কোটা সংস্কার আন্দোলনে কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আজ সোমবার পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ মিছিল শাখা ছাত্রলীগের বাঁধায় পণ্ড হয়ে গেছে।
বিক্ষোভ মিছিল শুরুর পূর্ব মুহূর্তে আন্দোনের জাবি শাখার আহবায়ক শাকিলুজ্জামানকে টেনে হিঁচড়ে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সোমবার বেলা ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
‘সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র পূর্ব ঘোষিত আজকের কর্মসূচি প্রতিহত করতে সকাল থেকেই কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান নেয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এছাড়া মোটর সাইকেল যোগে সকাল থেকেই পুরো ক্যাম্পাসে টহল দিতে দেখা যায় তাদের।
সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জাবি শাখার আহবায়ক শাকিলুজ্জামান সকাল ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে প্রবেশ করে সেখানে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের একত্রিত করতে। সেখান থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে জোরপূর্বক টেনে হিচড়ে বের করে নিয়ে আসে। এ সময় কতিপয় শিক্ষার্থী তাকে নিয়ে যেতে বাঁধা দিলে রাসেল আহমেদ (গণিত বিভাগ, ৪৩ তম আবর্তন) নামে এক শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরপর তাকে গ্রন্থাগারের পাশে অবস্থিত চায়ের দোকানে নিয়ে যায় ছাত্রলীগ।
সহকারি প্রক্টর মো. ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়া এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদেরকে অনুরোধ করেন শাকিলকে যেন মারধর করা না হয়। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা এরপর শাকিলকে বটতলায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে তার নিজ আবাসিক হল মওলানা ভাসানী হলে নিয়ে আটকে রাখা হয় বলে জানান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
সর্বশেষ অবস্থা জানতে শাকিলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে, এসব ঘটনায় এবং ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ব্যাপক তৎপরতার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে পূর্ব ঘোষিত বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি আর মাঠে গড়ায়নি।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, “শাকিলকে ছাত্রলীগ তুলে নিয়ে যায়নি। শাকিল তার আবাসিক হল কক্ষে রয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রদল ও শিবিরের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল এমন তথ্য আমাদের কাছে থাকায় ক্যাম্পাসের সার্বিক সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে আমরা সেখানে অবস্থান নিয়েছিলাম। ক্যাম্পাসে যাতে কোন দুষ্কৃতিকারী ছাত্রদল ও শিবির অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে না পারে সেজন্য ভবিষ্যতেও জাবি ছাত্রলীগ সদা তৎপর থাকবে।”
এ বিষয়ে প্রক্টর সিকদার মো. জুলকারনাইন বলেন, “শাকিলকে তুলে নেয়া হয়নি। তার সাথে আমার কথা হয়েছে। যদি এরকম কোন অভিযোগ আসে তবে আমরা ব্যবস্থা নেব।”
এদিকে এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন জাবি সাংস্কৃতিক জোট। সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মো. আশিকুর রহমান বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর এ ধরণের হামলা ক্যাম্পাসের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট করছে। এর প্রতিবাদে সাংস্কৃতিক জোট ও প্রগতিশীল ছাত্র জোটের পক্ষ থেকে সন্ধ্যায় বিক্ষোভ মিছিল করা হবে।”
বিডি প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর