রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা নির্মাণ করেছে শর্টফিল্ম 'অন্ত্যেষ্টি'। শর্টফিল্মটি ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃতও হয়েছে।
যখন পৃথিবীর সৃষ্টি হয় তখন কি ধর্ম ছিলো? ছিলো না যদি, তবে আজ কেন ধর্মের নামে এত গোড়ামী! জাতিধর্মের চেয়ে মানুষধর্ম কি বড় নয়? তবে পৃথিবীতে এতো অসমতা কিসের? এই অসমতা দুর করে মনুষ্যধর্মের ও সাম্যের একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করার সেই ম্যাসেজটি উঠে এসেছে 'অন্ত্যেষ্টি' শর্টফিল্মটিতে।
চলচ্চিত্রটির পরিচালক তানজিনা রহমান তাসনিম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। ছবিতে একই বিভাগের শিক্ষার্থীরা অভিনয় ও নির্মাণের পেছনে কাজ করেছে এবং বিভাগের ব্যানারেই ছবিটি নির্মিত হয়েছে।
চলচ্চিত্রটি ছিলো মুসলিম প্রধান গ্রামে এক হিন্দু পরিবারের বসবাসের ঘটনা নিয়ে। হঠাৎই এক রাতে সেই পরিবারের একমাত্র পুরুষ মারা যান। সংসারে আর কোনো পুরুষ না থাকায় মরদেহ সৎকারে বিপাকে পড়ে পরিবারটি। ধর্মীয় নানা বিধি-নিষেধের কারণে কোনো মুসলমান পুরুষও আসে না মরদেহটি সৎকার করতে। যদিও দুই একজন মুসলমান যুবক লাশ সৎকারের আগ্রহ দেখায়; পাড়ার মোড়লদের কাছে সেই আগ্রহ জায়গা পায় না।
সমস্যা সমাধানের জন্য গ্রামের মাতব্বররা সভা করেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয় না। শেষে কোনো উপায় না পেয়ে এবং ধর্মীয় নিষেধ থাকা সত্ত্বেও রাতের অন্ধকারে হিন্দু পরিবারের নারীরাই মরদেহ সৎকার করেন।
এমন একটি গল্প নিয়ে নির্মিত ১২ মিনিটের চলচ্চিত্র ‘অন্ত্যেষ্টি’। সম্প্রতি এটি জিতে নিয়েছে আন্তর্জাতিক চিলড্রেন’স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ইয়াং ট্যালেন্ট বিভাগে প্রথম ও একমাত্র পুরস্কার। ১৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী নির্মাতাদের চলচ্চিত্র এই ‘ইয়াং ট্যালেন্ট’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
চলচ্চিত্রটির পরিচালক তানজিনা রহমান বলেন, ‘এবারের ১১তম আন্তর্জাতিক চিলড্রেন’স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ‘বাংলাদেশ ইয়াং ট্যালেন্ট’ বিভাগে প্রথম পুরস্কার পেয়েছে ‘অন্ত্যেষ্টি’। এ বিভাগে মোট ২২টি চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।’
তিনি চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে বলেন, ‘ আমাদের বড় পরিচয় আমরা মানুষ, আর এটাই আমাদের বড় ধর্ম। মানব ধর্ম প্রতিষ্ঠা হলে সমাজের অর্ধেক সমস্যা সমাধান হতো। মানুষ হিসেবে আমাদের মানবিক দিকটা যে সবার আগে হওয়া উচিত সেই বার্তাটা ‘অন্ত্যেষ্টি’র মাধ্যমে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও চলচ্চিত্রটির তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহীল বাকী জানান, ভারতের মালদার শেখপুরা নামের এক মুসলমান-প্রধান গ্রামে বিশ্বজিত রজক নামের এক হিন্দু ব্যক্তির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এ ধরনের একটি সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। সেই প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করেই ‘অন্ত্যেষ্টি’ নির্মিত। ‘অন্ত্যেষ্টি’র এই অর্জন নবীন নির্মাতাদের স্বপ্ন দেখাতে সাহায্য করবে।
এর আগে আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া স্যান ডিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয় আয়েজিত ‘শান্তির স্বপক্ষে আমরা’ শীর্ষক চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতায় চলচ্চিত্রটি দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। এছাড়াও সাউথ এশিয়ান শর্টফিল্ম ফেস্টিভ্যালসহ আরো কিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটি প্রদর্শনীর অপেক্ষায় রয়েছে।#
বিডি-প্রতিদিন/ আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর