রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বিশ্বকাপ উৎসবে রঙিন কাতার

রাশেদুর রহমান, কাতার থেকে

বিশ্বকাপ উৎসবে রঙিন কাতার

গাওয়া-খেজুরে বিশ্বকাপের মজলিস

কাতারের প্রায় সব বাড়িতেই মজলিস থাকে। বাঙালি সমাজে যাকে বৈঠকখানা বলে। বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলেই বিশাল এক স্থান থাকে। যেখানে আড্ডা জমায় কাতারের মানুষ। এই মজলিসে আরাম করে বসে তারা গাওয়া পান করে। গাওয়া মানে, আরবীয় কফি। সাধারণ কফির মতো এই কফি অতটা কড়া নয়। খেতে বেশ সুস্বাদু। একটু কষ কষ মনে হয়। এ কারণেই গাওয়া পান করার ফাঁকে ফাঁকে মিষ্টি খেজুরে কামড় বসায় কাতারিরা।

সাধারণত মজলিসে বসে গাওয়া পান ও খেজুর খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে তারা প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততা নিয়ে আলোচনা করে। তবে এবার রুটিন বদলে গেছে। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার বেশ আগে থেকেই বিশ্বকাপ নিয়ে জমে উঠেছে কাতারের মজলিশ। এখন সেই মজলিস বেশ সরগরম।  কাতার বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেও ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা দুর্দান্ত ফুটবল খেলছে। এশিয়ার তিনটি ও আফ্রিকার দুটি দেশ নকআউট-পর্ব নিশ্চিত করায় কাতারে বেশ উত্তেজনা বিরাজমান। মজলিসে মজলিসে আলোচনা- এবার এশিয়া আফ্রিকান টিম লম্বা রেসের ঘোড়া।

 

মাজবুজে রসনা বিলাস

মাজবুজ। কাতারের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবারের নাম। এই খাবার কেউ একা একা খেতে পারে না। নিদেনপক্ষে পাঁচজনের প্রয়োজন হয়। এর বেশিও হতে পারে। বড় এক থালার মধ্যে বিরিয়ানি, চিকেন বার্বিকিউ আর সাহরি মাছ থাকে। আর থাকে নানা প্রকারের বাদাম, সালাদ, লাল-হলুদ-সবুজ রঙের কাঁচা ক্যাপসিকাম। সঙ্গে যোগ হয় কয়েক ধরনের আচার। তাজা ফলও থাকে। এসব মিলেমিশে এক অদ্ভুত সুঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। মাজবুজ খাওয়ার নিয়ম হলো- প্লেটে কিছু ফেলে রাখা যাবে না। খেতে হবে পুরোটাই। কাতারের মানুষ নানা উপলক্ষে এই মাজবুজ খাবারের আয়োজন করে। বর্তমানে এর পরিমাণ বেড়ে গেছে অনেক। এর কারণ, বিশ্বকাপ। ফুটবল নিয়ে আলোচনা একটা বড় উপলক্ষ হয়ে উঠেছে কাতারে। এজন্য বন্ধুবান্ধবের মাজবুজ খাবার ডাক পড়ছে ঘন ঘন। মাজবুজ খেতে খেতে বিশ্বকাপের গল্পটা জমছে বেশ। এই খাবারের পর হাত-পা ছড়িয়ে তারা ওদ আতরের গন্ধ উপভোগ করে। এই আতরটা ওদ নামক গাছ থেকে হয়।  সেই গাছ ছোটো ছোটো টুকরো করে শুকিয়ে রাখে। সেসব সযত্নে রেখে দেয় কারুকাজ করা বাক্সে। বিশেষ পাত্রে আগুন ধরিয়ে দিলেই ওদের সুঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে।

 

সওক ওয়াকিফের ইরানি মার্কেটে সমর্থকদের ভিড়

কাতার শপিংয়ের জন্য খুব ভালো স্থান নয়। এখানে সবকিছুর দামই আকাশচুম্বী। এমনকি ইউরোপ-আমেরিকার লোকেরাও শপিং করতে গিয়ে হিসাবের খাতা মিলিয়ে নেন। তবে এর মধ্যেও কিছু স্থান আছে, যেখানে মোটামুটি শপিং করা যায়। যেমন- সওক ওয়াকিফের ইরানি মার্কেট। উনিশ শতকের শেষ দিকে এই মার্কেট গড়ে ওঠে। ১০০ বছরেরও বেশি পুরনো এই মার্কেটে পাওয়া যায় ইরানি কারুকাজের নানান জিনিস। আছে নকশি করা কার্পেট, তলোয়ার, ছুরি যেগুলোকে ওরা নেজাহ বলে থাকে। এ ছাড়াও নানান আকর্ষণীয় বস্তু। দামটাও মোটামুটি নাগালের মধ্যেই। অন্তত ইউরোপ-আমেরিকানদের কাছে। স্যুভেনির কিনতে এই মার্কেটেই তাই সবচেয়ে বেশি ভিড় জমাচ্ছেন বিশ্বকাপের দর্শকরা। নিজ দেশে কিছু একটা নিয়ে যেতে চান স্মৃতির স্মারক হিসেবে। কাতারে এখন লাখ লাখ ফুটবল দর্শকের ভিড়। তারা ফুটবল উন্মাদনায় মেতে ওঠেন সন্ধ্যায়-রাতে। দিনের বাকিটা সময় পড়ে থাকে। কাতারে যেসব দর্শনীয় স্থান আছে সেগুলো দুই-এক দিনেই দেখা শেষ। এখন কাজ হলো কেবল শপিং করা।  দুপুর গড়াতেই তাই সওক ওয়াকিফে পড়ে ফুটবল সমর্থকের ভিড়। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা কিংবা প্রিয় অন্য কোনো দলের জার্সি গায়ে তারা বিশ্বকাপের স্যুভেনির সংগ্রহ করতে যান এখানকার ইরানি মার্কেটে।

 

মেক্সিকোর সমর্থকরা

সর্বশেষ খবর