১৮ নভেম্বর, ২০১৯ ২২:২৬

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে মেডিকেল শিক্ষার্থীসহ আটক ২

নাঈম আবদুল্লাহ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে মেডিকেল শিক্ষার্থীসহ আটক ২

আটক নওশিন সায়েরা অদ্রি ও হিল্লোল বিশ্বাস। পাশে জালিয়াতির কাছে ব্যবহৃত সিল, ছবি, আইডি কার্ড।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীর ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে দুইজন আটক হয়েছেন। সোমবার দুপুরে তাদের আটক করা হয়। 

আটকরা হলেন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নওশিন সায়েরা অদ্রি ও মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কৃত মো. হিল্লোল বিশ্বাস। 

জালিয়াত চক্রের সদস্য নওশিন সায়েরা অদ্রি ময়মনসিংহের আকোয়ার সাইফুল ইসলামের মেয়ে। তিনি ফারহানা তাজমিম কণার হয়ে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন, যার পরীক্ষার রোল ১৮৬৭৭। নওশিন সায়েরা অদ্রিকে অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে নিয়ে আসেন মাগুরার হারুনুর রশিদের ছেলে হিল্লোল বিশ্বাস। তিনি মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তবে ২০১৮ সালে ভর্তি জালিয়াতি ও র‍্যাগিংয়ের দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার হন হিল্লোল। 

আটক নওশিন সায়েরা অদ্রি ও মো. হিল্লোল বিশ্বাস ভর্তি জালিয়াতি চক্রের সদস্য বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন বলে জানা গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেন, সারাদেশে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকার মাধ্যমে অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিয়ে থাকেন তারা। প্রতিটি পরীক্ষার জন্য তারা দুই লাখ টাকা থেকে শুরু করে চার-পাঁচ লাখ টাকা আদায় নেন। চলতি বছরেই এভাবে তাদের এই জালিয়াত চক্র প্রায় এক কোটি টাকা আয় করেছে বলেও স্বীকার করেন তারা।

জানা যায়, এই চক্রটি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যের হয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। প্রতিটি পরীক্ষাতেই ভর্তিচ্ছুদের মেধা তালিকায় নাম এনে দিয়েছে চক্রটি। এছাড়া প্রাইমারি নিয়োগ পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ব্যাংকেও অন্যের হয়ে পরীক্ষা দেন তারা। 

চক্রের মূল হোতা হিল্লোল বলেন- এই চক্রের সঙ্গে অনেকেই জড়িত। তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ও মেডিকেলে পড়াশুনা করেন। 

এ সময় আটকদের কাছ থেকে ২টি মোবাইল ফোন, প্রায় ২৫টি এডিটেড ছবি, কয়েকটি আইডি কার্ড, একাধিক সিমকার্ড, ডাচ বাংলা ব্যাংকের একটি এটিএম কার্ড ও মাদকসেবনের উপকরণ পাওয়া যায়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর উজ্জ্বল কুমার প্রধান জানান, ‘বি’ ইউনিটের বিকাল শিফটের পরীক্ষা শুরুর আগে দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবকরা সন্দেহভাজনভাবে তাদের আটক করে প্রক্টরিয়াল বডির হাতে সোপর্দ করে। পরে তাদের আইনের আওতায় এনে যথার্থ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। 

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসেই ভ্রাম্যমান আদালতে বিচারকার্য চলছিল। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ত্রিশাল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এরশাদ উদ্দিন।   

উল্লেখ্য, ১৯ নভেম্বর ‘সি’ ইউনিট, ২০ নভেম্বর ‘ডি’ ইউনিট এবং ২১ নভেম্বর ‘ই’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট যে কোনো তথ্যসমূহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট এ পাওয়া যাবে।

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর