রংপুর অঞ্চলে আগাম আমন ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। ধানের দামও ভাল। সেই সাথে ধানের খড়েরও চাহিদা বেড়েছে। খড়ের ভালো দাম পেয়ে কৃষকরা খুশি। আগাম ধান এবং খড় বিক্রি করে রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের ঘরে উঠবে আড়াই হাজার কোটি টাকার ওপরে। চলিত মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার আগাম আমন ধান উৎপাদন হওয়ার আশা করছে কৃষি বিভাগ। একই ধানের খড় বিক্রি করে কৃষকদের বাড়তি আয় হবে আরও ৫০০ কোটি টাকার বেশি।
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন ২০ আটির বোঝা ২২০-২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন ২০টি আটি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। বিক্রেতা আল আমি জানালেন, নতুন ধানের সাথে সাথে খড়ের দাম ভাল পাওয়ায় তিনি খুশি।
ক্রেতা রানা মিয়া বলেন, গো খাদ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে এই অবস্থায় খড়ই গরুর জন্য উত্তম খাদ্য। তবে দাম একটু বেশি হওয়া গবাদিপশুর খাদ্য যোগান দিতে খরচ বাড়ছে।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক দোন জমিতে (২৪ শতক) খড় পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ আটি। সেই হিসেবে এক একর জমিতে ২ হাজার আটি। এক হেক্টরে সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার খড়ের আটি পাওয়া যাবে। আটি প্রতি হাজার বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা করে। সেই হিসেবে প্রতি হেক্টরে আটি বিক্রি করে কৃষকদের আয় হবে ৩০ থেকে ৩৪ হাজার টাকা। সেই হিসেবে এক লাখ হেক্টরে ধানের আটি বিক্রি করে আয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ওপরে।
অপরদিকে চলতি মৌসুমে রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও নীলফামারী জেলায় বিনা-৭ ব্রি -৩৩, ৩৯, ৫৬, ৫৭ ও ৬২, ৭১.৭৫, ৮৭, ১০৩ সহ হাইব্রিড ধান উৎপাদন হয়েছে এক লাখ হেক্টরের ওপরে। বিনা-৭ ও ১৭ ধানও হচ্ছে এই সময়ে। ১২০ দিনের মধ্যে এসব ধান ঘরে তোলা যায়। বলা চলে এই অঞ্চলে এখন আগাম ধান কাটা মাড়াইয়ের পুরো মৌসুম চলছে। ফলন হয়েছে প্রতি হেক্টরের গড়ে প্রায় ৪ মেট্রিক টন। এই পরিমান জমি থেকে ৪ লাখ মেট্রিক টনের বেশি ধান উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। এই অঞ্চলের ৫ জেলায় সোয়া ৬ লাখ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে আগাম ধান রয়েছে এক লাখ হেক্টরের ওপরে। বাজারে প্রতিমন ধান বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত। সেই হিসেবে এক টন ধানের দাম ৩৫ হাজার টাকা।
কৃষি অফিস জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষিক্ষেত্রে নিত্য নতুন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এজন্য জলবায়ুর প্রতিঘাত সহনশীল জাতগুলো চাষের প্রতি বেশি জোর দেয়া হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল ও খরা সহিষ্ণু বিনাধান-১৭ স্বল্পজীবন মেয়াদী হওয়ার এ ধান কেটে এ অঞ্চলের কৃষকরা সহজেই গম-সরিষা বা আলু আবাদে যেতে পারবেন। বিনাধান-১৭ উচ্চ ফলনশীল এবং জীবনকাল কম হওয়ায় শস্যেও নিবিড়তা বাড়ানোর জন্য খুবই কার্যকর। অন্য জাতের তুলনায় এ জাত চাষে প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ কম সার ও সেচ লাগে।
কাউনিয়া উপজেলার কৃষক আসাদুজ্জামান আসাদসহ অনেকেই জানান, এক হাজার খড় বিক্রি করঝেন ৭ থেকে ৮ হাজার টাকায়। খড়ের দাম ভাল হওয়ায় তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
কয়েক বছর আগেও আগাম জাতের ধান চাষের কথা চিন্তা করা যেত না। কিন্তু কয়েক বছর থেকে আগাম ধান চাষ করে তারা অভাব ঘুচিয়েছেন।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক সিরাহুল ইসলাম বলেন, আগাম জাতের ধান এই অঞ্চলের অর্থনীতিকে গতিশীল রেখেছে। প্রতিবছরই এই ধান চাষ বাড়ছে। এবারে ধানের সাথে কৃষকরা খড়ের বেশি দাম পাচ্ছেন।
বিডি-প্রতিদিন/জামশেদ