২৬ অক্টোবর, ২০২০ ১১:৫৪

ইউজিসি'র সিদ্ধান্তকে 'বৃদ্ধাঙ্গুল' দেখাচ্ছে রাবি প্রশাসন

রাবি প্রতিনিধি

ইউজিসি'র সিদ্ধান্তকে 'বৃদ্ধাঙ্গুল' দেখাচ্ছে রাবি প্রশাসন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) মাস্টাররোলে (দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে) ৪০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী (মেথর) নিয়োগের 'প্যানেল' (তালিকাভুক্তি) তৈরি করার জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইতোমধ্যে ওই পদে নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষাসহ সব প্রক্রিয়া শেষ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এটি বর্তমানে সিন্ডিকেটে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার বলছেন, স্থায়ী পদের বিপরীতে মাস্টাররোলে এ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

অথচ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদিত স্থায়ী পদে মাস্টাররোলে নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম নেই। এভাবে নিয়োগের বিষয়ে ইউজিসিকে জানায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমনকি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনকারীর ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর উল্লেখ করলেও সর্বোচ্চ বয়সসীমা রাখা হয়নি।

এমন নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইউজিসির সিদ্ধান্তকে 'বৃদ্ধাঙ্গুল' দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপকরা।

স্থায়ী পদের বিপরীতে একসঙ্গে ৪০ জন মাস্টাররোল কর্মচারীর নিয়োগকে 'বিধিবহির্ভূত' ও 'উদ্দেশ্যমূলক' বলছেন তারা। এছাড়া নিয়োগের প্যানেল সৃষ্টি ও বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মাস্টাররোল কর্মচারী নিয়োগকে নজিরবিহীনও বলেছেন শিক্ষকরা। আবেদনের সর্বোচ্চ বয়স সীমা না থাকায় এ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ফলে ওই নিয়োগ বাতিলের দাবি করেছেন শিক্ষকরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপকরা বলছেন, ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিভিন্ন খাতে চাহিদা মোতাবেক অর্থ দেয়। জরুরি প্রয়োজনে মাস্টাররোলে দু-একটি নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু স্থায়ী পদের বিপরীতে প্যানেল করে মাস্টাররোলে নিয়োগের বিধান নেই। এভাবে মাস্টাররোলে ৪০ জনের বিশাল নিয়োগ দিলে আর্থিক এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। এতে অনেক সময় স্বজনপ্রীতি এবং আর্থিক লেনদেনের সুযোগ থাকে।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর মাস্টাররোলে ৪০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগের প্যানেল তৈরির জন্য ৩/২০১৯ (সাধারণ) নম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে ৭ ডিসেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আবেদন করতে বলা হয়। পরে আবেদন প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের শুরুর দিকে যোগ্য প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে এ নিয়োগ সিন্ডিকেট‌ সভায় অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হয়নি।

বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন যোগ্যতার বিষয়ে বলা হয়, প্রার্থীদের ন্যুনতম অষ্টম শ্রেণি/জেএসসি/করে সমমান পাস হতে হবে। বয়স ন্যুনতম ১৮ বছর হতে হবে। প্রার্থীদের অবশ্যই হরিজন সম্প্রদায়ভুক্ত হতে হবে এবং এর প্রমাণপত্র থাকতে হবে। কোটার ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, মাস্টাররোলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী পদের বিপরীতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তাই ইউজিসির অনুমোদন লাগবে না। কিন্তু ইউজিসি বলছে, স্থায়ী পদের বিপরীতে মাস্টাররোল কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। স্থায়ী পদের বিপরীতে স্থায়ীভাবেই নিয়োগ দিতে হবে।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারী বলেন, এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী পদ। শূন্য পদে নিয়োগ দিতে গেলে ইউজিসির অনুমোদন লাগতো। আমরা স্থায়ী পদের বিপরীতে নিয়োগ দিচ্ছি; তাহলে এখানে অনুমোদন কেন লাগবে?

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম বলছেন, স্থায়ী পদে মাস্টাররোলে বা এডহকে নিয়োগ দেওয়া যাবে না, স্থায়ী পদে স্থায়ী নিয়োগই দিতে হবে। নিয়োগের পর ইউজিসিকে অবহিত করার পর তাদের বেতন-ভাতাদি ইউজিসি থেকে বরাদ্দ হবে।

তিনি আরও বলেন, ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো নিয়োগ দেওয়া যাবে না। মাস্টারোল ও এডহকে নিয়োগ দিতে গেলেও ইউজিসির অনুমোদন লাগবে। অন্যথায় আর্থিক বিশৃঙ্খলার মত সমস্যা তৈরি হতে পারে

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মাস্টাররোলে নিয়োগ হয় না। স্থায়ী পদে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগ হয়। জরুরি প্রয়োজনে মাস্টাররোলে দু-একটি নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এভাবে যদি বিশাল নিয়োগ দেওয়া হয়ে যায় আর্থিক এবং প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। স্থায়ী পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্যানেল করা যেতে পারে, কোনো প্রার্থী না এলে যেন অন্যদের ডাকা যায়। মাস্টাররোলে নিয়োগে প্যানেল করা হয় না। এভাবে নিয়োগ দিতে গেলে অনেক সময় স্বজনপ্রীতি এবং আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ এসে যায়।


বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর