রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। অনলাইন আসক্তি, প্রেমে ঘটিত সমস্যা, অনিদ্রা ও ডিপ্রেশনে শিক্ষার্থীদের উন্নত ক্যারিয়ার গঠনে বাড়ছে ঝুঁকি। এতে আত্মহত্যার প্রবণতাও বাড়ছে। শিক্ষার্থীদের এই মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট কাউন্সিলিংয়ে শিক্ষার্থীদের এ ঝুঁকি নিরসন সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজির আহমেদ তুষার বলেন, কমবেশি সবাই মানসিক সমস্যায় ভোগেন। সেটার জন্য পরিবেশ অনেকাংশে দায়ী। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে ঝুঁকি কম থাকে। প্রফুল্লতার অভাবেই মানসিক চাপ বাড়ে। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিকমূলক কর্মকাণ্ড বেশি হওয়া প্রয়োজন। তবে দীর্ঘ সমস্যা হলে মানসিক চিকিৎসা নিলে সুন্দর জীবনযাপন সম্ভব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৩ বছরে সম্পর্কের টানাপোড়েন, মানসিক চাপ ও ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশাজনিত কারণে ডজনখানেক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তথ্যমতে, গত ৩ বছরে মানসিক সমস্যাজনিক কারণে চিকিৎসা নিতে এসেছে দেড় হাজারের অধিক শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ছেলে ৭৫৯ এবং মেয়ে ৭৫৯ জন। সমস্যাভেদে তাদের ব্যক্তিগত ও দলীয় প্রায় ২৭ 'শ সেশন নিয়ে কাউন্সিলিং সেবা দেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত মানসিক চাপে আত্মহত্যা প্রবণতা নিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৬৮ জন।
২০২৩-২৪ সেশনে অনিদ্রা, ড্রাগ ও অনলাইন আসক্তি এবং প্রেমঘটিত সমস্যা নিয়ে প্রায় ৬৫০ জন শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া বিবাহ পরবর্তী সমস্যা ৩৮, অ্যাংজাইটি সমস্যা প্রায় ১৭৫, বিভিন্ন ফোবিয়ায় ৬৩ সেক্সয়াল হেরেজমেন্ট সমস্যায় ২৮, মুড সুইম সমস্যায় ৪২, অতিরিক্ত রাগের সমস্যায় ১১১ এবং একাডেমিক চাপ ও এডজাস্টমেন্ট সমস্যায় ৭৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালক ড. কাজী ইমরুল কায়েশ বলেন, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তবে বিভিন্ন সংকট থাকলেও সমস্যা নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় মানিসক স্বাস্থ্যকেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরে এসে সুন্দর জীবনযাপন করছে। তবে দক্ষ জনবল, উপযোগী অবকাঠামো এবং পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পেলে এ কেন্দ্রের কাজের পরিধি বাড়বে। এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাটা খুবই উদ্বেগের। শিক্ষার্থীদের এই ঝুঁকি নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়ে সল্প পরিসরে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এটিকে আরও সম্প্রসারিত করে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