ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেশের প্রতিটি মানুষের অনেক আশা-আকাক্সক্ষা রয়েছে। এই জনআকাক্সক্ষা পূরণে অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। গতকাল রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘দুঃসময়ের কণ্ঠস্বর : স্বপ্ন ও বাস্তবতা’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় সংলাপে অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং এলায়েন্স (ফেমা) সভাপতি মনিরা খান, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ, দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ, অধিকারের পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, এএফপির বাংলাদেশের ফ্যাক্ট-চেকবিষয়ক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ভিকটিম নেটওয়ার্কের সদস্য দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জাতীয় কমিটির সদস্য প্রীতম দাশ, জবান সম্পাদক রেজাউল করিম রনি, সাবেক সেনা কর্মকর্তা রেজাউল করিম, ইউপিডিএফ-এর সংগঠক মাইকেল চাকমা, বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আখতার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা ও লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক মামুন আবদুল্লাহ প্রমুখ।
মাসুদ কামাল বলেন, গত এক মাস ধরে গণমাধ্যম স্বপ্নাতীত স্বাধীনতা ভোগ করছে। এমনকি বিটিভির চরিত্রও পরিবর্তন হয়ে গেছে। বিটিভির টকশোতে গিয়ে ড. ইউনূসের সমালোচনা করেছি, সেটা বিটিভি প্রচারও করেছে। তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূসের টিম আমার পছন্দ হয়নি। কোটা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এটা কোটার সরকার হয়েছে। এনজিও কোটা, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ল ডিপার্টমেন্টের কোটা, চট্টগ্রাম জেলা কোটা ও গ্রামীণফোনের কোটা। কোটার টিম নিয়ে আমার কোনো আপত্তি ছিল না যদি তারা সামর্থ্যবান হতো। আমার কাছে এখন পর্যন্ত তাদেরকে সামর্থ্যবান মনে হয়নি। রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসে কিছু এজেন্ডা নিয়ে। ডক্টর ইউনূসের সরকার দেশের আপামর জনসাধারণের সরকার। এত মানুষের দাবি দাওয়া এবং চাহিদা পূরণের মতো ক্ষমতা এই সরকারের নেই।’
আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, রাজনীতি কলুষিত হয়ে গিয়েছিল বলে গত ৩০ বছরে ভালো মানুষরা রাজনীতিতে আসেনি। বঙ্গবন্ধু, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীরা রাজনীতিবিদ হিসেবে হিরো ছিলেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে রাজনীতিবিদরা আর হিরোর অবস্থানে নেই। বিগত বছরগুলোতে যারা রাজনীতি করতে এসেছেন তাদের বেশির ভাগই এসেছেন অল্প সময়ে অঢেল সম্পদের মালিক হতে। দেশের ভালোর জন্য রাজনীতি করবে ওই চিন্তা থেকে মানুষ অনেক দূরে সরে গেছে।
জোনায়েদ সাকি বলেন, স্বৈরাচারের দেশি-বিদেশি অপশক্তি এখনো সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা চাইছি একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। বিগত সরকারের স্বৈরাচারের অংশ যারা ছিলেন তাদেরকে অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে সেটি নিয়ে আমাদের চিন্তা ভাবনা করতে হবে। বিদ্যমান সরকারের বয়স মাত্র ৪০ দিন পেরিয়েছে। এখনই তাদেরকে নিয়ে মূল্যায়নের সময় আসেনি।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিরাট সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়েছে। এই আন্দোলনের ফসল যেন প্রত্যেকের ঘরে পৌঁছায় এই ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। সবাইকে ভূমিকা পালন করতে হবে, নইলে প্রত্যাশা অপূর্ণ রয়ে যাবে। থেমে থাকা যাবে না। আমাদের সামনে অপূর্ব সুযোগ পরিবর্তন আনার। অন্তর্ভুক্তির বদলে যদি বিভক্তির রাজনীতি করি, টেনে নামানোর রাজনীতি থেকে বের না হই, তবে সব সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যাবে।
ক্ষমতার ব্যবহার, অপব্যবহার উভয়ের পার্থক্য বুঝতে হবে। নৈতিকতাবোধের অভাব আমাদেরকে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে বাধ্য থাকবে।
মাইকেল চাকমা বলেন, ‘সেনাবাহিনীর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন সংলাপের। আশা করি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন।’
কল্পনা আখতার বলেন, শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকে আন্দোলন করে আসছে। শ্রমিকরা যখনই রাস্তায় নামে বলা হয়, এর পিছনে কারও ইন্ধন রয়েছে। কিন্তু প্রকৃত শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিক অসন্তোষের আসল কারণ খতিয়ে দেখা হয় না।