গত ৩০-৩৫ বছর ধরে আমি গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিষয়ের একজন ছাত্র। প্রথম পর্যায়ে স্রেফ একজন শিক্ষার্থী, এখনো পড়ছি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তা পড়াচ্ছি। যেহেতু আমি এ বিষয়ে দীর্ঘদিন শিক্ষকতায় নিয়োজিত সে কারণে বিভিন্ন সময় ঢাকা ছাড়াও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও কখনো কখনো এ বিষয়ে পরীক্ষা নিতে যাওয়ার সুযোগ ঘটে বৈকি! তা ছাড়া প্রতি বছর আমরা নতুন নতুন শিক্ষার্থী পাই; তাদের সঙ্গেও মিথস্ক্রিয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং তা যেন সব সময় নতুন অভিজ্ঞতায় সিক্ত। শুরুতেই আমরা শিক্ষার্থীদের ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করি সাংবাদিকতা কী, সংবাদ কী, সাংবাদিকের গুণাবলী কী এসব নানা বিষয়। কিন্তু অভিজ্ঞতা হচ্ছে আমাদের শিক্ষার্থী কিংবা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরীক্ষা গ্রহণকালে এসব বিষয়ে সব সময় সমজাতীয় (homogeneous) জবাব পাই না, তারা নানাভাবে তাদের নিজের বুঝমতো এসবের উত্তর দেয়। সাংবাদিকতা যারা চর্চা করেন তাদের মধ্যেও জানা এবং চর্চায় নানা ব্যবধান লক্ষ্য করি। বর্তমান সময় হরতাল-অবরোধের ওপর যেসব ঘটনা বাংলাদেশের গণমাধ্যমে খবর হিসেবে উঠে আসছে বা প্রাধান্য পাচ্ছে, আবার কখনো কখনো সংবাদকর্মীদের কেউ কেউ নিজেরা যেভাবে ঘটনা ম্যানুফ্যাকচার করছেন তা আদৌ সাংবাদিকতার নীতি-নিয়মের মধ্যে পড়ে কিনা সে ব্যাপারে সাম্প্রতিককালে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন।
সেসব প্রশ্ন সম্পর্কে পরিষ্কার হতে প্রথমে আলোচনা করা যাক সাংবাদিকতা কী? সাংবাদিকতা শব্দটির ইংরেজি প্রতিরূপ হচ্ছে Journalism : ইংরেজি এই শব্দটি Journal এবং ism এ দুটি শব্দের সমন্বিত রূপ। জার্নাল মানে কোনো কিছু প্রকাশ করা (Publishing something) এবং ইজম মানে অনুশীলন বা চর্চা (Practice)। সাংবাদিকতা হচ্ছে এমন একটি অনুশীলন বা চর্চা কিংবা ছাঁচ যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কোনো ঘটনা বা তথ্য উদ্ঘাটন করা হয় এবং সেসব তথ্য রিপোর্ট কিংবা সংবাদ আকারে জনসাধারণের কাছে বস্তুনিষ্ঠভাবে জ্ঞাপনের জন্য সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। স্যার এরিক হজিনসের মতে, সাংবাদিকতা হচ্ছে কোনো সংবাদ মাধ্যমের সাহায্যে সঠিক ও পরিজ্ঞাত তথ্যাদি ছড়িয়ে দেওয়া, যেখানে সত্য পরিবেশিত হয় এবং কখনো কখনো তাৎক্ষণিকভাবে না হলেও এসব তথ্যের যথার্থতা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সাংবাদিকতার দর্শন হলো জনগণকে সেসব তথ্য জানানো যে তথ্যে সত্য নিহিত রয়েছে। ডেভিড ওয়েন রাইট বলেছেন,‘Journalism is information. It is communication. It is the events of the day distilled into a few .. . .. .. to satisfy human curiosity of the world that is always eager to know what’s news’. সাংবাদিকতা হচ্ছে চলমান জীবনের প্রতিচ্ছবির জ্ঞাপন যা, কখনো কখনো মৃন্ময় তবে বস্তুনিষ্ঠ। সাংবাদিকতা কোনো propaganda মেশিনারি বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা কোনো কিছু প্রচার-প্রকাশের কৌশল নয়। সাংবাদিকতায় তথ্য, সত্য ও গণজ্ঞাপন এ বিষয়গুলোই হচ্ছে মুখ্য। এখন প্রশ্ন হচ্ছে পৃথিবীতে ঘটনা তো ঘটে অনেক কিন্তু সব ঘটনাই কি সংবাদ মাধ্যমে খবর বা তথ্য হয়ে উঠে আসে? নিশ্চয়ই না। কোনো ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ উপযোগী আইটেম অর্থাৎ খবর হতে হলে সে ঘটনার কিছু বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত উপাদান থাকতে হয়, সাংবাদিকতা পেশার সবাই সেগুলো জানেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, সাংবাদিকতা করতে গিয়ে একজন সাংবাদিকের মৌলিক কাজ হচ্ছে সংবাদ মূল রয়েছে এমন সব ঘটনা বা বিষয়ের তথ্য তুলে আনা এবং তা জ্ঞাপনের ব্যবস্থা করা। একজন সাংবাদিক কোনোভাবেই কোনো curranto maker বা চলতি ঘটনার সৃষ্টিকার নয়।
পাঠকের নিশ্চয়ই মনে আছে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতির প্রাক্কালে ৪ জানুয়ারি বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে যখন সাংবাদিকরা প্রশ্ন করছিলেন, এরপর কর্মসূচি কী? যতটুকু মনে পড়ে বেগম জিয়া তার মুখ দিয়ে তখন 'অবরোধ' শব্দটি বের করতে বেশ খানিকটা সময় নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ২-১ জন মিডিয়াকর্মী তখন জোরে জোরে উচ্চারণ করছিলেন- অবরোধ? অবরোধ? বেগম জিয়াও এক সময় বলে ফেললেন 'অবরোধ'। এরপর সংবাদকর্মীরা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন অবরোধ কতদিন? অনির্দিষ্টকাল? বেগম জিয়া তখন বলে দিলেন অনির্দিষ্টকাল। এখন তাহলে প্রশ্ন রাখতে ইচ্ছা হয়, এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা কি ঘটনার 'সৃষ্টিকার'-এর ভূমিকা পালন করেননি? আর ঘটনা 'সৃষ্টিকার'-এর এ কাজটি করে এসব গণমাধ্যমকর্মী কী সাংবাদিকতার বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেননি?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ের একজন শিক্ষক। ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ মিলনায়তনে (মরহুম) সাংবাদিক আবদুস সালাম ট্রাস্ট আয়োজিত একটি সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তার এক বক্তৃতায় বলছিলেন, সম্প্রতি তার বাংলোর সামনে কে বা কারা একাধিক বোমা বা ককটেল ফাটিয়ে গেছে। এগুলো ফাটানোর আগে সেখানে দু'একটি টেলিভিশন চ্যানেলের লোকজন বা সংবাদকর্মী টিভি ক্যামেরা নিয়ে ঘোরাঘুরি করছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর টিমের ২-১ জন সদস্য তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন কী ব্যাপার? বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা বা আশপাশে কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা? জবাবে সংবাদকর্মীরা বলেছিলেন, 'ঘটে নাই, তবে ঘটবে।' একপর্যায়ে দেখা গেল উপাচার্যের বাসার সামনে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটল- অতঃপর টিভি স্ক্রলে তা ওই দিন ফলাও করে দেখানো হলো। উপাচার্য মহোদয় এ সভায় তার বক্তব্যে প্রশ্ন তুলেছিলেন এভাবে, এ ঘটনা অর্থাৎ এভাবে ককটেল ফোটানো জ্ঞাপনের কাজটি সাংবাদিকতা কিনা? প্রিয় পাঠক, প্রশ্নটির জবাব দিতে নিচে দু'একটি ঘটনা ও অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করব।
