বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগামীতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা ও ব্যাপক কর্মসংস্থানের বিশেষ উদ্যোগ নেবে বিএনপি। দেশের প্রতিটি পরিবারকে খাদ্য নিরাপত্তা দিতে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ (তারেক রহমানের স্বপ্নের প্রকল্প)। তিনি বলেন, পরিবারের মা অথবা গৃহিণীর নামে এই কার্ড প্রদান করা হবে। রাষ্ট্রের পক্ষে সব নাগরিক পর্যায়ক্রমে কার্ডটি পাবেন। প্রাথমিকভাবে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিতরা এর আওতায় আসবেন।
‘স্বৈরাচারের পতন ও গণতন্ত্রের পথে যাত্রা এবং শহীদ পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা প্রদান’ উপলক্ষে গতকাল কিশোরগঞ্জে বিশাল ‘গণসমাবেশে’ লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। তারেক রহমান আরও বলেন, ‘ফ্যামিলি কার্ড’ সবাই পাবেন বিধায় কোনো প্রকার দলীয় বা স্থানীয় প্রভাবে কাউকে বঞ্চিত করার সুযোগ থাকবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর একটি অংশ এই কার্ডের মাধ্যমে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য ‘ফ্যামিলি কার্ড’ প্রবর্তন হলেও পরবর্তীতে সবাই এর প্রাপক হবেন। একটি পরিবারের সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ চারজন বিবেচনায় এই কার্ডটি বিতরণ করা হবে।
জেলার পুরাতন স্টেডিয়ামে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি আয়োজিত এই গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও দলের ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ (ভিপি) সোহেলের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন সমাবেশের বিশেষ অতিথি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি রেজাউল করিম টিপু প্রমুখ। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জের শহীদ পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে শুরু হলেও দুপুর ১২টার আগে থেকেই মিছিল নিয়ে আসতে থাকেন দলটির নেতা-কর্মীরা। কিশোরগঞ্জ সদর, অষ্টগ্রাম, ইটনা, কটিয়াদী, ভৈরব, করিমগঞ্জ, বাজিতপুর, তাড়াইল, হোসেনপুর, পাকুন্দিয়া, কুলিয়ারচর, মিঠামইন, নিকলী এলাকার নেতা-কর্মীরা হাতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা, শহীদ জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতিকৃতি সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে গণসমাবেশে যোগ দেন। এ সময়ে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরাতন স্টেডিয়াম এলাকা। তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশ থেকে গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে কিন্তু তাদের প্রেতাত্মারা এখনো রয়ে গেছে। বারবার বলেছি, এখনো বলছি, আজকে লাখো জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে যে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এই সরকারের কাছে মানুষের রাজনৈতিক অধিকার যাতে সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় তার জন্য তারা (সরকার) পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। জনগণের এই অধিকার প্রতিষ্ঠার কাজটি করতে গিয়ে সতর্কভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে, এমন কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব না হয়, যাতে করে ওই স্বৈরাচার আবারও কোনো ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পায়। কারণ তাদের প্রেতাত্মারা বসে নেই। এখনো ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। তাই গণতন্ত্রের পক্ষের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল এবং গণতন্ত্রের পক্ষের প্রত্যেকটি মানুষকে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। একইভাবে এই অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা দিতে হবে। তিনি বলেন, স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। মানুষ মুক্ত হয়েছে। কিন্তু স্বৈরাচারের পতন হলেও সব বিপদ এখনো কেটে যায়নি। সামনে আরও বিপদ রয়ে গেছে। এর পাশাপাশি আমাদের দেশ গড়ার জন্য কাজ করে যেতে হবে। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে তুলতে হবে। দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে হবে। বিএনপি ইনশাআল্লাহ আগামী দিনে জনগণের সমর্থন দিয়ে সরকার গঠন করতে পারলে জনগণের সেই প্রত্যাশিত ও কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আজকে দেশের সর্বস্তরের মানুষই বিশ্বাস করেন যে, এটি একটি বিপুল সম্ভাবনাময় দেশ। তিনি বলেন, একটা দেশের মানুষের শুধু রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হলেই সবকিছু হয়ে যায় না। এর সঙ্গে আসতে হবে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। আর সে জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা আর সঠিক নেতৃত্ব। আমরা যদি সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে পারি, যারা জাতিকে সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে কাঙ্ক্ষিত সফলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
তারেক রহমান কিশোরগঞ্জের সম্ভাবনাময় পণ্য হিসেবে বোরো ধান উৎপাদন, হাওরের মাছের ভা ারের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং অষ্টগ্রামের বিখ্যাত পনিরের কথা উল্লেখ করে বলেন, এগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে এসব পণ্যের নাম ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জে বোরো মৌসুমে যে ধান উৎপাদন হয়, তা সারা বাংলাদেশের মোট উৎপাদনের ১৬ শতাংশ। তাছাড়া ইটনা, মিটামইন ও অষ্টগ্রামসহ হাওর অঞ্চলে মাছের যে বিশাল ভা ার রয়েছে সেটিকে আরও সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি উৎপাদন ও রপ্তানি প্রক্রিয়ায় অসংখ্য যুবকের কর্মসংস্থান সম্ভব। এটাকে তিনি রপ্তানিপণ্য গার্মেন্টস পোশাকের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগের মাধ্যমে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের আরও একটি পরিচিতি অর্জন সম্ভব। আর এসব পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন জনগণের কাছে একটি জবাবদিহিমূলক সরকার। এই জবাবদিহিমূলক সরকার গঠন করতে হলে দরকার মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা। আজ যে লাখো মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে এই স্বৈরাচারমুক্ত স্বাধীন পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যেদিন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে, সেদিনই এই ত্যাগের মূল্যায়ন হবে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি হলো জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। জনগণের অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার নাম।