১১ মে, ২০২১ ০৮:৫৮

‘অসত্য তথ্যে’ রাবির সাবেক উপ-উপাচার্যকে লিগ্যাল নোটিশ

রাবি প্রতিনিধি

‘অসত্য তথ্যে’ রাবির সাবেক উপ-উপাচার্যকে লিগ্যাল নোটিশ

রাবির সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) জমি ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগে পৃথক দুটি তদন্ত করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ২০১৭ সালে করা তদন্তগুলোর কোনোটিতেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তা সত্ত্বেও গত চার বছরে নানা অজুহাতে এই ইস্যুকে সামনে এনে একটি পক্ষকে সক্রিয় হতে দেখা গেছে।

সম্প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়ে ফের এই ইস্যুকে সামনে আনলেন এক আইনজীবী। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদায়ী উপাচার্য এম আব্দুস সোবহানের অনিয়ম ঢাকতে ও উপাচার্য নিয়োগকে সামনে রেখে অপপ্রচার চালানোর উদ্দেশ্যেই এই নোটিশ। গত ৭ মে নোটিশটি রাবি উপাচার্যকে পাঠান ঢাকা জজকোর্টের এক আইনজীবী।

নোটিশে বলা হয়, ঢাকাস্থ অতিথি ভবনের জমি ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তৎকালীন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহানসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা ও ‘আত্মসাৎকৃত’ অর্থ ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

তবে নথিপত্র ও তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাড়ি কেনায় অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ নেই। নোটিশটি এমন সময়ে এলো যখন সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিদায়কালে ১৩৭ জনকে অবৈধ নিয়োগ দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তের মুখোমুখি বিদায়ী উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দীন প্রশাসনের মেয়াদ শেষের দিকে অতিথি ভবন ক্রয়ে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। সেসময় ক্যাম্পাসে গুঞ্জন ওঠে চৌধুরী সারওয়ার জাহানের উপাচার্য হওয়া ঠেকাতেই শেষ মুহূর্তে এমন অভিযোগ তোলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে আদালতের আদেশে দুদক বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে। এই তদন্তে আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানা যায়।

পরে একই বছর এম আব্দুস সোবহান উপাচার্য হওয়ার পরপরই তিনি সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে একটি তত্ত্ব অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন। কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম কবীরকে আহ্বায়ক এবং অধ্যাপক আবু বকর মো. ইসমাইল ও বর্তমান উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়াকে সদস্য করা হয়। এই কমিটিও অনুসন্ধান করে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পায়নি।

এই বিষয়ে অধ্যাপক গোলাম কবির বলেন, অতিথি ভবনের জমিটিতে অংশীদারিত্ব নিয়ে সমস্যা ছিল। প্রচলিত বিধি মেনে ক্রয় করা হয়নি। ফলে জটিলতার সৃষ্টি হয়। তবে আর্থিক অনিয়ম বা অর্থ আত্মসাতের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আমরা সেভাবেই রিপোর্ট জমা দিয়েছি।

নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৫ সালে তৎকালীন উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, হিসাব পরিচালক, প্রধান প্রকৌশলী ও ইউজিসি’র হিসাব পরিচালককে সদস্য করে অতিথি ভবন ক্রয়ের কমিটি করা হয়। কমিটি পত্রিকায় উন্মুক্ত দরপত্র প্রকাশের মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তবে সেই প্রতিষ্ঠান দরপত্রের গুরুত্বপূর্ণ কিছু শর্ত পূরণ করতে না পারায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী কয়েক ধাপে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের অর্থ পরিশোধ করা হয়।
 
এই বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক উপ-উপাচার্য চৌধুরী সারওয়ার জাহান দাবি করে বলেন, বাড়িসহ জমিটি কেনায় উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। নিয়ম মোতাবেক কোষাধ্যক্ষের মাধ্যমে জমির মালিককে চেক দিয়ে অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। যে টাকায় জমি কেনা হয়েছে তা ওই এলাকার জমির তুলনায় কম দামে পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ সাশ্রয় করতে পেরেছি। দুদকের তদন্তেও সেটি উঠে এসেছে। আমরা দুদককে অর্থ সংক্রান্ত সব কিছুর কাগজসহ বিস্তারিত জানিয়েছি।

এদিকে, এই নোটিশটি এমন সময় পাঠানো হলো যখন সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিদায়কালে বিদায়ী উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান ১৩৭ জনকে অবৈধ নিয়োগ দিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন। এই নিয়োগ দিয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের তদন্তের মুখে রয়েছেন তিনি। এর আগে ইউজিসির তদন্তে তার বিরুদ্ধে ওঠা নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ মেলে। উপাচার্য পদ খালি হওয়ার পরপরই অসত্য তথ্যে সাবেক উপ-উপাচার্য চৌধুরী সারওয়ার জাহানের বিরুদ্ধে উকিল নোটিশ পাঠানো হলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা এই নোটিশকে সদ্য সাবেক উপাচার্য আব্দুস সোবহানের অনিয়মের ওপর থেকে মিডিয়ার চোখ সরানোর চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করেন, অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহানের উপাচার্য হওয়া ঠেকানোতেই অপপ্রচার উস্কে দেওয়াই এই নোটিশের উদ্দেশ্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম টিপু বলেন, এম আব্দুস সোবহান অনিয়ম ও দুর্নীতি করে ক্যাম্পাস ছাড়ার পর নতুন করে এসব দেখে মনে হচ্ছে এর পেছনে কোনো হীনস্বার্থ থাকতে পারে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর