গ্রীষ্মের দাবদাহে শহুরে প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত, প্রখর সূর্যতাপে বৃষ্টির হাহাকার, তখনই এক পশলা শান্তির বার্তা নিয়ে ধরা মাঝে আবির্ভূত হয়েছে বাংলাপঞ্জির আরেকটি বছর। নববর্ষের আনন্দবর্ষণে তাই কমতি নেই এতটুকু। নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে নাগরিক প্রাণ অংশ নিয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রায়। কণ্ঠে বিশ্বশান্তির নিয়ত প্রার্থনা - ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’।
বিগত কয়েক দশক ধরে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। দেশের শিল্পচর্চার প্রাণকেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বর্ণিল শোভাযাত্রা ছাড়া নবর্বষ উদযাপন যেন অকল্পনীয়। এ বছরও হয়নি কোনো ব্যতয়। বিগত তিন বছর করোনার কারণে সংক্ষিপ্ত পরিসরে আয়োজন করা হলেও এবছর কমতি ছিলো না আয়োজনে।
সকালে চারুকলা প্রাঙ্গণ থেকে ঢাকার রাজপথে নামে মঙ্গল শোভাযাত্রা। মিছিলের সাথে সাথে চলে ডোরা কাটা বাঘ, মেটে রঙা ভেড়া, কালো হাতি, নীল গাই আর সাদা ময়ূর। টেপা পুতুল মায়ের কোলে সঙ্গী হয়ে এসেছিলো শিশু। বাদ্যের তালে তালে নেচে-গেয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন সব বয়সের, সব শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ। পরনে বাসন্তীরঙ্গা পোষাক, মাথায় ফুল, গালে আলপনা।
শোভাযাত্রায় ঢাকা বিম্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে অংশ নেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান প্রমুখ। শাহবাগ মোড় ঘুরে আবারও চারুকলা অনুষদে গিয়ে তা শেষ হয়।
শোভাযাত্রা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রা আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এখন এটি ওয়ার্ল্ড মেমোরি অব হেরিটেজের অন্তর্ভুক্ত। ফলে এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের, বিশ্বের প্রতিটি জনগোষ্ঠীর এটি অসাধারণ সম্পদ। সেটির রক্ষণাবেক্ষণ, সেটি সংরক্ষণ ও সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া এখন সকলের সম্মিলিত দায়িত্ব। এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টি ও দর্শনের প্রতিফলন। এটি অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার বার্তা দেয়। যে আতঙ্ক ছিল, সেটির প্রতিবাদে সকল মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। সকল ধরনের উগ্রবাদ, সা¤প্রতিকতার বিরুদ্ধে এটি একটি প্রতিবাদ।
শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, প্রত্যাশা ও সফলতার বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩০। মঙ্গল শোভাযাত্রা আমাদের সাংষ্কৃতিক ঐতিহ্য। ইউনেস্কোর ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হয়েছে। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা হয়েছে। জাতির পিতা যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন।
এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ আয়োজনে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এছাড়াও স্বোপার্জিত স্বাধীনতা প্রাঙ্গণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে খেলাঘর ঢাকা মহানগর কমিটি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল