৯ জুলাই, ২০১৬ ১৪:০০

দেশে দেশে খুশির ঈদ

অনলাইন ডেস্ক

দেশে দেশে খুশির ঈদ

এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ বয়ে আনে আনন্দ। এ কারণে ঈদ এলে বিশ্বের প্রায় সব দেশে, বিশেষ করে মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে নামে আনন্দের ঢল। ঘরে ঘরে, পথে পথে ছড়িয়ে পড়ে এই আনন্দ। বাহারি রঙের নতুন পোশাক পরিধানের পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে মিষ্টি খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। তবে বিভিন্ন দেশে ঈদ উদযাপনে রয়েছে নিজস্ব কিছু রীতি। সেই অনুযায়ী তারা অতিথিদের আদর-আপ্যায়ন ও অনুষ্ঠান করে থাকে।

সৌদি আরব

সৌদি আরবে জাঁকজমকভাবে ঈদ উদযাপিত হয়। সুন্দর করে সাজানো হয় ঘরবাড়ি। চলে ভূরিভোজ। তবে সৌদি আরবে সব অঞ্চলে ঈদের অনুষ্ঠান কিন্তু এক রকম নয়। অঞ্চল ভেদে ভিন্ন রকম হয়। তবে ঈদ উদযাপনে তাদের উদারতা ও আতিথেয়তা নজর কাড়ে। ঈদের নামাজ শেষে বাবার বাড়িতে জড়ো হয় সবাই। দুপুরে বিশেষ ভোজের আগে ছোটরা সালামির আশায় বড়দের সামনে গিয়ে ভিড় করে। এ সময় তাদের অর্থসহ বিভিন্ন জিনিস উপহার দেওয়া হয়।

এদিন, পুরুষরা ‘কান্দর’ নামে এক ধরনের সাদা পোশাক পরে। মাথায় দেয় গাহফিহ নামের এক ধরনের গোল টুপি। আর নারীরা ‘থাউব’ নামের বিশেষ এক ধরনের পোশাক পরে।

ঈদের দিন অনেক দোকানি ক্রেতাদের বিভিন্ন জিনিস উপহার দিয়ে থাকেন। এমনকি অনেক সময় অচেনা শিশুদের মধ্যেও খেলনা ও বিভিন্ন ধরনের উপহার বিতরণ করা হয়। সৌদি আরবের অনেক এলাকার অবস্থাপন্ন অনেকে প্রচুর খাবার কিনে অসহায় দরিদ্র মানুষের দুয়ারে দিয়ে আসেন। আবার কম্বল বিছিয়ে সবাইকে এক সঙ্গে খাবার খেতেও দেখা যায়। যেমন: দেশটির আল কাসিম প্রদেশে ঈদের দিন সকালে সবাই বাড়ির বাইরে বিশাল কম্বল বিছিয়ে দেয়। প্রতিটি বাড়িতে রান্না করা হয় প্রচুর খাবার। এরপর সবাই যার যার খাবার নিয়ে বাইরে জড়ো হয় এবং মিলেমিশে খায়।

আফগানিস্তান

এক মাস রোজা রাখার পর ঈদ এলেও এ দেশটিতে ঈদের আনন্দ শুরু হয় রমজানের শুরুতেই। কারণ এখানে রোজা মানেই একটা অন্যরকম ব্যাপার। এখানে থুত্তুড়ে বুড়ো, শিশু, গর্ভবতী মা আর রোগী ছাড়া সবাই রোজা রাখেন। দলবেঁধে পাড়া-মহল্লার মসজিদে নামাজ পড়েন। আমাদের দেশে রোজার ঈদের আনন্দ শেষ একদিনেই। কিন্তু এখানে আনন্দ চলে একটানা তিন দিন। খোলা ময়দান নয়, এখানে ঈদের নামাজ পড়ে মসজিদে। নামাজ শেষেই আনন্দ ভাগাভাগি ও কুশল জানার জন্য সবাই ছুটে যায় বন্ধু-আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। ঈদের নতুন পোশাকে বড়দের মোহ না থাকলেও ছোটদের বঞ্চিত করে না বড়রা। রঙ-বেরঙের নতুন পোশাক দেয় ছোটদের। সবার জন্য থাকে বিশেষ ধরনের খাবারের আয়োজন।

ইরাক

দরবেশ-আউলিয়ার দেশ ইরাকে ঈদের দিন সুগন্ধি সাবান মেখে গোসল করার পর সবাই শের-খুরমা দিয়ে মিষ্টি মুখ করে। তালিকায় বাদাম, খেজুর ও অন্যান্য খাবারও থাকে। এরপর পরিষ্কার নতুন কাপড় পরে ছোট-বড় সবাই ঈদের নামাজ পড়তে মসজিদে ছোটে। ছোটরা মেতে ওঠে নিত্যনতুন খেলায়। নামাজ শেষে সবাই যার যার বাড়িতে ফিরে আসে। একে একে আসতে থাকে আগেই দাওয়াত করা পারিবারিক বন্ধু এবং প্রতিবেশীরা। সবাই মিলে আনন্দ-আড্ডা আর খাওয়া-দাওয়া করে কাটিয়ে দেয় পুরো দিন।

ইরান
শিয়া-অধ্যুষিত ইরানিদের ঈদে দান করাটা তাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে প্রতিটি মুসলিম পরিবার গরিবদের মধ্যে খাবার বিলিয়ে থাকে। ঈদুল আজহায় কোরবানির মাংস গরিবদের মাঝে বিলি করার প্রচলন থাকলেও দেশটির অনেক ধনী ঈদুল ফিতরেও ত্যাগের মহিমায় গরু বা ভেড়ার মাংস গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে থাকেন।

মিসর

নীল নদ আর পিরামিডের দেশ মিসরে ঈদের উত্সব উদযাপিত হলেও দেশটিতে এক দিনের জন্য সরকারি ছুটি থাকে তিন দিন ধরে ঈদের উত্সব উদযাপিত হলেও দেশটিতে এক দিনের জন্য সরকারি ছুটি থাকে। বাংলাদেশের মতোই ঈদের খুশি ভাগ করে নিতে কেউ ছোটে গ্রামে কেউ বা শহরে প্রিয়জনদের কাছে। পাড়া-প্রতিবেশী সবাই একে অন্যের মধ্যে সুন্দর সব ঈদকার্ড দেওয়া-নেওয়া করে। শিশু ও নারীদের জন্য উপহার কেনার ধুম পড়ে যায়। ঈদের দিন বড়দের হাত ধরে ছোটরাও ঈদগাহে যায়। ওরা যাতে মজা করতে পারে, পছন্দমতো কিছু কিনতে পারে সেজন্য সবাই শিশুদের হাতে টাকা তুলে দেয়।

নামাজ শেষে অনেকেই ছোটদের নিয়ে শহরের বিনোদন পার্কে ঘুরতে যায়। এজন্য পার্কগুলোতেও থাকে নানারকম আয়োজন। গ্রামের শিশুরা ছুটে যায় গল্পদাদু ও ম্যাজিশিয়ানদের কাছে। শিশুদের আনন্দ দিতে তারাও গল্প আর ম্যাজিকের ডালা বিছিয়ে বসে থাকে। মেয়েরা একটুআধটু এ বাড়ি ও বাড়ি ঘুরে এসে ব্যস্ত হয়ে পড়ে নানারকম খাবার রান্নায়।

মালয়েশিয়া

এশিয়ার অন্যতম মুসলমান সংখ্যা গরিষ্ঠ ধনী দেশ মালয়েশিয়া। তাই তারা ঈদ উৎসব পালন করেন জমকালো সব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। এদিন পুরুষরা পরে সংকোক, কালো টুপি, শার্ট আর প্যান্ট। ছেলে-বুড়ো সবাই ঈদগাহে নামাজ পড়ে। নামাজ শেষে একজন আরেকজনের সঙ্গে কোলাকুলি করে, বুকের সঙ্গে বুক মেলায়। ঈদের দিন মালয় মুসলমানরা ঐতিহ্য অনুযায়ী ওপেন হাউস পালন করে। এদিন যে কেউ যে কারো বাড়িতে অতিথি হয়ে আসতে পারে এবং মুখরোচক খাবার রান্না হয় ঘরে ঘরে!

ইন্দোনেশিয়া
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলমান রয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়। কাজেই সেখানে ঈদের উত্সব হয় ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে। দেশটির মুসলমানেরা ঈদের দিন মালয়েশিয়ানদের মতো শার্ট-প্যান্ট ও কালো টুপি পরে থাকেন। নারীরা বাজু কুরুং ও বাজু কেবায়া (গলা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত এক ধরনের স্কার্ট) পরে থাকেন। ঈদের দিনের বিশেষ খাবার হিসেবে রান্না করা হয় কেতুপাত, দোদোল, লেমাং (বাঁশের ভেতরে বানানো চালের পিঠা)। ঈদের নামাজ শেষে মুসলমানেরা তাঁদের স্বজনদের কবর জিয়ারত করেন। দিনের বাকি সময় পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কাটান। শিশুদের দেওয়া হয় সালামি (দুইত রায়া)।

ফিলিস্তিন

ফিলিস্তিনে ঈদের বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে ভেড়ার মাংস। যাদের সামর্থ্য আছে তারা পুরো ভেড়া রোস্ট করে, আর অন্যরা মানসাফ নামে ভেড়ার মাংসের একটা ডিশ রান্না করে। ঈদের নামাজের আগে ফিতরা করা হয়। নামাজ শেষে বাসায় গিয়ে সবাই নতুন জামাকাপড় পরে ঘুরতে যায়, সেখানে তারা প্রত্যেক বাসাতেই কিছু মিষ্টি বিতরণ করে। আর প্রত্যেক বাড়িতে গিয়ে তাদের মিষ্টি খেতেই হবে। দুপুরে পরিবারের সবচেয়ে বড় সদস্যের বাসায় সবাই একত্রিত হয়ে দুপুরের খাবার খাওয়াটাও তাদের রেওয়াজ।

বিডি-প্রতিদিন/০৯ জুলাই, ২০১৬/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর