কোটা আন্দোলন নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) এক কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীকে শিবির সন্দেহে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গান গেয়ে তালে তালে তাকে মারধর করে বলে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী জসিম উদ্দীন বিজয় আরবী বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও জাতীয় কবিতা মঞ্চ রাজশাহী’র পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বরে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের ৩০-৪০ জন নেতাকর্মী। এসময় জোহা চত্বরের সামনে দিয়ে যাওয়া যে সব শিক্ষার্থীকে সন্দেহ হচ্ছিল তাদেরকে ডেকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এসময় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী সন্দেহে ৬ শিক্ষার্থীকে সিনেট ভবনের সামনে আটক করে। তাদের মোবাইল ফোন ঘেটে ৫ শিক্ষার্থীকে চড় থাপ্পড় মেরে ছেড়ে দেয়।
এ সময় ভুক্তভোগী জসিম উদ্দীনের ফেইসবুকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে পোস্ট দেখতে পায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদ জানাতে বুধবার আরবী বিভাগের ৩য় বর্ষের নির্ধারিত ইনকোর্স পরীক্ষা বর্জনের স্ট্যাটাস দেয় সে। এই স্ট্যাটাস দেখে পরীক্ষা দেবে না কেন জানতে চেয়ে তাকে শাসায় ও হুমকি দেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এসময় জসিমের সঙ্গে থাকা তার রুমমেট দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে রেখে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাকে সিনেট ভবনের গেটের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ঘিরে ধরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ‘কবে আইবে আমার পালা রে কবে দিমু গলায় মালা রে’ গান গাইতে গাইতে ও হাত তালি দিতে দিতে মারধর করে। পরে তাকে শিবির সন্দেহে প্রক্টরের কাছে তুলে দেয় ছাত্রলীগের নেতারা।
জসিম প্রক্টর দফতরে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি শিবির করি না। কোটা সংস্কার আন্দোলন করার জন্য তারা আমাকে মারধর করেছে।’
জানতে চাইলে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, জসীম প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করেছে। আমরা তাকে পুলিশ ও প্রক্টরের হাতে তুলে দিয়েছি। যারা প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করবে তাদের বিষয়ে কোন ছাড় হবে না। জসীমের শিবির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলেও দাবি করেন ফয়সাল আহমেদ রুনু।
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এক শিক্ষার্থীকে শিবির সন্দেহে পুলিশের কাছে দিয়েছে। প্রক্টর দফতরে নিয়ে এসে তাকে পুলিশে তুলে দেয়া হয়েছে।
নগরীর মতিহার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহাদাত হোসেন জানান, জসীমকে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/০৪ জুলাই, ২০১৮/মাহবুব