শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ফুটবলের জাদুকরটা ছবি হয়ে গেছে

ফুটবলের জাদুকরটা ছবি হয়ে গেছে

দিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা ►জন্ম : ৩০ অক্টোবর ১৯৬০, লানুস-বুয়েনস এইরেস ►মৃত্যু : ২৫ নভেম্বর ২০২০, তিগ্রে- বুয়েনস এইরেস

আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকর ম্যারাডোনা। অনেকেই বলেন ফুটবলের ঈশ্বর।

উপমহাদেশ তো বটেই, সারা বিশ্বে আর্জেন্টিনার ভক্তের আজ যে উম্মাদনা তার স্রষ্টাও তিনি। তাঁর হাত ধরেই ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে ভেসেছিল আর্জেন্টাইন ভক্তরা। ম্যারাডোনা নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আনন্দ-বেদনার বহু স্মৃতি। ফুটবল নৈপুণ্যে তিনি ছিলেন সেরাদের সেরা। মাদক গ্রহণের কারণে বহিষ্কার হয়েছিলেন, কাঁদিয়েছিলেন ভক্তদের। নারী কেলেঙ্কারি ও নানা বিতর্ক তাঁর নিত্যসঙ্গী। তবু তাঁকে নিয়ে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের উন্মাদনা এতটুকু কমেনি। সবাইকে কাঁদিয়ে ছবি হয়ে গেছেন ফুটবলের জাদুকর ম্যারাডোনা। কিংবদন্তি ফুটবলার ম্যারাডোনাকে নিয়ে আজকের আয়োজন। লিখেছেন- তানভীর আহমেদ

 

বল বয় থেকে ফুটবলের শাহেনশাহ

আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসের লানুসে ১৯৬০ সালে জম্ম নেন ম্যারাডোনা। দরিদ্র পরিবারে বেশ কষ্টেই কেটেছে তাঁর শৈশব। পড়াশোনা নয়, ফুটবলের প্রতিই ছিল তাঁর নেশা। সারাক্ষণ বল নিয়ে পড়ে থাকতেন। ১০ বছর বয়সে এস্ত্রেয়া রোজার হয়ে খেলতে নামেন মাঠে। ‘দ্য লিটল অনিঅন’ পরে যার নাম রাখা হয় ‘আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স’- সেখানে একজন বল বয় হিসেবে তাঁকে নেওয়া হয়। অবসরে নিজেই মাঠের এক কোনায় বল নিয়ে কসরত করতেন, ড্রিবলিং করতেন আর তাতেই নজরে পড়ে যান ম্যারাডোনা। ১২ বছর বয়সে মাঠ দাপিয়ে বেড়ান আর্জেন্টিনার প্রথম বিভাগের খেলায়। তখন খেলার অর্ধ-বিরতি চলছিল। তিনি মাঠে নেমে নিজে থেকেই নানা রকম কৌশল দেখিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। দর্শকরা তাঁকে নিয়ে হইহুল্লোড় শুরু করে দেন, হাততালির পাশাপাশি প্রশংসায়ও ভাসান। ১৯৭৬ সালে ‘আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স’র নিয়মিত খেলোয়াড় হিসেবে ম্যারাডোনা তাঁর ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন।

 

ফুটবল জাদুকরের বাজিমাত

ম্যারাডোনাকে সর্বকালের সেরা ফুটবলার বলে অনেকেই মেনে নিয়েছেন। বাঁ পায়ে বল দখলে রাখতেন। দর্শকরা অনেকেই বিস্ময়ে দেখতেন, বল বুঝি তাঁর পায়ে আঠা দিয়ে লাগানো! ছোট ছোট পা দিয়ে তিনি খুব দ্রুত দৌড়াতে পারতেন। খুব অল্প জায়গার মধ্যেই ঘুরে যেতে পারতেন। প্রতিপক্ষের ফুটবলারদের পেছনে ফেলে একাই বল নিয়ে ঢুকে যেতেন ডি-বক্সে। ম্যারাডোনা ছিলেন একজন মিডফিল্ডার। মাঝমাঠে দাঁড়িয়ে বল পেলেও ম্যারাডোনাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ত প্রতিপক্ষ। মিডফিল্ডার হয়েও ডিফেন্ডারের সঙ্গে লম্বা সময় ধরে বল নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারতেন। সতীর্থকে সামনে দিয়ে বল পাস করতেন যেন গোলপোস্টে আক্রমণ করা যায়। এ ছাড়া তাঁর ড্রিবলিং বা কাটানোর দক্ষতা ছিল অবিশ্বাস্য। একাই দুই-চারজন খেলোয়াড়কে ফাঁকি দিয়ে বল পাস করে দিতেন। তাঁর আরেকটি জাদুকরী নৈপুণ্য ছিল পায়ের পেছনের অংশ ব্যবহার করে এক ধরনের রিভার্স-ক্রস পাস শট।

 

ডোপ টেস্টে বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কার

১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয় ম্যারাডোনার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলেও ম্যারাডোনাভক্তরা ভুলবে না ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপের ধারণা। গ্র“প পর্বের প্রথম দুই ম্যাচে দুর্দান্ত খেলার পর হুট করেই শোনা গেল, ম্যারাডোনা বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কার! ফিফা জানাল, তাঁর শরীরে মাদকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। হুট করে ম্যারাডোনার ডোপ টেস্ট ও তাঁকে নিষিদ্ধের ঘটনায় ফুটবল বিশ্ব রীতিমতো থমকে যায়। ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন আর্জেন্টিনার সমর্থকরা। ম্যারাডোনা তাঁর আত্মজীবনীতে ৯৪ বিশ্বকাপে ডোপ টেস্টে ধরার বিষয়ে বলেছেন, তাঁর ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক তাঁকে এনার্জি ড্রিংক রিপ ফুয়েল দেওয়ায় তিনি ড্রাগ টেস্টে ধরা পড়েছেন। তিনি পরিষ্কার দাবি করেন, ওই রাসায়নিক দ্রব্যটি তাঁর প্রশিক্ষক অনিচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহার করেছিলেন। ম্যারাডোনাকে বহিষ্কারের ঘটনাকে তাঁর ভক্তরা ষড়যন্ত্র হিসেবেই মনে করেন। যদিও ম্যারাডোনার জীবনে মাদক গ্রহণে বহিষ্কারের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ফুটবল ক্লাব নেপোলিতে থাকা অবস্থায় ১৯৯১ সালেও একবার ড্রাগ টেস্টে কোকেনের জন্য ধরা পড়ায় ১৫ মাসের জন্য ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ম্যারাডোনাকে।

 

গোলের রাজা

আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের হয়ে ১৯৭৬ সালের ২০ অক্টোবর ক্লাব ফুটবলে ম্যারাডোনার অভিষেক ঘটে। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ক্লাবে খেলেন ম্যারাডোনা। এই ক্লাবের হয়ে ১৬৭ খেলায় ১১৫টি গোল করেন। ১৯৮১ সালে ১ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে বোকা জুনিয়র্সে যোগ দেন ম্যারাডোনা। ম্যারাডোনা যোগ দেওয়ার পর ১৯৮২ সালে বোকা জুনিয়র্স প্রথম লিগ চ্যাম্পিয়নশিপ  জেতে। এরপর ইউরোপে ছোটেন ম্যারাডোনা। ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের পর ৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ইউরোপিয়ান ক্লাব বার্সেলোনায় যোগ দেন তিনি। ১৯৮৩ সালে ম্যারাডোনা রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে কোপা দেল রে এবং অ্যাথলেটিক বিলবাওকে হারিয়ে স্প্যানিশ সুপার কাপ জয় করেন। বার্সেলোনার হয়ে ৫৮ খেলায় ৩৮টি গোল করেন ফুটবল জাদুকর। ১৯৮৪ সালে ৬.৯ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফির বিনিময়ে বার্সেলোনা থেকে ইতালির ক্লাব নেপোলিতে যোগ দেন ম্যারাডোনা।

 

যত দিন বেঁচে ছিলেন ছিলেন নিজের মতো

ম্যারাডোনা বরাবরই নিজের মতো বাঁচতে চেয়েছেন। তাই বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়েনি কখনই। হাত দিয়ে গোল করে সেটা স্বীকার করে হইচই ফেলে দেন, ড্রাগ নিয়ে ফুটবল ক্যারিয়ার শেষ করেন, একাধিক গার্লফ্রেন্ড নিয়ে কেলেঙ্কারি, সন্তান অস্বীকার, কখনো মিডিয়ায় এসে আর্জেন্টিনাবিদ্বেষী বক্তব্য, কখনো আবার ফিফাপ্রধানকে গালাগালিÑ সব সময়ই বিতর্কের সঙ্গে থাকা ম্যারাডোনা ফেঁসেছেন ট্যাক্স ফাঁকির মামলায়। এ কারণে দীর্ঘদিন ইতালি যেতে পারেননি তিনি। ইতালির ট্যাক্স কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, তিনি ইতালিতে থাকা অবস্থায় যেসব ব্যবসা করেছেন, আয় করেছেন; এর কর সময় মতো শোধ করেননি। এ নিয়ে কম নাটক হয়নি। ২০০৭ সালে ম্যারাডোনা ইতালি সফরে গিয়ে হট্টগোল লাগিয়ে দেন। ইতালি বিমানবন্দরের পুলিশ তাঁকে আটকে দেয়। তাঁর কাছ থেকে বেশ কিছু অর্থ ও দুটি রোলেক্স ঘড়ি খুলে রাখে। এটাই শেষ নয়। ২০০৯ সালে তখন আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচ ছিলেন তিনি। এক ক্লিনিকে কর-পুলিশ গিয়ে আবারও চড়াও হয় তাঁর ওপর। সেবার নগদ ৪ হাজার পাউন্ড ও কানের দুল কেড়ে নিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেয় কর-পুলিশ।

‘হ্যান্ড অব গড’ কিংবা অবিশ্বাস্য ‘গোলমানব’

১৯৮৬ বিশ্বকাপটা ছিল ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ। এই বিশ্বকাপেই বিশ্ববাসী ম্যারাডোনার কাছ থেকে দেখেছিল ইতিহাস কাঁপানো দুই গোল। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ডের। ম্যাচে দুই পক্ষের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্যভাবে। কিন্তু ম্যাচের ৫১ মিনিটে লাফিয়ে উঠে গোল করেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক ম্যারাডোনা। গোল করার পর পরই ম্যারাডোনা তাঁর সতীর্থদের সঙ্গে গোল উদযাপনে মেতে ওঠেন। অবশ্য ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক পিটার শিলটনসহ চার-পাঁচজন ইংলিশ ফুটবলার গোল বাতিলের দাবি জানিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন রেফারির দিকে। কিন্তু ব্যাপারটি রেফারি সত্যিই বুঝে উঠতে পারেননি।

পরে টেলিভিশন রিপ্লেতে দেখা যায়, গোলটি করার সময় ম্যারাডোনা হাত ব্যবহার করেন। ম্যারাডোনা পরে এটি স্বীকার করে নিয়ে ‘হ্যান্ড অব গড’ বলে অভিহিত করেন। এই বিতর্কিত গোলের পর আরেক অবিশ্বাস্য গোলের সাক্ষী হন দর্শক। বিতর্কিত গোলের ঠিক ৪ মিনিট পরই দ্বিতীয় গোল করেন এই আর্জেন্টাইন তারকা। যে গোলকে পরে ফিফা বিশ্বকাপের ইতিহাসের সেরা গোল হিসেবে নির্বাচিত করে। মাঠের অর্ধেকের বেশি অংশ দৌড়িয়ে, একে একে পাঁচজন ইংলিশ ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষক পিটার শিলটনকে কাটিয়ে গোল করেন ম্যারাডোনা। ২০০২ সালে ফিফা অনলাইনে ভোটের আয়োজন করলে এই গোলটি ‘শতাব্দীর সেরা গোল’ হিসেবে নির্বাচিত হয়।

 

নেপোলির বিস্ময়

ম্যারাডোনা যখন নেপোলিতে যোগ দেন লিগে তখন ক্লাবের অবস্থা খুব ভালো ছিল না। সে অবস্থা থেকে ১৯৮৬-৮৭ ও ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে সিরি এ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে এবং ১৯৮৭-৮৮ ও ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে তারা রানার-আপ হয়। শুধু তাই নয়, ১৯৮৭ সালে কোপা ইতালিয়াও জিতে নেপোলি। এ ছাড়া ১৯৮৯ সালে রানার-আপ হয়। নেপোলির হয়ে ম্যারাডোনা ১৯৮৭-৮৮ মৌসুমের সিরি এ-তে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। আর্জেন্টিনার হয়েও ম্যারাডোনার ক্যারিয়ার যে কাউকে বিস্মিত করবে। আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে ম্যারাডোনা টানা চারটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেন। বিশ্বকাপ জেতেন ১৯৮৬ সালে। তবে এর আগে ১৯৭৭ সালের ২৭ ফেব্র“রুয়ারি ১৬ বছর বয়সে হাঙ্গেরির বিপক্ষে ম্যারাডোনার আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হয়। আর্জেন্টিনার হয়ে ১৯৭৯ সালে যুব বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে এবং সে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হয়।

 

জানা অজানা ম্যারাডোনা

► আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের হয়ে ১৯৭৬ সালের ২০ অক্টোবর মাত্র ১৫ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবলে অভিষেক হয় তাঁর।

► জাতীয় দল আর্জেন্টিনার হয়ে ৯১ ম্যাচ খেলেছেন তিনি, করেছেন ৩৪ গোল। দেশের হয়ে চারটি বিশ্বকাপ খেলেছেন ম্যারাডোনা।

বিশ্বকাপে কোনো দলের অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড ম্যারাডোনার। ১৬টি ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।

►  বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে মোট ২১টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। জাপানে হওয়া ১৯৭৯ সালের যুব বিশ্বকাপে বাজিমাত করা আর্জেন্টিনা দলে ছিলেন ম্যারাডোনা।

►  বিশ্বকাপের এক আসরে সবচেয়ে ফাউলের শিকার হওয়ার রেকর্ড ম্যারাডোনার। ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপে মোট ৫৩ বার তাঁকে ফাউল করা হয়েছিল।

► ম্যারাডোনার অধিনায়কত্বে পশ্চিম জার্মানিকে ৩-২ গোলে হারিয়ে ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয় করে আর্জেন্টিনা। ওই আসরে ম্যারাডোনা তাঁর অসামান্য পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি হিসেবে জেতেন গোল্ডেন বল।

►  ২০০৮ সালের অক্টোবরে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব নেন।

►  ম্যারাডোনার বাহুতে আছে চে গুয়েভারা এবং বাঁ পায়ে আছে ফিদেল কাস্ত্রোর ট্যাটু।

►  আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স নিজেদের স্টেডিয়ামের নাম দিয়েছে ইস্তাডিও দিয়াগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা।

►  ম্যারাডোনা ফুটবল ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় যিনি ট্রান্সফার ফির রেকর্ড দুবার ভেঙেছেন। ম্যারাডোনা এবং মেসিই কেবল ফিফা বিশ্বকাপ ও ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল জিতেছেন।

►  ম্যারাডোনা ১৯৮৪ সালে আইরেসে ফিয়ান্সি ক্লদিয়া ভিয়াফানিয়েকে বিয়ে করেন। ভিয়াফানিয়ের বিচ্ছেদ হয় ২০০৪ সালে। ম্যারাডোনার সঙ্গে নানা সময়ে দেখা মিলেছে একাধিক বান্ধবীর।

 

বিশ্বকাপ জয়

নীল-আকাশি আর্জেন্টিনার সুখস্মৃতি ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ। এক ম্যারাডোনার জাদুতে বুঁদ ছিল পুরো বিশ্ব। একাই আর্জেন্টিনাকে উপহার দিয়েছিলেন বিশ্বকাপ। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যারাডোনার হ্যান্ড অব গড ও শতাব্দীর সেরা গোল দেখেছিল বিশ্ব। কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াই শেষে আর্জেন্টিনা বেলজিয়ামকে পরাজিত করে টিকিট পায় ফাইনালের। ফাইনালে পশ্চিম জার্মানিকে ৩-২ ব্যবধানে বদ করে। আট বছরের ব্যবধানে নিজেদের ইতিহাসের দ্বিতীয় শিরোপার দেখা পায় আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হন ম্যারাডোনা।

