শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার বিভাগের বিভিন্ন স্তরে প্রশাসনিক শূন্যতায় মশক নিধন কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। ফলে মশার প্রজনন বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩ গুণ এবং মৃত্যুর বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। চলতি মাসের শেষ এবং সামনের মাসগুলোতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৬৫ জন। এদিন কারও মৃত্যু না হলেও আগের দিন মঙ্গলবার ৫ জনের মৃত্যু হয়। যা চলতি বছর একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। তার আগের দিন সোমবার আক্রান্ত হয় ৬১৫ জন, যা চলতি বছরে একদিনে সবচেয়ে বেশি। ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১০২ জন। মৃতদের মধ্যে শূন্য থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে রয়েছে ৪৫ শতাংশ। মাসের ১১ দিনে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ৪৪৩ হাজার জন। আগের মাস আগস্টে মৃত্যু হয় ২৭ জনের এবং আক্রান্ত হয় ৬ হাজার ৫২১ জন।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. হাসিবুল ইসলাম জানান, এ মাসের শুরু থেকে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। সামনের দিনগুলোতে রোগীর চাপ আরও বাড়তে পারে। কারণ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে প্রথমে অনেকেই বুঝতে পারে না। সেটি কম জ্বর কিংবা বেশি জ্বর হতে পারে। কিন্তু জ্বর হলে অবহেলা করা যাবে না। দেরি করে হাসপাতালে এলে চিকিৎসকদের জন্য সেবা দিতে কঠিন হয়ে পড়ে। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর প্রচণ্ড জ্বর বা হাড়ভাঙা জ্বরসহ পেটে তীব্র ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, প্রচণ্ড দুর্বলতা, বমি অথবা মাড়ি ও নাক থেকে রক্ত আসতে দেখলে তাৎক্ষণিক নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম ছারোয়ার জানান, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ভাঙা রাস্তা-ঘাট, ডোবা-নালা, লিফ এক্সইল, গাছের ছিদ্র প্রভৃতি প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্রগুলোর বিস্তৃতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। একইসঙ্গে এডিস মশার ট্রান্সমিশন হচ্ছে। সাধারণত বর্ষা-পরবর্তী সময়, অর্থাৎ আগস্ট থেকে অক্টোবর ডেঙ্গুর ‘পিক সিজন’ হয়ে থাকে। মানুষ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় অবহেলা করছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর থেকে সিটি করপোরেশন কার্যক্রম কমে গেছে। ফলে এডিস মশা বাড়ছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে কারিগরিভাবে সঠিক ও বাস্তবায়নযোগ্য একটি কর্মকৌশল দ্রুত প্রণয়ন করা জরুরি হয়ে পড়ছে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন