ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হল না খুলে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তকে শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রশাসনের চরম দায়িত্বহীনতা বলে মন্তব্য করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের নেওয়া এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল খুলে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
বুধবার সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমা এক যুক্ত বিবৃতিতে এই দাবি জানান।
এতে বলা হয়, এরূপ (হল না খুলে পরীক্ষা) সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরুপে অগণতান্ত্রিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন। সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে প্রশাসন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আবাসনের কোনো ব্যবস্থার কথা বলেনি। পরীক্ষার্থীদের জন্য হল খুলে দেওয়ার কথা বলেনি। আমরা জানি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধেক শিক্ষার্থী হলে থাকে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা কীভাবে থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে এ নিয়ে প্রশাসনের কোনো মাথা ব্যথা নেই। শিক্ষার্থীদের কাঁধে আবাসনের দায়িত্ব চাপিয়ে প্রশাসন চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ‘শুধুমাত্র পরীক্ষা চলাকালীন অর্থাৎ একমাস বা দুই মাসের জন্য ঢাকায় বাসা পাওয়া খুবই দুরূহ। স্বল্প সময়ের জন্য বাড়িওয়ালারা ভাড়া দিতে চায় না। তাছাড়া সব শিক্ষার্থীর আত্মীয়-স্বজনও ঢাকায় থাকে না যে তাদের বাসায় থেকে পরীক্ষা দেবে। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেবে, নাকি দ্বারে দ্বারে গিয়ে বাসা খুঁজে হয়রান হবে। এছাড়া, করোনা মহামারির কারণে অনেক শিক্ষার্থীর পরিবার আর্থিক সংকটেও রয়েছে, অনেক শিক্ষার্থী টিউশন হারিয়ে ফেলেছে। ফলে তাদের পক্ষে ঢাকায় বাসা ভাড়া নেওয়া অসম্ভব। শিক্ষার্থীদের এত এত দুর্ভোগ ও অসহায়ত্বের কথা জেনেও প্রশাসন অবিবেচকের মতো হল না খুলে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ধিক্কার জানাই।’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভায় হল না খোলার শর্তে অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ের স্থগিত সব পরীক্ষা আগামী ১৫ জুন থেকে সশরীরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই শর্তে অন্যান্য সেমিস্টার ফাইনাল, বার্ষিক কোর্স ফাইনাল ও ব্যবহারিক পরীক্ষাসমূহ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগামী ১ জুলাই থেকে শুরুর কথাও জানানো হয়।
প্রতি শিক্ষার্থীর আবাসনের বিপরীতে প্রণোদনা দাবি : অনলাইনে অ্যাসাইনমেন্ট আকারে পরীক্ষা গ্রহণ কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবাসিক হল খুলে দেওয়া না গেলে প্রতি পরীক্ষার্থীর বিপরীতে আবাসন বাবদ প্রণোদনার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল।
বুধবার সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি গৌতম চন্দ্র শীল ও সাধারণ সম্পাদক মো. মাহফুজুর রহমান রাহাত এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক বিপর্যয়, অপরদিকে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী এলাকায় সাময়িক সময়ের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা এবং ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়ায় গণপরিবহন ব্যবহার করে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অমানবিক, এই সময়ে ‘অমানবিকতর’ একটি সিদ্ধান্ত বলে আমরা মনে করি। এমতাবস্থায় অনলাইনে অ্যাসাইনমেন্ট আকারে পরীক্ষা গ্রহণ কিংবা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবাসিক হল খুলে দেওয়াই হতে পারে উত্তম বিকল্প। অন্যথায় প্রতি পরীক্ষার্থীর বিপরীতে আবাসন বাবদ প্রণোদনার ব্যবস্থা করার দাবি জানাই।
বিডি প্রতিদিন/এমআই