 

এক নজরে

১৯৬০ : ৩০ অক্টোবর বুয়েনস আইরেস প্রদেশের লানুস জেলায় জš§।

১৯৭৬ : স্থানীয় ক্লাবের হয়ে খেলোয়াড়ি জীবনের অভিষেক।

১৯৭৭ : ২৭ ফেব্র“য়ারি আর্জেন্টিনার সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে মাঠে নামেন। বয়স ১৬ বছর ১২০ দিন।

১৯৭৮ : বয়সে কম হওয়ার কারণে বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়েন।

১৯৭৯ : ২ জুন, জাপানে অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপে জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক গোল করেন। অধিনায়ক হিসেবে শিরোপাও জয় করেন।

১৯৮২ : ২১ বছর বয়সে দলের সঙ্গে ইউরোপে পাড়ি জমালেন স্পেনে বিশ্বকাপ খেলার জন্য। ব্রাজিলের কাছে ৩-১ গোলে হেরে আর্জেন্টিনা বিদায় নিল।

১৯৮৪ : ইতালীয় ক্লাব নেপোলিতে যোগ দেন ৪.৬৮ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে।

১৯৮৬ : ঈশ্বরের হাতের খ্যাতি আর সঙ্গে সঙ্গে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে আর্জেন্টিনাকে এনে দিলেন বিশ্বকাপ। এ বছরই ইউরোপের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার পেলেন।

১৯৮৭ : নেপোলিকে জেতালেন ইতালীয় ফুটবলের শিরোপা।

১৯৯০ : সন্তানের পিতৃত্ব সংক্রান্ত মামলায় জরিমানা। বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মানির কাছে ০-১ গোলে হেরে যায় আর্জেন্টিনা।

১৯৯১ : ড্রাগ টেস্টে পজিটিভ হওয়ার কারণে ইতালি ত্যাগ করতে হলো। কোকেন গ্রহণের অভিযোগে আর্জেন্টিনায়  গ্রেফতার হলেন।

১৯৯২ : স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়া ফুটবল ক্লাবে যোগ দিলেন। কিন্তু আশানুরূপ ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখাতে পারলেন না।

১৯৯৩ : সেভিয়া ছেড়ে আবারও আর্জেন্টিনায় ফিরে এলেন। যোগ দিলেন স্থানীয় নোয়েল ওল্ড বয়েজ দলে।

১৯৯৪ : আবার ড্রাগ টেস্টে ব্যর্থ হলে এক ম্যাচ পরেই বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়লেন। এরপর আর জাতীয় দলে খেলেননি।

১৯৯৬ : মাদকাসক্তি থেকে মুক্তিলাভের জন্য ক্লিনিকে ভর্তি হলেন।

১৯৯৭ : ৩৭ বছর বয়সে অবসর নিলেন।

২০০০ : হৃদযন্ত্রের সমস্যায় উরুগুয়ের এক হাসপাতালে ভর্তি হলেন।

২০০২ : মাদকাসক্তি থেকে মুক্তিলাভের আশায় কিউবাতে চলে গেলেন।

২০০৩ : ম্যারাডোনা তাঁর ছেলের সঙ্গে দেখা করলেন প্রথমবারের মতো। এর আগে তিনি সব সময় তাকে পুত্র হিসেবে অস্বীকার করে আসছিলেন।

২০০৪ : ১৯ এপ্রিল আরেকবার গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো তাঁকে।

২০০৮ : আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ঘোষণা করে ডিসেম্বর ২০০৮ থেকে আর্জেন্টিনার জাতীয় ফুটবল দলের কোচ ম্যারাডোনা।

২০১০ : জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হিসেবে পদত্যাগ করেন।

২০১১ : আরব আমিরাতের আল ওয়াসেল ফুটবল দলের কোচের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

২০২০ : হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে না ফেরার দেশে চলে যান।

সর্বশেষ খবর