যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার হার্ডলাইনে যাবে। সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। গতকাল সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় আসিফ মাহমুদ এ কথা বলেন। বিএসআরএফ সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাবের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভা সঞ্চালনা করেন বিএসআরএফের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক। সভায় আসিফ মাহমুদ বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীর বাইরে অনেক উদ্যোক্তা আছেন, যারা কৃষকের কাছ থেকে পণ্য কিনে সরাসরি ঢাকায় বিক্রি করবেন, সরকার তাদের উৎসাহিত করবে। টিসিবির ডিলারশিপ যারা পেয়েছিলেন, তারা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের। এ কারণে টিসিবির কার্যক্রম স্থবির।
টিসিবিকে আবার সক্রিয় করার চেষ্টা চলছে। মতবিনিময় সভার শুরুতে নিজের মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন উপদেষ্টা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ওই সময় টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আন্দোলনের সঠিক চিত্র তুলে ধরেনি। পত্রিকাগুলো সহায়তা করেছে। গণমাধ্যম সংস্কার জরুরি বলে জানান তিনি। এ সময় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার কী করছে- সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, বন্যার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। জোগান ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য নেই। বাজারে সিন্ডিকেট আছে। এই সিন্ডিকেট ভাঙার কাজ চলছে। বিগত সরকার ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে দুর্বল করেছে। তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, এটা কার্যকর নয়। আগে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে জেল দেওয়ার একটা সক্ষমতা ছিল। ব্যাপারগুলো এমনভাবে নষ্ট করা হয়েছে, একটা আইন সংশোধন করতে সময় লাগবে। এখন আমরা ভাবছি যে আমাদের হার্ডলাইনে যেতে হবে, না হলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা টাফ হবে। সরকারের কাছে তথ্য আছে, অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে সরকার তাদের গ্রেপ্তার করবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, আগের সিন্ডিকেট আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ করত। সিন্ডিকেটের ভিতর ব্যবসায়ীরা বসে ছিলেন। তারা এখনো রয়ে গেছেন। ব্যবসায়িক স্বার্থ বাঁচাতে কেউ কেউ রাজনীতিবিদদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে সিন্ডিকেট টিকিয়ে রেখেছেন। চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবে সমস্যা হচ্ছে, একজন চাঁদাবাজকে গ্রেপ্তার করলে সে জায়গায় আরেকজন চলে আসেন। গোড়াগুলো কোথায় সেটা, আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। এ কাজে রাজনৈতিক দলগুলোকে সহায়তা করতে হবে। আসিফ মাহমুদ বলেন, এখন আমরা চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে একটা অলআউট অ্যাকশনে যাব, একই সঙ্গে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধেও। উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় আছে। অর্থনীতি তো সব কিছুর সঙ্গে জড়িত। প্রত্যেকটি জায়গায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। অর্থ উপদেষ্টা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। আমার মনে হয় ১৬ বছরে যা নষ্ট করা হয়েছে তা ঠিক করতে ১০ বছর লাগবে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, নামেই শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। কিন্তু এ মন্ত্রণালয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কোনো কাজ হয়নি, কোনো প্রকল্প হয়নি। এ জন্য কর্মসংস্থান অধিদপ্তর করার কথা ভাবছে সরকার। বিশ্বের অন্যান্য দেশ কোন পথে হাঁটছে, তা পর্যালোচনা করে সে অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, মামলা হলেও ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের দেশে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনি কোনো বাধা নেই। তিনি দেশে এলে গ্রেপ্তার হবেন কি না- জানতে চাইলে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, আইনি বিষয় তো আইনি বিষয়, এটা নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। একটা হচ্ছে সাবজুডিস (বিচারাধীন), দ্বিতীয় হচ্ছে আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কনসার্ন (জড়িত) আছে, উত্তরটা দিতে পারবে। আমাদের জায়গা থেকে প্রত্যেক খেলোয়াড়কে আমাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। এটা আমাদের দায়িত্ব এবং সেটা আমরা পালন করব। যেহেতু আমার মন্ত্রণালয় কনসার্ন, আমি জানার চেষ্টা করেছি, আইনি বাধা আছে কি না, দেশে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে। আমি জানতে পেরেছি, এখন পর্যন্ত কোনো বাধা নেই। আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, আদালত যদি কোনো আদেশ দেন, সেটা আদালতের বিষয়। এটা তো আর তাঁর বিষয় না। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার আইনি বাধা নেই।