১৫ বছর আগে বিডিআর বিদ্রোহে রাজধানীর পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকান্ডের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ সেলিম, শেখ ফজলে নূর তাপসসহ অনেকে সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে দাবি করেছেন নিহত মেজর জেনারেল শাকিলের ছেলে রাকিন আহমেদসহ নিহতদের স্বজনরা। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তারা।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার ৫০ দিনের মধ্যেই ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন বিডিআরের একটি গ্রুপ দ্বারা বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। বিদ্রোহী বিডিআর সেনারা পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তর দখল করে বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ সেনা কর্মকর্তা ও ১৭ জন বেসামরিককে হত্যা করেন। সরকারের সঙ্গে একাধিক আলাপ-আলোচনার পরে বিদ্রোহীরা অস্ত্র সমর্পণ করে এবং জিম্মিদের মুক্তি দেয়। অস্ত্র সমর্পণের মধ্য দিয়ে এ বিদ্রোহের অবসান ঘটে।
সংবাদ সম্মেলনে বিডিআর বিদ্রোহে হত্যাকান্ডে নিহত সব সেনা ও সিভিলিয়ানের পরিবার সাত দফা দাবি জানায়। সংবাদ সম্মেলনে বিডিআরের সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে একজন সিটিং প্রধানমন্ত্রী একটি বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে সেনা অফিসারদের হত্যা করেন। এজন্যই আমরা শহীদ দিবস দাবি করছি। ১৫ বছর যেভাবে তদন্ত হয়েছে, তা আমরা মানি না। কারণ প্রধান হত্যাকারী (যিনি নির্দেশ দিয়েছেন) তিনি তখন গণভবনে। এ ঘটনায় যারা নির্দোষ, এখনো জেল খাটছেন, তাদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাই।’ মেজর মোসাদ্দেকের মেয়ে নাজিয়া বলেন, ‘আমাদের কষ্টের কথা যদি বলি, একই পরিস্থিতিতে এখনো যাচ্ছি। কষ্ট দূর হয়ে যায়নি। এর পেছনে অনেক ঘটনা ছিল। আমরা তো আমাদের স্বজনদের হারিয়ে ফেলেছি। মানুষ জানুক এ হত্যাকান্ড কারা করেছে। কেন এত বছর পরও আমাদের মুভমেন্টে বাধা হয়।’ কর্নেল নাহিদের মেয়ে নাবিলা বলেন, ‘এটা আন্তর্জাতিক চক্রের কাজ। আন্তর্জাতিক শক্তির দ্বারাই কাজটি করা হয়েছে। আপনারা বের করবেন আসল কারণ। এটা বিদ্রোহ নয়, হত্যাকান্ড, পরিষ্কার হত্যাকান্ড। আমার বাবা মারা যাননি। হত্যার শিকার হয়েছেন। কিছু অপপ্রচারের জন্য আমরা হেনস্তা হয়েছি। এত দিন ভয়ে কথা বলিনি, আজ নির্ভয়ে কথা বলছি।’ নিহত সেনা সদস্যদের স্বজনরা আরও বলেন, ১৫ বছর ধরে আমাদের একটাই দাবি-বিচার চাই। একটা স্বচ্ছ বিচার হোক। আমরা এ বিষয়ে আর লুকোচুরি চাই না। চাপ দিয়ে আমাদের মুখ বন্ধ করা হয়েছিল। বাধার মধ্যে ১৬ বছর পার করেছি।
পরিবারগুলোর সাত দাবি : ১. সত্য উদ্ঘাটনের ক্ষেত্রে আগে যেসব তদন্ত হয়েছে, সেসবের প্রতিবেদন পাবলিক করতে হবে। ২. হাই কোর্ট ডিভিশনের রায় মোতাবেক তিন বিচারক যে ইনকোয়ারি কমিশনের কথা বলেছেন অবিলম্বে সেই ইনকোয়ারি কমিশন গঠন করতে হবে। এতে পর্দার আড়ালে রয়ে যাওয়া ষড়যন্ত্রকারীদের নাম বেরিয়ে আসবে। ৩. অফিসিয়াল গ্যাজেট করে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে এবং গ্যাজেটে নিহতদের সবাইকে শহীদের মর্যাদা দিতে হবে। ৪. ২৫ ফেব্রুয়ারি শোক দিবস ঘিরে দেশজুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখতে হবে। ৫. পিলখানা ট্র্যাজেডি স্কুলের পাঠ্যবইয়ের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ৬. এ ঘটনা ঘিরে যেসব সেনা কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন, তাদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে অথবা যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ৭. নির্দোষ কোনো বিডিআর জওয়ানকে যেন কোনোভাবেই সাজা না দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নিহত এক সেনা কর্মকর্তার ছেলে সাকিব ও মেজর জেনারেল শাকিলের ছেলে রাকিন ছাড়াও অন্য নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্বজনরা বক্তব্য দেন।