বিদায়ের সুর বাজলেও বিদায় দিতে কষ্ট হচ্ছে তাদের। রবিবার (১৩ অক্টোবর) শুভ বিজয়া দশমী। এই দিনেই দেবীদুর্গা মর্ত্যলোকে ছেড়ে ফিরে যাবেন স্বামীগৃহ কৈলাশে। তাই মণ্ডপে মণ্ডপে আজ শুধুই বিষাদের ছায়া। উলুধ্বনি, শঙ্খ, ঘণ্টা আর ঢাকঢোলের বাজনায় থাকবে দেবী দুর্গার বিদায়ের সুর।
গত বুধবার কৈলাশ থেকে মর্ত্যলোকে আসে দেবীদুর্গা। মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয় শারদীয় দুর্গাপূজা। এরপর হাসি-আনন্দ আর পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে কেটে গেছে চার দিন। রবিবার সন্ধ্যায় বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বিদায় জানানো হয় দেবীদুর্গাকে। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়েই শেষ হয় বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা।
এদিন নওগাঁর ছোট যমুনা নদীতে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হয়েছে। এর আগে এদিন সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে আনুষ্ঠানিক পূজা অর্চনা এবং সিঁদুর খেলার মধ্যে দিয়ে ভক্তরা মা দূর্গাকে স্ব স্ব অধিষ্ঠান থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় দেন। এরপর বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে প্রতিমাগুলো নিজ নিজ মণ্ডপ থেকে নদীতে এনে নৌকায় তোলা হয়। পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিমাবাহী এবং বিভিন্ন সংগঠন, পারিবারিক এবং গোষ্ঠীভিত্তিক নৌকাগুলো নদীতে নৌকা বাইচের মত আনন্দ করে। উত্তরে বিজিবি ক্যাম্প এবং দক্ষিণে পালপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার জুড়ে চলতে থাকে নৌকা বাইচের মত নৌবহর। নৌকায় নৌকায় ঢাক ঢোল, কাঁসা আর মাইকে গানের শব্দে মুখরিত হয়ে উঠে নদীর দুই পাড়। নদীর উভয় পার্শ্বে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার নারী পুরুষ, শিশু কিশোর, যুবক যুবতিসহ সব বয়সের মানুষ এ নয়নাভিরাম দৃর্শ্য অবলোকন করেন। সন্ধ্যার দিকে নদীর বুকে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। বিসর্জনের আগে শোভাযাত্রা বের হয়। নাচে- গানে, হাসি মুখে দেবীকে বিদায় জানানো হয়।
এদিকে বিজয়া দশমী উপলক্ষে শহরের প্রতিটি সড়কে, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
অপরদিকে বিসর্জনের আগে প্রতিমাগুলো বরণ করে হিন্দু মহিলারা 'সিঁদুর খেলাতে' মেতে ওঠেন। স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন নারীরা নিজ কপালে সিঁদুর লাগান। সেই সিঁদুরের কিছু অংশ দিয়ে দেবীর চরণ স্পর্শ করে থাকেন। তারপর সবাই মিলে একে অপরকে সিঁদুর মাখেন। দুর্গা আগামী বছর আবার শাখা সিঁদুর সঙ্গে নিয়ে আসবেন।
নওগাঁ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ চন্দ্র সরকার বলেন, নওগাঁ জেলায় এবার ৭৫৮ টি মণ্ডপে পূজা উৎযাপন হয়েছে। পৌরসভায় ৫৮ এবং সদর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ৬৪টি। জেলার আত্রাই উপজেলায় ৪৬টি, রাণীনগরে ৩৪টি, ধামইরহাটে ৩০টি, পত্নীতলায় ৮২টি, মহাদেবপুরে ১৫০টি, বদলগাছীতে ১০২টি, নিয়ামতপুরে ৫৮টি, পোরশায় ১৩টি, সাপাহারে ১৮টি এবং মান্দায় ১০৩টি মণ্ডপে পূজা উৎযাপন হয়েছে। গতবার ছিল ৮২৭ টি। দেবী দুর্গার এবারে মর্ত্যলোকে আগমন হয়েছিল পালকিতে চড়ে এবং কৈলাশে গমন হয়েছে ঘোড়ায় চড়ে।
নওগাঁর পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন বলেন, আজ শুভ বিজয়া। এই উপলক্ষে শহরের ছোট যমুনা নদীতে নৌকা বহর উপলক্ষে নদীর দুই পাশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের পুলিশ সদস্যরা নৌকা নিয়ে টহল দেয়। এছাড়া আমরা সবসময় মনিটরিং করছি। পাশাপাশি আছে সেনাবাহীনিসহ আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত রয়েছে অন্যান্য সদস্যরা।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল জানান, আজকের এই বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠভাবে শেষ হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। এ বছর নওগাঁ জেলায় মোট ৭৫১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জেলার কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এই সার্বিক সহযোগিতার জন্য নওগাঁবাসী, পুলিশ সদস্য, প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকলকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/মুসা
