জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির চেষ্টাকালে দুই জালিয়াতকে আটক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আটককৃত দুইজনই রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্র এবং সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগর রাজনীতির সাথে জড়িত বলে জানা গেছে।
সোমবার ভর্তি পরীক্ষার ৬ষ্ঠ দিনে কলা ও মানবিকী অনুষদের (সি ইউনিট) ভর্তি পরীক্ষার পূর্বে তাদেরকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হতে তুলে দেয় জাবি শাখা ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা-কর্মী।
আটককৃতরা হলেন জবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আশিক ই আতাহার মেজবাহ। মেজবাহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক। সে ঠাকুরগাঁও জেলার ইসলামবাগের নূর ইসলাম সরকারের পুত্র। অপরজন হলেন জবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী সাকিব উল সাদাত। সে জবি শাখা ছাত্রলীগের কর্মী। তার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর থানায়। তার পিতার নাম মো ফজলুল হক।
এই দুজনের সাথে আনোয়ার হোসেন নামে আরও একজনকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয় জাবি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। জালিয়াতরা যে মাইক্রোবাসে (ঢাকা মেট্রো গ-৩১১৪৪৯) করে জাবিতে আসে আনোয়ার সেই গাড়ির চালক। তবে নিজেকে উবারের গাড়িচালক পরিচয় দিয়ে আনোয়ার বলেন, “সাকিব ও আশিক উবারে ফোন দিয়ে সাড়ে চার হাজার টাকার চুক্তিতে খিঁলগাও থেকে জাহাঙ্গীরনগর এসেছে। তারা কি উদ্দেশ্যে এসেছে তা আমি জানতাম না।”
জাবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও মাওলানা ভাসানী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান নীল জানান, রবিবার দিবাগত রাতে তার এক নিকটাত্মীয় ভর্তিচ্ছুকে কলা ও মানবিকী অনুষদের প্রথম শিফটের (সকাল ৯টা) প্রশ্ন সরবরাহের প্রলোভন দেখায় সাকিব ও মেজবাহ। প্রশ্নের বিনিময়ে সেই ভর্তিচ্ছুর কাছে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করে তারা। বিষয়টি জানতে পেরে নীল সেই ভর্তিচ্ছুকে দিয়ে প্রশ্নফাঁসকারীদের ধরার জন্য ফাঁদ পাতেন। সোমবার ভোর ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় প্রশ্ন সরবরাহ করতে আসে সাকিব ও মেজবাহ। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীটির সহায়তায় নীল ও শাখা ছাত্রলীগের আরো কিছু নেতা-কর্মী তখন তাদেরকে আটক করে।
খবর পেয়ে প্রক্টর ও প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং গাড়িচালক সহ ওই চক্রের তিনজনকেই আটক করেন। তবে এই চক্রের সাথে জাকির ও জেসান নামক আরও দুই সন্দেহভাজন ক্যাম্পাসে আসলেও তারা পালিয়ে যান বলে জানান প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন। সাকিব ও মেজবাহ জানান করেন, তাদের এই জালিয়াতি চক্রের প্রধানই হচ্ছে ওই দুইজন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, “তারা বহুদিন ধরে এই কাজের সাথে জড়িত। তাদের কাছ থেকে কয়েকটি সরকারি পরীক্ষার প্রবেশ পত্র পাওয়া গেছে। এছাড়াও তাদের কাছে ১৪ লাখ টাকার ডাচ বাংলা ব্যাংকের একটি চেকও পাওয়া গেছে।”
প্রক্টর সিকদার মো. জুলকারনাইন বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সার্বিক সহযোগিতায় দুইজন জালিয়াত চক্রের সদস্যকে আটক করেছি। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তাদের বিচার করা হবে।” এখন পর্যন্ত ড্রাইভারসহ জালিয়াত চক্রের তিনজনকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখায় আটক করে রাখা হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/ আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর