রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

পাঁচ তারকা মানের রেস্টুরেন্ট খুলেছেন জেনারেল মাসুদ

পাঁচ তারকা মানের রেস্টুরেন্ট খুলেছেন জেনারেল মাসুদ

ওয়ান-ইলেভেনের সেই আলোচিত সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এখন ঢাকায় রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় ব্যস্ত। পাঁচ মাস ধরে রাজধানীর তেজগাঁও লিঙ্ক রোডে পিকাসো নামের একটি পাঁচ তারকা মানের আন্তর্জাতিক চেইন রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করছেন তিনি। ২০ হাজার বর্গফুটের এ রেস্টুরেন্ট পরিচালনায় তার সঙ্গে আছে ওয়ার্কিং পার্টনার। থাকছেন ডিওএইচএসের বাসায়। সঙ্গে আছেন স্ত্রী ও এক কন্যা। মাঝেমধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে গুলশান-বনানী এলাকায় আড্ডা দিলেও নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়েই কাটছে পুরো সময়।
জানা যায়, ওয়ান-ইলেভেনের সময় অস্ট্রেলিয়ায় হাইকমিশনারের পদে নিয়োগ নিয়ে যাওয়ার পর ছয় বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেছেন। কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছে তার মেয়াদ। পরে গত বছরের জুনে ঢাকায় ফিরে আসেন। ঢাকায় ফিরে শুধু এক দিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে তার সব কাগজপত্র বুঝে নিয়ে আসেন। তখনই তিনি পুরোদমে শুরু করেন রেস্টুরেন্টের প্রস্তুতি। তার সঙ্গে ওয়ার্কিং পার্টনার হিসেবে যোগ দেন ফার্স্ট সিরামিকের একজন পরিচালক। তেজগাঁও বাণিজ্যিক এলাকার লিঙ্ক রোডের ১৯১/২ ভবনের ১২, ১৩ ও ১৪ তলায় তিনটি ফ্লোরে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর চালু করেন পিকাসো রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্টের স্লোগান- ‘খাবার এখানে শিল্প’। সমকালীন সময়ে সর্বোচ্চ মানের খাবার পরিবেশনের লক্ষ্য নিয়েই এ রেস্টুরেন্টের যাত্রা শুরু। ১৩ তলার ওপরে খোলা আকাশ সুইমিংপুল। খাবারের পাশাপাশি পাওয়া যাবে সুইমিংপুলের আবহ। সেই সঙ্গে পাশেই রাখা হয়েছে হেলিপ্যাড। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিষ্ঠান পাপারোমার তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে এ রেস্টুরেন্ট। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেল, একসঙ্গে ৫০০ ক্রেতার বসার জায়গা ও খাবার সরবরাহে সক্ষম পিকাসোয় চারপাশে স্বচ্ছ কাচের দেয়াল। একেক ফ্লোরে একের ধরনের আবহ। চারদিকে আলোছায়ার খেলা। দেখা যাচ্ছে ঢাকার বহুতল ভবনগুলোর ছাদ। ব্রিটিশ বনেদি সাজে তৈরি হয়েছে রেস্টুরেন্টের আসবাবপত্র। খাবারের সবই বিদেশি। শুধু আগে অর্ডার দিলে পাওয়া যাবে দেশি খাবার। লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী রেস্টুরেন্টের জন্য শেফ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন আবুধাবি, সৌদি আরব ও কুয়েতের পাঁচ তারকা হোটেলে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শেফকে। পিকাসোয় পাওয়া যাচ্ছে ইউরোপিয়ান, কন্টিনেন্টাল ও ইন্টারন্যাশনাল কুইসিং। পাশাপাশি আছে জাপানিজ সুশি, ফিশ অ্যান্ড স্টেক, কোরিয়ান, ইটালিয়ান, গ্রিক, স্প্যানিশ, মেক্সিকান, টার্কিশ, ইন্ডিয়ান ও থাই খাবার। দেশের প্রথম অত্যাধুনিক সিগার লাউঞ্জও আছে এ রেস্টুরেন্টে।
জানা গেল, অস্ট্রেলিয়া থেকে ফেরার পর কানাডার ওন্টারিওতে মেয়ে তাসনুভা জেরিনের কাছে কয়েক দিন কাটিয়েছেন জেনারেল মাসুদ। ছেলে আলবাব মাসুদ এখনো অস্ট্রেলিয়াতেই পড়াশোনা করছেন। অবশ্য আলবাব ঢাকায় একটি ক্লাবের সঙ্গে ক্রিকেটও খেলছেন। স্ত্রী জেসমিন মাসুদ ও ছোট মেয়ে তাসনিয়া মাসুদ তার সঙ্গে ডিওএইচএসের ফ্ল্যাটেই থাকছেন। জানা যায়, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি ওয়ান-ইলেভেনের পর গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় সাভারের নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ছিলেন তৎকালীন মেজর জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। সে বছরই লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেশের দুর্নীতি-অনিয়ম দূর করার অভিযানের জন্য গঠন করা ‘গুরুতর অপরাধ দমন সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি’র প্রধান সমন্বয়ক নিযুক্ত করা হয় জেনারেল মাসুদকে। প্রায় বছরখানেক অভিযান চালানো হয় মাসুদের নেতৃত্বে। পরে নানান ঘটনাপ্রবাহে তাকে সাইডলাইনে পাঠায় তখনকার সরকার। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পরিবারের সঙ্গেও তার আত্মীয়তার বন্ধন দুর্বল হয়ে যায়। তাই ভায়রা ভাই মেজর সাঈদ এস্কান্দরের মৃত্যুর সময়ও তিনি ঢাকায় আসেননি। ২০০৮ সালের ২ জুন তৎকালীন প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার পদ থেকে ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট পদে তাকে বদলি করা হয়। এর মাত্র ছয় দিন পর ৮ জুন তার চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত হয়। পরে ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর তাকে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার নিয়োগের আদেশ জারি করা হয়। নভেম্বরে তিনি ঢাকা ছেড়ে যান। এরপর ২০১১ সালের ২৯ জুন লে. জে. মাসুদ উদ্দিনের সেনাবাহিনীর চাকরির বয়সসীমা শেষ হওয়ার পর প্রথমে তিন মাস করে দুবার এবং পরে এক বছর করে আরও দুই দফায় চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয়।

সর্বশেষ খবর