২ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৮:২৪

বগুড়ার মাঠ জুড়ে হলুদের সমারোহ

আব্দুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ার মাঠ জুড়ে হলুদের সমারোহ

সম্প্রতি বিভিন্ন ধরনের তেলের দাম বেড়ে যাওয়া কৃষকেরা ঝুঁকে পড়ছেন তেলবীজ উৎপাদনের দিকে। বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলাতে প্রধান তেলবীজ সরিষা উৎপাদনে এবার কৃষকরা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ফেলেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা। বগুড়ার বিভিন্ন মাঠ জুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে হলুদের সমারোহ। 

জেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, মাঠে মাঠে কৃষকের সরিষা গাছে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। সরিষার ফুলের সৌন্দর্যে মুখরিত হয়ে উঠেছে কৃষকের মাঠ। মনে হচ্ছে হলুদ রঙের বাসন্তী শাড়ি দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া হয়েছে সোনালী প্রান্তর। এ সৌন্দর্যের সাথে নিজেকে ক্যামেরাবন্দী করতে বিভিন্ন এলাকা হতে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। সাধারণত আমন ধান কাটার পরপরেই কৃষকরা জমিতে সরিষার বীজ বপন করে। সরিষার ফসল ঘরে তুলে তারা আবার জমিতে বোরো ধান ধানের আবাদ শুরু করে। এক্ষেত্রে জমি হতে তারা একটি বাড়তি ফলন ঘরে তুলতেই সরিষার আবাদ করেছে। আবার একই জমিতে বোরো ধান রোপন করতেও খরচ কমবে কৃষকের। সরিষা চাষে জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায় বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তাগণ ।

বগুড়া সোনাতলা উপজেলার পাকুল্লা ইউনিয়নের হুয়াকুয়া গ্রামের কৃষক মুসা মিয়া জানান, আমন ধান কাটার পর তিনি ৫০ শতক জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। গত কয়েকদিন আগে তার জমিতে সরিষার ফুল ফুটেছে। ফলন খুবই ভালো হয়েছে। তিনি আশা করছেন তার জমি হতে তিনি প্রায় ১০ মণ সরিষা পাবেন। 

তিনি আরো বলেন, বাজারে তেলের দাম বেশি হওয়ায় আমি আমার জমিতে সরিষার চাষ করেছি। তাছাড়া বাজারের ভেজালে ভরা সয়াবিন তেল খেয়ে আমাদের বিভিন্ন ধরনের দুরারোগ্য অসুখ হচ্ছে। সারাবছর খাওয়ার জন্য সরিষা রেখে বাকি সরিষা আমি বিক্রি করে দেব। সরিষা চাষের আর একটি সুবিধা হলো আগামীতে বোরো ধান রোপন করতে জমিতে অতিরিক্ত কোন চাষ দিতে হয় না। ফলে বোরো ধানেও খরচ কম হয়। 

বগুড়া জেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বছরের কার্তিক হতে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত জমিতে ২ থেকে ৩টি চাষ দিয়ে সরিষার বীজ বপন করতে হয়। মাঘ মাস পর্যন্তও সরিষা জমি থেকে ফসল সংগ্রহ করা হয়। দেশি সরিষা ছাড়াও বারি-১৪, ১৫, ১৮, বিনা-৯, ১১, তরি-৭ সম্পদ, শ্বেতী প্রভূতি জাতের সরিষা পুরো জেলায় চাষ হয়। গত বছর জেলায় সর্বমোট ২৭ হাজার ৬১৭ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিল। এ বছর সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩১ হাজার ৫০০ হেক্টর । গত ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ২৮ হাজার ৬২০ হেক্টর। যা চলমান রয়েছে। চলতি বছরে সরিষার লক্ষ্যমাত্রা ছেড়ে যাবে। সরিষার ফসল ঘরে তোলার পর পরই কৃষকরা জমিতে বোরো ধান রোপন করবেন। সাধারণত প্রতি বিঘা জমি হতে ৫ হতে ৭ মণ সরিষা পাওয়া যায়। তবে জমিতে প্রায় ৪টি চাষ, পরিমাণমত সার, ২ বার ঔষধ সরবরাহ করতে পারলে এবং ভাল জাতের সরিষার বীজ বপন করলে প্রতি বিঘা জমি থেকে প্রায় ৮ মণ সরিষা পাওয়া সম্ভব।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাহেলা পারভিন জানান, বাজারে আমাদের নিজস্ব উৎপাদিত সরিষার তেল ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপযোগী। এ দিকে লক্ষ্য রেখে কৃষকরা সরিষা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। সরিষা চাষের জন্য কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করতে আমাদের কৃষি কর্মকর্তাগণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সরিষা চাষের মধ্যে দিয়ে আমাদের দেশের তেল এর ঘাটতি পূরণ অনেকাংশেই সম্ভব। সরিষার খৈল বিভিন্ন ধরনের গবাদিপশুর এবং মাছের উৎকৃষ্ট খাবার। এ বছর বগুড়ায় সরিষার চাষে বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে বলে ধারনা করা যাচ্ছে। 

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর