বিশ্বের সর্ববৃহৎ টেকনোলজি জায়ান্ট ‘গুগল’ এ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরির সুযোগ পেয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবু সায়েম সেফাতুল্লাহ। আগামী সেপ্টেম্বরে পোল্যান্ডে গুগল ক্লাউন রিজিওনে যোগ দেবেন তিনি।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই কিংবা সহপাঠী বিশ্বের খ্যাতনামা কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ পাওয়ায় খুশি অন্যান্য শিক্ষার্থীরা। এই অর্জন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে অনন্য উচ্চতায় আসীন করবে এবং এর মাধ্যমে অন্য শিক্ষার্থীরা ও অনুপ্রাণিত হবে বলে আশা করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সন্তানের স্বপ্নকে গুরুত্ব দেয়ায় আজ এই সাফল্য এসেছে বলে জানিয়েছেন তার বাবা।
গত ৮ এপ্রিল ই-মেইলের মাধ্যমে গুগল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরির অফার লেটার হাতে পান আবু সায়েম সেফাতুল্লাহ। এ খবর মুহূর্তেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী এবং বড় ও ছোট ভাইসহ শিক্ষক, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের শুভেচ্ছা আর অভিনন্দনে সিক্ত হন সায়েম। তিনি জানান, গুগল যে ই-মেইলে পাঠিয়েছে সেটা মেনে নিয়ে আগামী সেপ্টেম্বরে পোল্যান্ডে গুগল ক্লাউড রিজিওনে যোগদান করার সুযোগ আছে। আবার ওই প্রস্তাবে রাজি না হলে কর্মস্থল এবং বেতন-ভাতা নিয়ে দর কষাকষির সুযোগও রয়েছে। বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত করেননি তিনি। তবে গুগলের চাকরির প্রস্তাব আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে তাকে।
তিনি আরও বলেন, গত নভেম্বরে গুগলে তার সাক্ষাৎকার পর্ব শুরু হয়। গত ৫ মাসে ৭ ধাপে সাক্ষাৎকার দিয়ে ৮ এপ্রিল বিকেলে গুগল থেকে চূড়ান্তভাবে চাকরির প্রস্তাব পেয়েছেন।
আবু সায়েম বলেন, সব বাধা এবং প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়েই সিএসই বিভাগে পড়ালেখা করেছি।
সায়েমের সহপাঠী শ্রাবনা সরকার বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর গুগলে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি পাওয়াটা সত্যিই গৌরবের বিষয়। ভবিষ্যতে তিনিসহ অন্য শিক্ষার্থীরা বিশ্বের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ পেলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়বে।
আরেক শিক্ষার্থী রাফিউল গনি রায়হান বলেন, আমাদের বড় ভাই গুগলে চান্স পেয়েছে। এটা সত্যি আনন্দদায়ক। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই প্রথম কেউ গুগলে চান্স পেলো। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামের জন্যও ভালো। এই সাফল্য পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে একধাপ এগিয়ে নেবে এবং এর মাধ্যমে নতুন শিক্ষার্থীরা উৎসাহ-অনুপ্রেরণা পাবে বলে তিনি মনে করেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান এমডি ইরফান বলেন, সায়েম পারবে বলে তাদের বিশ্বাস ছিলো। তার মধ্যে সেই প্রতিভা আছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও গুণগত মানের শিক্ষা এবং সব ধরনের গবেষণা দিয়ে তাকে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। তার সাফল্যের খবরে শিক্ষকরা আনন্দে আপ্লুত। সায়েম বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি করার দুয়ার খুলে দিয়েছে। তার এই অর্জন অনুজ শিক্ষার্থীদের দারুণভাবে উৎসাহিত করবে।
সায়েমের বাবা মো. ফারুক হোসেন তালুকদার বলেন, ইচ্ছে ছিলো ছেলেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। টেক্সটাইলে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেয়েও ভর্তি হয়নি। পরে মেরিন একাডেমিতে ভর্তির কথা বলা হলেও সে ভর্তি ফরমই কেনেনি। তার এক কথা পড়তে হলে সিএসই বিভাগ নিয়েই পড়বো। শেষ পর্যন্ত তার নিজের ইচ্ছের মূল্যায়ন করেছে পরিবার। পরিবার এবং শিক্ষকদের সহায়তায় আজ স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে তার।
তিনি বলেন, আমরা অনেক সময় নিজেদের ইচ্ছে সন্তানদের উপর চাপিয়ে দেই। সেটা না করে বরং সন্তানের ইচ্ছে পূরনের সুযোগ দিতে হবে। তাহলেই লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে তারা।
সায়েমের বাড়ি ঝালকাঠীর নলছিটি পৌর শহরে। থাকেন নগরীর রূপাতলী এলাকার ভাড়া বাসায়। বাবা ফারুক হোসেন তালুকদার সেনাবাহিনী থেকে অবসরগ্রহণের পর একটি ওষুধ কোম্পানিতে বেশ কয়েক বছর চাকরি করেন। গত জানুয়ারিতে সেখান থেকেও অবসর নেন তিনি। সায়েমের মা একজন গৃহিনী। ২ ভাই এবং এক বোনের মধ্যে মেঝ সায়েম। বড় বোন ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করে। ছোট ভাই বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র।