আরব সাগর পাড়ের পাকিস্তান জয় করে নাজমুল শান্ত, মুশফিকুর রহিম, হাসান মাহমুদ, শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা, মেহেদি হাসান মিরাজরা এখন ফুরফুরে মেজাজে। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার টেস্ট সিরিজ জিতে আত্মবিশ্বাসে ফুটছে টাইগার ক্রিকেটাররা। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে উড়তে থাকা নাজমুল বাহিনী এবার যাবে ভারত। প্রতিবেশী দেশের মাটিতে দুটি টেস্ট ও ৩টি টি-২০ ম্যাচ খেলবে। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয় যতটা সহজ হয়েছে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, শুভমান গিল, জশপ্রীত বুমরাহ, হার্দিক পান্ডিয়াদের বিপক্ষে কাজটি সহজ হবে না। প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারত শক্তিশালী। পাকিস্তানের চেয়ে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকলেও ভারতের বিপক্ষে টাইগারদের সাফল্যের টিপস দিয়েছেন বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তিনি বলেন, ‘ভারত মানসিকভাবে শক্তিশালী দল। তারা পাকিস্তানের ক্রিকেট দলের চেয়েও সংগঠিত। তারপরও ভারতে সাফল্য পাওয়া সম্ভব। ক্রিকেটারদের সে জন্য শুরু থেকে ধৈর্য নিয়ে খেলতে হবে। ধারাবাহিকভাবে তাদের চাপে রাখতে হবে। চাপে রাখলে ব্যাটাররা ভুল করতে বাধ্য। তাতেই সাফল্য পাওয়া যাবে।’ চাপে রাখার কাজটি করতে হবে ব্যাটারদের পাশাপাশি পেস চতুষ্টয়কে।
রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে দলগত পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ জয় পায় ১০ উইকেটে। মুশফিক ১৯১ রান করেন। প্রথম ইনিংসে দারুণ বোলিং করেন টাইগার পেসাররা। দ্বিতীয় ইনিংসে অসাধারণ বোলিং করেন স্পিনার মেহেদি মিরাজ। রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টে গতির ঝড় তোলে নাহিদ। সুইং ও বাউন্সে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের নাজেহাল করেন হাসান। তাসকিনও দারুণ বোলিং করেন। নিজেদের ১৪৪ টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রতিপক্ষে কোনো ইনিংসের ১০ উইকেট নেয় টাইগার পেসাররা। নাহিদ গতির ঝড় তুলে নিয়মিত ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করেন। তার একটি বলের গতি ছিল ১৫২.৬ কিলোমিটার। যা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে দ্রুততম। তাসকিনও নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন। ভারতের বিপক্ষে ১৯-২৩ সেপ্টেম্বর চেন্নাই এবং ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর কানপুর টেস্টে সাফল্য পেতে টাইগারদের নেতৃত্ব দেবে পেসাররা। পেস চতুষ্টয় নিয়ে আশাবাদী বিসিবি পরিচালক ফাহিম। তিনি বলেন, ‘আমাদের পেস বোলিং অ্যাটাক এখন অনেক শক্তিশালী। তাসকিন অভিজ্ঞ। ইনজুরি সামলে নিজেকে ফিরে পাচ্ছেন। মাঝেমধ্যে গতি হারাচ্ছেন ঠিকই, তবে সেটা ঠিক হয়ে যাবে আশা করি। দারুণ আত্মবিশ্বাসী বোলিং করেছেন হাসান। একটি নির্দিষ্ট চ্যানেলে ধারাবাহিকভাবে বোলিং করছেন। এটাই তার সবচেয়ে বড় গুণ। তার ওপর দুটো সুইং-ই আছে। তিনি জানেন প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে বোলিংয়ে খুব বেশি ভ্যারিয়েশন করা যাবে না। একটি নির্দিষ্ট ছকে বোলিং করেন। নাহিদের মূল শক্তি গতি। শুরুতে লাইন ও লেন্থের ওপর নিয়ন্ত্রণ কম ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে বুঝছে সাফল্য পেতে একটি জায়গায় বোলিং করতে হবে। এখন সেটা সে করছে। তার দুটো সুইং-ই আছে। শরিফুল দিন দিন উন্নতি করছে। উইকেট শিকারি বোলার। যেটা একটা দলের অনেক ভরসা। নতুন বলে ভালো করার পাশাপাশি পেসারদের পুরনো বলে উন্নতি করাটা জরুরি। রিভার্স সুইংটা শেখাতে হবে।’
পাকিস্তানে টেস্ট খেলা হয়েছে কুকাবুরা বলে। কুকাবুরা বলের সিম উঁচু। সে জন্য শুরুর ১০-১২ ওভারে সুইং ও বাউন্স বেশি হয়। সে সময় পেসারদের গতি, বাউন্স ও সুইংয়ে নাজেহাল হতে হয় ব্যাটারদের। কুকাবুরা বলে রিভার্স সুইং বেশি। ভারতে টেস্ট খেলা হবে এসজি বলে। এসজি বলের সিম একটু বেশি মোটা। টেকসই এই বলে সুইং বেশি। দীর্ঘ সময় থাকে বলে পেসাররা বাড়তি সুবিধা পাবে। ব্যাটারদের কঠিন লড়াই করতে হয় এসজি বলের বিপক্ষে। বিসিবি পরিচালক বলেন, ‘জাতীয় দলের অনুশীলন শুরু হচ্ছে। এসজি বল দিয়েই অনুশীলন করবে ক্রিকেটাররা।’ ভারতের মাটিতে দুটি টেস্ট এবং তিনটি টি-২০ খেলবে টাইগাররা। ভারতের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ১৩টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। জয় নেই। ড্র দুটি। ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম এবং ২০১৫ সালে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা স্টেডিয়ামে দুটি টেস্ট ড্র করেছে। ১১টি হেরেছে। প্রতিবেশী দেশটির বিপক্ষে ৬টি সিরিজ খেলেছে দেশের মাটিতে। দুটি খেলেছে ভারতের মাটিতে। ২০১৭ সালে একটি টেস্ট খেলে টাইগাররা হেরেছিল ২০৮ রানে। ২০১৯ সালে দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজ খেলে। ইন্দোরে ইনিংস ও ১৩০ রানে এবং কলকাতার ইডেন গার্ডেনে গোলাপি বলের টেস্টে হেরেছিল ইনিংস ও ৪৬ রানে।
এবার সাফল্য হাতছানি দিচ্ছে টাইগারদের। ক্রিকেটপ্রেমীরা স্বপ্ন দেখছেন ভারতের মাটিতে টেস্ট জয়ের।