রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। রবিবার সকাল পৌনে দশটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে হামলা চালানোর পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর আবারো হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। দুই হামলায় অন্তত ১২ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আহতদের এখনো নাম পরিচয় জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রবিবার সকাল পৌনে দশটার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা মানবন্ধন কর্মসূচি পালনের জন্য গ্রন্থাগারের সামনে যখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বর থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমদ রুনুর নেতৃত্বে দলবেঁধে গ্রন্থাগারের সামনে আসেন ছাত্রলীগের ২৫-৩০ জন নেতাকর্মী। সেখানে এসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন রকম গালিগালিজ করে। এ সময় ছাত্রলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু মানববন্ধনের ব্যানার কেড়ে নেয়। ব্যানার নিয়ে দুই দিকে দাঁড়িয়ে থাকা কোটা সংস্কার আন্দোলনের রাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক অনন্ত আহসান ও নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ শুভকে আক্রমণ করেন ছাত্রলীগের সহসভাপতি মিজানুর রহমান সিনহা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ হিল গালিব। তারা আন্দোলনকারী ওই দু'জনকে এলোপাতারি থাপ্পর ও কিল-ঘুষি মারতে থাকে। আর অন্যদেরকে ধাওয়া দেয় ছাত্রলীগের অন্য নেতাকর্মীরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা কেউ গ্রন্থাগারের সামনে দিয়ে, কেউ গ্রন্থাগারের পেছন দিয়ে পালিয়ে যায়।
এরপর বেলা ১১টা ২৫ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদুল্লাহ ভবনের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করে। সেখানেও হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এ সময় ছাত্রলীগের ৫০-৬০ জন নেতা লাঠি-রড হাতে নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ চালায়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের তারা এলোপাথারি পেটাতে থাকে। এতে মোট ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হন।
হামলার শিকার হাবিবুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা শহিদুল্লাহ ভবনের সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা চালায়। অনেকেই আহত হয়েছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হামলার শিকার নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ শুভ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘আমরা যখন মানববন্ধনে দাঁড়াতে ধরছি তখন ছাত্রলীগ নামের কিছু সন্ত্রাসী আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা সেখান থেকে কোনো রকমভাবে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছি। তারা আমাদের ব্যানারও কেড়ে নিয়েছে। পালিয়ে না আসলে তারা হয়তো আমাদের খুন করে ফেলতো।’
তবে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা কারো ওপর হামলা করিনি। আমরা শুধু ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা প্রতিহত করতে অবস্থান নিয়েছি।’
বিডি প্রতিদিন/ ১ জুলাই ২০১৮/ ওয়াসিফ