কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও লাঞ্ছনার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহা. ফরিদ উদ্দিন খানের ‘নগ্নপদে নীরব প্রতিবাদ’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে বাধা দেয় প্রশাসন। ঘটনার প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ ও প্রক্টর আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেন।
এদিন সকাল সাড়ে ৮টায় সামাাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘নগ্নপায়ে প্রতিবাদ জানানোর’ স্ট্যাটাস দেন অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহা. ফরিদ উদ্দিন খান। স্ট্যাটাসটি হল- দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং লাঞ্ছনার প্রতিবাদে আজ (মঙ্গলবার) আমি নগ্নপদে অফিসে যাব। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জোহা স্যারের মাজারে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করবো। খালিহাতে, নগ্নপায়ে এবং নীরবে যে কেউ যোগদান করতে পারেন। কোন স্লোগান না, ফেস্টুন না, বক্তৃতা না, না কোনো রাজনীতি। এই নগ্নপায়ে নীরব প্রতিবাদ বোঝাবে আমরা আর সভ্য সমাজের নাগরিক নয় যেখানে বাকস্বাধীনতা আছে সেখানে ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদের সুযোগ আছে।’ পরে অক্ট্রয় মোড়ে অবস্থিত বাসভবন থেকে খালি পায়ে অফিসে আসেন। এরপর স্ট্যাটাসে উল্লেখিত পূর্বঘোষিত জোহা চত্বরে অবস্থান কর্মসূচিতে আসার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি, বিভাগের সভাপতি ও অন্য শিক্ষকরা ওই শিক্ষকের নিজস্ব চেম্বারে অবস্থান করেন এবং তাকে নিষেধ করেন কর্মসূচিতে অংশ নিতে।
সংবাদকর্মীরা ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক কেবিএম মাহবুবুর রহমান বলেন ‘তাকে যেতে দিতে পারছি না। আমাদের অধিকার আছে তাকে বাধা দেয়ার। তার ঝুঁকির কথা বিবেচনা করেই তাকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। এসময় ফরিদ উদ্দিন বলেন ‘স্যার আমাকে পাঁচ মিনিটের জন্য যেতে দেন’। তবে সেখানে উপস্থিত সংবাদকর্মীরা ওই শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি কোন মন্তব্য করেন নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় জোহা চত্বরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব, রায়হানা শামস ইসলাম, ফার্মেসী বিভাগের অধ্যাপক বায়তুল মোকাদ্দেছুর রহমান ও আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ। এসময় চারপাশ থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী এসে জড়ো হতে থাকে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রশাসনের বাধায় শিক্ষকরা চলে গেলেও শিক্ষার্থীরা অবস্থান চালিয়ে যান।
অবস্থানকারী একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে জোহা স্যারের রক্ত মিশে আছে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা, আমরা শিক্ষার্থীরা কোনোভাবে মেনে নিব না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর যেভাবে হামলা করা হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে তার প্রতিবাদে আমরা এই কর্মসূচি পালন করছি। হামলাকারীদের বিচার ও কোটা সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের একজন শিক্ষক ফরিদ খান শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ নীরব প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলেন। তিনি নগ্নপায়ে জোহা চত্বরে এসে এক ঘন্টা নীরবতা পালন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে প্রক্টর ও বিভাগের শিক্ষকরা আটকে রেখেছেন। আমরা এ ঘটনারও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি না আসা পর্যন্ত আমরা প্রশাসন ভবনের সামনেই অবস্থান করব।
মুঠোফোনে ড. মোহা. ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, আমি কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলাম এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম যাওয়ার জন্য। কিন্তু বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক ও প্রশাসনের অনুরোধে যেতে পারিনি বলে লজ্জাবোধ করছি। তবে সবকিছু বিবেচনা করে বুঝেছি আন্দোলনে না যাওয়াই আমার জন্য এবং আমার শিক্ষার্থীদের জন্য ভাল হবে, তাই যেতে পারলাম না।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার