সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রখ্যাত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী আর নেই। শুক্রবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার দিকে রাজধানীর উত্তরা মহিলা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। আজ মুন্সীগঞ্জে তাঁকে দাফন করা হবে। তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ। জানা যায়, ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে গত বুধবার বদরুদ্দোজা চৌধুরী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। গতকাল সকাল ৮টায় মেডিকেল প্রাঙ্গণে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বাদ জোহর বারিধারায় ৮ নম্বর সড়কে বায়তুল আতিক জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় জানাজা। আজ সকাল ১০টায় মুন্সীগঞ্জ স্টেডিয়ামে তৃতীয় জানাজা এবং বাদ জোহর গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের মজিদপুর দয়হাটায় চতুর্থ জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব ছিলেন। ১৯৭৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অনুরোধে বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৭৯ সালে বদরুদ্দোজা চৌধুরী তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া সরকারের সময়েই মন্ত্রী ছিলেন। পররাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপালন করেন। বিটিভিতে তাঁর ‘আপনার ডাক্তার’ অনুষ্ঠান খুবই জনপ্রিয় ছিল।
মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে বদরুদ্দোজা চৌধুরী পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দুবার সংসদের উপনেতা এবং একবার বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর পর ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশের ১৫তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। রাজনৈতিক কারণে ২০০২ সালের ২১ জুন তিনি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে ২০০৪ সালের ৮ মে বদরুদ্দোজা চৌধুরী ‘বিকল্পধারা বাংলাদেশ’ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দলটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর ছেলে মাহী বি চৌধুরী ছিলেন দলের মুখপাত্র ও প্রেসিডিয়াম সদস্য।
বদরুদ্দোজা চৌধুরী ১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর কুমিল্লা শহরের ‘মুন্সেফ বাড়ি’ নামের নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরী কৃষক প্রজা পার্টির সহসভাপতি, যুক্তফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর নাম হাসিনা ওয়ার্দা চৌধুরী। তিনি দুই মেয়ে এবং এক ছেলের জনক। বড় মেয়ে মুনা চৌধুরী আইনজীবী এবং ছোট মেয়ে শায়লা চৌধুরী চিকিৎসক।