১৯৮৪ সাল। আমি তখন ভারতের পুনা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করি। এ সময়ে দুনিয়াজুড়ে এবং তার ধারাবাহিকতায় গোটা ভারতেও বিভিন্ন সভা-সেমিনারে আলোচনা হচ্ছে- সাংবাদিকতায় সত্য বা বস্তুনিষ্ঠতা জরুরি? না, রেসপনসিবিলিটি বা দায়িত্বশীলতা কোনটা জরুরি? পুনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এমন একটি আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন সে সময়ের টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকার বর্ষীয়ান সাংবাদিক (সম্ভবত এডিটর) এম ভি কামাথ, ইলাস্ট্রেডেট উইকলির সম্পাদক অরুণ সুরে এবং পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। ওই অনুষ্ঠানে আলোচকরা কোনো ব্যাপারে সংবাদ পরিবেশনের সময় বস্তুনিষ্ঠতা এবং দায়িত্বশীলতা উভয়কে রক্ষা করে (এবং ব্যালেন্স করে) সত্যনিষ্ঠভাবে ঘটনা তুলে ধরে সাংবাদিকতা করার ওপর তাদের মতামত প্রদান করেছিলেন। অনুষ্ঠানে এম ভি কামাথ তার বক্তৃতায় তখন থেকে কিছুকাল আগে মহারাষ্ট্রের বিন্দ্রেওয়ালেতে সংঘটিত হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় সাংবাদিকতা করার একটি অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছিলেন। তিনি তার বয়ানে জানিয়েছিলেন, রায়ট বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হওয়ার পর দিন আমরা সংবাদ লিখনের রুল মেনে কবে, কোথায়, কখন, কিভাবে, কারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব তথ্য দিয়ে এই দাঙ্গার সচিত্র রিপোর্ট ছাপালাম। রিপোর্টে কজন মুসলমান ও কজন হিন্দু ওই দিনের ওই দাঙ্গায় নিহত হয়েছে তারও তথ্য এবং পরিসংখ্যান দিলাম। দেখা গেল পর দিন পত্রিকা পড়ে অনেক পাঠকের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল, যারা সংখ্যায় বেশি মারা গেছে সেই সম্প্রদায় ওইদিন আরও সংগঠিত হয়ে অন্য সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ চালিয়ে তাদের নিহতের সংখ্যা বাড়িয়ে তুলল। পরে আমরা আমাদের রিপোর্টে হিন্দু-মুসলমান নির্দিষ্ট করে নিহতের সংখ্যা উল্লেখ করা বাদ দিলাম; ছবি প্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করলাম, এমন কি একপর্যায়ে আমাদের কোন এলাকায় আজ রায়ট বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছে সেই এলাকার কথা উহ্য রেখে রিপোর্ট ছাপতে শুরু করলাম। কিন্তু তাতে তেমন কাজ হলো না। কারণ কোন এলাকায় কোন সম্প্রদায়ের মানুষের কনসেন্ট্রেশন তা রায়টকারীরা আগ থেকে জানত এবং সেভাবে তারা আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ চালাত। এভাবে এ ব্যাপারে খবর ছাপাতে গিয়ে আমরা একপর্যায়ে পরিপূর্ণ তথ্য দিয়ে রায়টের খবর ছাপানো প্রায় বন্ধ করে দেওয়ার মতো পর্যায়ে চলে গেলাম (অথচ এটিই ছিল ওই সময়ের সবচেয়ে সেনসেটিভ এবং মানুষের কাছে সবচেয়ে আগ্রহের ঘটনা)। কিন্তু এ ঘটনার পুরো চিত্র ছাপলে তা যেহেতু সমাজের অমঙ্গল আরও দাঙ্গা পরিস্থিতি বাড়িয়ে তুলতে লাগল সে কারণে অনেক তথ্য চেপে গিয়ে পাবলিক ইন্টারেস্ট থাকা সত্ত্বেও দাঙ্গার ব্যাপারে রেসপনসিবিলিটির কথা মাথায় রেখে আমাদের তখন সাংবাদিকতা করতে হয়েছে। এ কারণে সামায়িকভাবে পত্রিকাটির সার্কুলেশনেও তার প্রভাব পড়েছিল, পত্রিকার প্রচার সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছিল।
বাংলাদেশে গত দুই মাস ধরে যেসব কর্মকাণ্ড ঘটছে (যেমন : পেট্রলবোমা ছোড়া, মানুষ জ্বালিয়ে মারা, যেন কোনো বেআইনি সংগঠনের নেতার মতো গোপন জায়গায় বসে হরতাল ডাকা) এগুলো নিশ্চয়ই ঘটনা এবং এসব ঘটনা গণমাধ্যমে প্রচার-প্রকাশ হতেই পারে। কিন্তু পরিস্থিতি এখন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে এখানে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের রেসপনসিবিলিটির বিষয়টিও বিবেচনায় আনা এখন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। দু'একটি টিভি চ্যানেলের স্ক্রলে দেশজুড়ে যত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, খুন, গুমের ঘটনা ফলাও করে দেখানো হচ্ছে তাতে বোধ করি সন্ত্রাসীরা কেবল উৎসাহিত হচ্ছে। দেশে কী আর কোনো ঘটনা নেই? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পটকা ফুটলে গণমাধ্যমে তা বড় করে প্রচার করা হয়; অথচ ১৫ ফেব্রুয়ারি সম্পাদক আবদুস সালাম ট্রাস্টের উদ্যোগে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ওপর সেমিনার, ১৭ ফেব্রুয়ারি টিএসসি-তে বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আয়োজনে সেমিনার এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি উচ্চতর মানববিদ্যা গবেষণা কেন্দ্রে সেমিনারসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান-সেমিনার হয়ে গেল। এসব সেমিনারের বিষয়বস্তুও যেমন ছিল তাৎপর্যপূর্ণ, এখানে আলোচক এবং অংশগ্রহণকারীরাও ছিলেন যথেষ্ট ঋদ্ধ মানুষ। কিন্তু এসব ঘটনার প্রচার গণমাধ্যমে বিশেষ করে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে তেমন দেখিনি।
বর্তমানে বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকে হরতাল-অবরোধ (?) চলছে। বিএনপি কোনো কাগুজে কিংবা ভূঁইফোড় কিংবা গোপন রাজনৈতিক সংগঠন নয়। অথচ বিএনপির এক যুগ্ম-মহাসচিব গোপনে অবস্থান করে প্রেস রিলিজ পাঠিয়ে (এর আগে আরও একজন লাদেন স্টাইলে টেপ বার্তা পাঠাতেন) হরতালের পর হরতাল আহ্বান করে যাচ্ছেন। অনেকে বলতে শুনেছি এই প্রেস রিলিজে স্বাক্ষরটিও বার্তা প্রেরকের মূল স্বাক্ষর কিনা অথবা স্বাক্ষরটি অন্য কোনোভাবে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে কিনা সে ব্যাপারেও না কি অনেকের সন্দেহ রয়েছে। বিএনপির মতো এতবড় জনভিত্তি থাকা একটি দলের কাছ থেকে লাদেনীয় স্টাইলে আন্দোলন-সংগ্রামের ডাক কোনোভাবেই কাম্য নয়। এভাবে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির ডাক এখন অধিকাংশ মানুষের কাছে 'ধ্বংসের ডাক' বলে বিবেচিত হচ্ছে- এর ফলে প্রতিদিন খেটে খাওয়া নিরীহ এবং সাধারণ মানুষের মৃত্যু ঘটছে, তারা পুড়ে মারা যাচ্ছে, জীবনের মতো পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে (এ পর্যন্ত একজনও রাজনৈতিক কর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়নি বা তাদের কেউ আগুনে পুড়ে বার্ন ইউনিটে যায়নি)। এরপরও কী এসব কর্মসূচি মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার-প্রকাশ করা ঠিক হচ্ছে? তালেবান কিংবা কোনো আইএস নেতাদের মতো গোপন অবস্থানে থেকে যদি কেউ এমন কোনো কর্মসূচির ডাক দেয় এবং সেই কর্মসূচি যদি রক্ত ঝরায় কিংবা তাতে যদি মানুষের জীবননাশের কারণ ঘটে কিংবা তা যদি সমাজে ভিত্তি ও অস্থিরতার সৃষ্টি করে সেসব বিষয় কী গণমাধ্যমের প্রচার-প্রকাশ করা উচিত? আমাদের গণমাধ্যমকে কোনো কিছু প্রচার-প্রকাশের ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতার পাশাপাশি সত্যনিষ্ঠ এবং দায়িত্বশীলতার বিষয়টিও মাথায় রাখা জরুরি। একইভাবে সংবাদকর্মীদেরও মনে রাখতে হবে, খবর হচ্ছে 'রিপোর্টিং অব ইভেন্ট'। ইভেন্ট 'সৃষ্টি করে' বা 'সৃষ্টি করিয়ে' তা প্রচার-প্রকাশ বা জ্ঞাপন করা ন্যায়নিষ্ঠ সাংবাদিকতার মধ্যে পড়ে কিনা সে বিষয়টিও সংবাদকর্মীদের ভেবে দেখার সময় এসেছে।
লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা। বিভাগের অধ্যাপক।
ই-মেইল :[email protected]