একটা সময় বাংলাদেশ থেকে অনেকেই দুবাই ভ্রমণ করতেন। ভ্রমণে গিয়ে ব্যাণিজিক এ শহরটি ভাল লাগলে চাকরি নিয়ে সেখানেই থেকে যেতেন অনেকে। এমন তালিকাও বেশ লম্বা। তেমনি ভাবে ২০০৬ সালে ভ্রমণ ভিসা নিয়ে প্রথম দুবাইয়ে পা রাখেন আফতাব মনির। অল্প সময়ে ভাল লেগে যায় তার দুবাই শহর। সিদ্ধান্ত নেন দুবাইতে কাজ করার। একটি জার্মান ট্যুরিজম কোম্পানিতে আইটি সেকশনের নিয়োগ পত্রও পান তিনি। নিয়োগ পত্র হাতে পেয়ে চলে যান দেশে। ছয় মাস পর দুবাই ফিরে যোগ দেন কর্মস্থলে। চাকরি করেন ১৪ মাস। এরপর নিজেই খুলেন ইভেন্টেলর নামে একটি এলএলসি লাইসেন্স।
ব্যবসায়িক ক্যারিয়ারের শুরুর কথা বর্ণনা দিয়ে বাংলাদেশি এ তরুণ ব্যবসায়ী জানান, ‘দুবাইয়ে চাকরির সুবাদে ইভেন্টের অনেক কিছুই আমি শিখি। যে কাজ আমি নিজে করতে পারি, সেই কাজ অন্যের অধীনে করার চেয়ে নিজে করা লাভজনক। ব্যবসার কিছু টেকনিকও আমি বুঝি। চাকরি ছেড়ে তাই নিজে লাইসেন্স করি। সময়ের চাহিদাকে কাজে লাগাতে ইভেন্টে চলে আসি। দুবাইতে অফিসও নিই। কিন্তু অভিজ্ঞতার জন্য অন্য একটি বিদেশি কোম্পানীতে প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে এক বছরের চুক্তিতে কাজ করি। এতে কর্পোরেট লেভেলে বেশি কাজ করার সুযোগ হয়। চুক্তির একবছর শেষে শুরু করি নিজের বিজনেস।’
ইভেন্ট ব্যবসায় বেশ কিছু কোম্পানি প্রথম থেকে তাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। এর মধ্যে জনসন কন্ট্রোলস, পিটনি বোওস, রেকিট বেনকাইজার অন্যতম। অডিওসহ বেশ কিছু গাড়ির কোম্পানি, টাইমস অফ ইন্ডিয়া গ্রুপ, দুবাই মিডিয়া প্রোডাকশনস, ট্যুরিজম কোম্পানি ও আমিরাতের ৭-৮টি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিও আছে এ তালিকায়। তিনি স্বীকার করেন হলিডে ইভেন্টস, প্রিমিয়ার ইভেন্টস এর কথা।
আফতাব জানালেন, ঢাকার প্রথম সারির রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোও ইভেন্টেলরকে কাজ দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে। ইভেন্ট ব্যবসার মার্কেট বিবেচনা করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি তরুণরা মার্কেটিং, আইটি সাইটসহ যেকোন ক্ষেত্রে ভারতীয়দের সাথে টক্কর দেয়ার মতো ক্ষমতা রাখে। দেশে ভাল চাকরি আছে। তাই অনেকে এখন বিদেশে যেতে চায় না। তারপরও বিদেশে যান। কারণ, বিদেশের একটা আর্কষণ থেকে যায়। বর্তমানে কেউ এ পেশায় সরাসরি বিনিয়োগ করলেও ব্যবসা করা কঠিন হয়ে যাবে যদি প্রচুর পরিমাণ ইনভেস্টমেন্ট, ডিপোজিট ও অভিজ্ঞতা না থাকে। যারা শুরু করছেন তাদের অবশ্যই মিডিয়া, কমিউনিটি ও কর্পোরেট মার্কেট নিয়ে কাজ করতে হবে। তবেই সফাল্যের মুখ দেখবেন।’
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের পাশাপাশি আর কিছু করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘ইভেন্টেলরের লাইসেন্সের পাশাপাশি ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দুবাইতে ভেলু ইনফিনিটি কনসালটেন্সি নামে একটি আইটি ফার্ম খুলেছি। যার কাজ হচ্ছে সোর্স কোড ডেভেলপমেন্ট ও মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশনের কাজ করা। এ কাজ গুলো যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা থেকে আসে বেশির ভাগ। এছাড়াও প্রিন্টিং এন্ড এডভারটাইজিং ফার্ম, আইটি কনসালটেন্ট হিসেবে আমার নিজের ফার্মে আছি। কাজ করছি ভিডিও প্রোডাকশনেও। ২০১৬ সালের মধ্যে 'ভিশন রায়া' নামে প্রোডাকশন হাউজ খোলার কাজ চলছে।’
উল্লেখ্য, আফতাব মনির বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে চলে যান ভারতের ব্যাঙ্গালোর সেখানে ব্যাচেলর অফ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন কম্পিউটার সায়েন্স-এর ওপর চার বছরের ডিগ্রি শেষ করে আইবিএম-এ প্রথম চাকরি করেন। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নজুমিয়া হাটের বাসিন্দা। তার বাবা রফিক আহমেদ ও মা আমিনা রফিক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। এ সফল তরুণ ব্যবসায়ী ভ্রমণ করেছেন কুয়েত, ওমান, সিঙ্গাপুর, মালেশিয়া, থাইল্যান্ড, জাপান, চায়না, জার্মানী, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়। শুধু ব্যবসা নয় সংগীত ও সাংস্কৃতিক জগতেও আছে তার বিচরণের চিহ্ন। ১৯৯০ সালে নতুন কুঁড়ির পুরস্কার জিতেছেন তিনি। গান নিয়ে বিচরণ করেছেন শিশু একাডেমি ও শিল্পকলায়। একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে অরিন্দম নাট্য সম্প্রদায়ের সাথেও কাজ করেন তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৫ জুন, ২০১৫/ রশিদা