প্রকৃতিতে এখন হেমন্তকাল। এ ঋতুতে দিনের শুরুতে কুয়াশা ভেদ করে যখন সূর্যের আলো প্রকৃতিতে আসে, তখন ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে শুরু করে দিগন্তবিস্তৃত আমনের খেত। সোনামাখা রোদে মাঠে মাঠে ঝলমলিয়ে ওঠে সোনালি ধান। সেই ধানের ঝিলিক যেন ছড়িয়ে পড়েছে ধান-চাল উৎপাদনে প্রসিদ্ধ জেলা হিসেবে পরিচিত নওগাঁর কৃষকদের চোখে মুখে। অগ্রায়ণের শুরু থেকেই নওগাঁর মাঠে মাঠে ধান কাটার ধুম পড়েছে। ফসলের মাঠে মাঠে সরব কৃষক ও ক্ষেত মজুরেরা।
নতুন ধান ঘরে উঠায় বাড়িতে বাড়িতে চলছে নবান্নের উৎসব। সব মিলিয়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে গ্রামীণ জনপদে। অগ্রহায়ণজুড়ে গ্রামীণ জনপদের মাঠ-ঘাট, উঠোন মুখরিত থাকবে কৃষাণ-কৃষাণীর ফসল তোলার উৎসবে।
এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় নওগাঁয় আমনের ফলনও হয়েছে ভালো। প্রাকৃতিক বিপর্যয় না থাকায় গেলবারের মতো বাম্পারের ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। ক্ষেত থেকে ধান কেটে কৃষকের উঠানে মাড়াইয়ের কাজ চলছে। ধানের ম-ম গন্ধ এখন কৃষকের উঠানজুড়ে। নতুন ধান ঘরে উঠতেই বাড়ির গৃহিনীরা সেই ধান থেকে চাল তৈরির কাজে লেগে পড়ছেন। নতুন ধানের চাল দিয়ে হচ্ছে সুমিষ্ট ক্ষীর-পায়েস কিংবা সেই চালের গুড়ায় তৈরি হচ্ছে নানা রকমের সুস্বাদু পিঠা।
নওগাঁ সদর উপজেলার কীত্তিপুর এলাকার কৃষক সামছুল আলম বলেন, এবার তিনি ২০ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন। এর মধ্যে চার বিঘা জমিতে চাষ করা স্বর্ণা-৫ জাতের ধান কাটা ও মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। বিঘা প্রতি ১৮ মণ করে ধান হয়েছে। বাজারে বর্তমানে প্রতিমণ স্বর্ণা-৫ ধান বিক্রি হচ্ছে ১৩৫০ টাকায়। মৌসুমের শুরুতেই ধানের দাম ভালো পাওয়ায় খুশি তিনি।
ধান কাটা শ্রমিক বেলাল হোসেন বলেন, প্রতি বিঘা জমির আমন ধান কাটা ও মাড়াই করে কৃষকের কাছ থেকে ২৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। মাঠ থেকে ধান কেটে মাড়াই করে কৃষকেরা ঘরে তুলে দিয়ে আসছেন তারা। গত বছর এ কাজের জন্য ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত নিয়েছিলেন তারা। এবার জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং ধানের ভালো থাকায় কাজের মজুরি বেশি নিচ্ছে শ্রমিকেরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩০০ হেক্টর। কিন্তু আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৯৬ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লাখ ৮২ হাজার ৫৯৫ মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ধান আবাদ কম হলেও এবার ধানের ফলন হয়েছে। এবার বর্ষা ভালো হওয়ায় এবং পোকামাকড়ের তেমন আক্রমণ না থাকায় বিঘা প্রতি ফলন ও দামও ভালো।
বিডি প্রতিদিন/একেএ