছরের মতো এ বছরেও আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে নারীদের মৃত্যুহার বেশি। পুরুষ রোগীদের মৃত্যু হার ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ, নারী মৃত্যু হার ৫১ শতাংশ ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ।