শনিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

শুষ্ক ত্বকের যত্ন ও করণীয়

ডা. এমআর করিম রেজা

শুষ্ক ত্বকের যত্ন ও করণীয়

লক্ষ্য করেছেন নিশ্চয়ই, শীতের প্রবাহ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আপনার ত্বক শুষ্ক হতে শুরু করেছে। শীতের সময় বায়ুতে জলীয় বাষ্প কমে যাওয়ার কারণে ত্বক থেকে পানি শুষে নেয় এবং এর প্রভাবে ত্বক রুক্ষ হয়ে যায়। আবহাওয়া পরিবর্তন ছাড়াও আরও নানা কারণে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যেতে পারে। চিকিৎসার পরিভাষায় এটিকে 'জেরসিস' বলা হয়ে থাকে। এটি এমন একটি সমস্যা যাতে কমবেশি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব বয়সীরাই আক্রান্ত হতে পারেন। পা এবং পেটের উভয়দিক আক্রান্ত হয় বেশি। তবে অন্য স্থানেও এ পরিবর্তন হতে পারে।

কিভাবে হয় : ত্বকের 'ইপিডার্মিস'-এ 'স্ট্যাটম কর্নিয়াম' নামে একটি স্তর থাকে। এটি অনেকটা পলিথিনের আবরণের মতো আমাদের শরীরকে আবৃত রাখে। এই স্তরই পানি ধারণ করে এবং ত্বককে মসৃণ রাখতে সাহায্য করার পাশাপাশি, শরীরে ক্ষতিকর পদার্থ প্রবেশে বাধার সৃষ্টি করে। কোনো কারণে এই স্তর ক্ষতিগ্রস্ত অথবা পাতলা হয়ে গেলে পানি ধারণক্ষমতা কমে যায় এবং সমস্যাটি তৈরি হয়। তাছাড়া ত্বকে এক ধরনের গ্রন্থি থাকে, যা তেল নিঃসরণ করে ত্বককে নরম ও রাখে।

নানা কারণে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হতে পারে। যেমন :

আবহাওয়া : ঋতু পরিবর্তনে বাতাসে জলীয়বাষ্প কমে গেলে, ত্বক থেকে পানি এবং তেল শুষে নেয়।এ কারণে ত্বক রুক্ষ ভাব ধারণ করে। শীতকালে শুষ্ক ত্বকের প্রবণতা এ কারণেই হয়ে থাকে। তাছাড়া ব্যবহৃত রুম হিটার, এয়ারকন্ডিশনারের কারণেও রুমের ভিতর জলীয়বাষ্প কমে গিয়ে ত্বক শুষ্ক হতে পারে।

বয়স : সাধারণত পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সীদের ত্বকের ইপিডার্মিস পাতলা হতে শুরু করে এবং ত্বকের পানি ধারণ এবং তেল নিঃসরণ ক্ষমতা কমে যায়। এর ফলে ত্বকও শুষ্ক এবং রুক্ষ হতে শুরু করে। যাদের বয়স ষাটোর্ধ্ব তারাই বেশি আক্রান্ত হন। মহিলাদের মাসিক বন্ধ হওয়ার পর এ সমস্যা প্রকাশ পেতে থাকে।

সূর্যালোক : সরাসরি সূর্যালোকের কারণে যে কোনো ঋতুতেই ত্বক শুষ্ক হতে পারে। কারণ সূর্যের উত্তাপে ত্বকের পানি ও নিঃসরিত তেল শুকিয়ে ত্বক শুষ্ক হয়।

সাবান ও ডিটারজেন্ট : সাবান, ক্লিনজার ও ডিটারজেন্টে ক্ষার থাকে। ত্বকের ময়লা পরিষ্কার করার সময় ক্ষার ত্বকের পানি ও তেল শুষে নেয়। ফলে ত্বক শুকিয়ে যায়। সাধারণত এগুলো যতবেশি ক্ষারীয় ততবেশি তেল ও পানি শুষে নেয়।

রোগজনিত কারণ : শরীরে কিছু রোগে ত্বকের পানি ধারণ এবং তেল নিঃসরণ ক্ষমতা কমে যায়। ত্বক রুক্ষ রূপ নেয়। ত্বকের রোগ যেমন এটপিক ডার্মাটাইসিস, সোরাইসিস, ইকথায়োসিস ইত্যাদিতে ত্বক রুক্ষ হয়।

ওষুধ : কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ত্বক শুষ্ক হতে পারে।

কিভাবে মুক্ত থাকবেন : কুসুম কুসুম গরম পানিতে স্বল্প সময়ে গোসল শেষ করুন। * গোসলের সময় কোমলভাবে সারা শরীর পানিতে ধুয়ে ফেলুন, কখনই শরীর ঘষবেন না। * যতটা সম্ভব কম ক্ষারীয় সাবান ও ক্লিনজার ব্যবহার করুন, আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী এগুলো নির্বাচন করুন। * গোসলের পর শরীরে ময়েশ্চারাইজার যেমন পেট্রোলিয়াম জেলি, গি্লসারিন ইত্যাদি ব্যবহার করুন। * সাবান, ক্লিনজার ও ময়েশ্চারাইজার নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। তারপরও যদি শুষ্ক ও রুক্ষতা থেকে পরিত্রাণ না পান, তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখক : সি. কনসালটেন্ট, চর্ম, এলার্জি ও কসমেটিক-জনিত রোগ, এশিয়ান জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা।

 

 

সর্বশেষ খবর