তৈরি পোশাকশিল্প বন্ধ থাকলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গার্মেন্টসের অর্ডার অন্য দেশে চলে যাবে। দেশের অর্থনীতি এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই এখন থেকে দেশের সব তৈরি পোশাকশিল্প কারখানা খোলা রাখতে শিল্পমালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা। এ সময় কোনো কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হলে সরকার বিশেষ ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান তারা।
গতকাল বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নুরুল কাদের অডিটরিয়ামে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তারা। আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর চলমান সংকট ও উত্তরণের পথ শীর্ষক এ সভায় বক্তব্য রাখেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, শ্রম সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খান, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) সভাপতি মো. হাতেম। এতে সভাপতিত্ব করেন বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম।
শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, আগামীকাল (আজ) দেশের সব তৈরি পোশাকশিল্প কারখানা খোলা থাকবে। কোনো কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হলে বিশেষ ব্যবস্থা নেবে সরকার। দেশের অর্থনীতিকে বিপদে ফেলতে কেউ যদি কারখানা বন্ধ রাখার অপচেষ্টা করেন, সেটাও মনে রাখা হবে। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক খাতে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে সরকার কমিটি করেছে। এ কমিটির মাধ্যমে সবার সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে।
শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ইতোমধ্যে শ্রমিকদের জন্য কোন প্রক্রিয়ায় রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা যায়, সে বিষয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার। এ ছাড়া শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের সময় যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, আগামীকাল থেকে কারখানা খোলা রাখতে হবে। কারখানার অর্ডার অন্য দেশে চলে গেলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ দায় সবার নিতে হবে।
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘যারা ভাঙচুর ও ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড করছেন তাদের প্রতি আহ্বান, এগুলো বন্ধ করুন। যদি বন্ধ না করেন আপনাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পোশাক খাতকে রক্ষা করা দেশপ্রেমের অংশ। দেশকে ভালোবাসলে এ খাতকে রক্ষা করতে হবে। আমরা চাই না আমাদের অর্ডার অন্য দেশে চলে যাক। সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খান বলেন, পোশাকশিল্পে চলমান এ অস্থিরতার জন্য মূলত তিনটি কারণ দায়ী। এর একটি হলো- বহিরাগতদের আক্রমণ। তবে এখন আর এটা হচ্ছে না। এ ছাড়া শ্রমিকদের যৌক্তিক ও অযৌক্তিক দাবির সমন্বয়ে অস্থিরতা ও ঝুট ব্যবসা কেন্দ্র করে সমস্যা। বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ায় আগামীকাল সব পোশাক কারখানা খোলা থাকবে। তবে কোনো কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হলে আগামী পরশু দিন থেকে সেই কারখানা শ্রম আইনের ১৩/১ ধারা (কাজ নেই, বেতন নেই) অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।
হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, কারখানায় ভাঙচুর হবে না, অগ্নিসংযোগ হবে না- এমন নিশ্চয়তা পেলে কারখানা চালানোর ঘোষণা দেন তিনি। বৈঠক শেষে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বলা হয়, আজ থেকে দেশের সব পোশাক কারখানা খোলা থাকবে। তবে কোনো কারখানায় বিশৃঙ্খলা হলে শুধু সেই কারখানার মালিক ইচ্ছা করলে আইন অনুযায়ী কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন। সভায় শ্রমিকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডা. শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু প্রমুখ।