ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি হয় বাংলাদেশের বৃহৎ এবং ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়, তবে এর প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশন’ নিশ্চয়ই সবচেয়ে বড় প্রাক্তনীদের সংগঠন।
শনিবার এক বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালিত হলো সংগঠনটির ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বিকেল থেকে সন্ধ্যা জুড়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর সুরের মূর্ছনা, সাবেকদের গুঞ্জরণে অনুষ্ঠানটি ধারণ করে এক ভিন্ন আবহ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র-টিএসসিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়িয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। পরে আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটেন তিনি।
উল্লেখ্য, একই দিনে জন্মেগ্রহণ করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই সাবেক শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠানটি পায় আরেক মাত্রা। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জানিয়ে উপস্থিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন, ডাকসুর সাবেক জিএস ডা. মোশতাক হোসেন, অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি রকীবউদ্দীন আহমেদ, অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি একে আজাদ, মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমরা রাষ্ট্র ভেঙেছি, ছোট করেছি। কিন্তু রাষ্ট্রের পিতৃতান্ত্রিক চরিত্র বদলাতে পারিনি। জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে এই পরিবর্তন আসবে। কিন্তু এর দ্বারা আমরা ব্যক্তিগতভাবে নয়, বরং সমষ্টিগতভাবে সমৃদ্ধ হবো। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের নিপীড়নমূলক চরিত্র বদলিয়ে দেবো। অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের ওপরই এই দায়িত্ব বর্তায়। কেননা তারাই সমাজের অগ্রসর মানুষ। এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপনকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটি ‘গ্রন্থ প্রাঙ্গণ’ ও সংগ্রামের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য ‘মুক্তি-সংগ্রাম সংরক্ষণশালা’ গড়ে তোলার প্রস্তাব করেন।
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ের প্রথম মানদণ্ড থাকে শিক্ষকদের গবেষণার মান, সাইটেশন কতটা ভালো। ফলে সহজেই বোঝা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা কতটা ভালো শিক্ষক পাচ্ছি। এসময় তিনি গবেষণায় সহায়তায় অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে একটা টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব করেন।
উদ্বোধনকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দিনটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অ্যালামনাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন। অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের দীর্ঘ পথচলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে যেভাবে কাজ করে চলেছে আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে।
অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি একে আজাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইয়ের তুলনায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে রয়েছে। তবুও আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তন সংস্কার, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, লাইব্রেরী সংস্কারে উদ্যোগ নিয়েছি। আগামীতে র্যাংকিংয়ে উন্নতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে উদ্যোগ নিবো আমরা।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন