জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) গণরুম বিলুপ্তিসহ তিন দফা দাবিতে অনশনকারী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ প্রগতিশীল কয়েকজন শিক্ষার্থীর উপর অতর্কিত হামলার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।
হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি শৌমিক বাগচি, ৪৭ ব্যাচের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের মনিকা, ৪৮ ব্যাচের বঙ্গবন্ধু ও তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী সুরসহ ৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
বুধবার (০৬ জুন) দিবাগত রাত এগারোটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণরুমের বিলুপ্তি, আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের উচ্ছেদ ও বৈধ শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিতের দাবিতে মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে অনশন করে আসছেন ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়। বুধবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে বিদ্যুৎ চলে গেলে হঠাৎ ওই হলের ছাত্রলীগ নেতা মুরাদ (সহ-সম্পাদক), তারেক মীর (সহসম্পাদক), রাব্বির (কার্যকরী সদস্য) নেতৃত্বে গৌতম কুমার দাস (দর্শন, ৪৫), সৌমিক (৪৫), সজীব (৪৫), তুষার (ফার্মেসি, ৪৫), ফেরদৌস (ফার্মেসি, ৪৫), গোলাম রাব্বী (ইংরেজি ৪৫) নোবেল (বাংলা, ৪৩), মুরসালিন (৪৬), সোহেল (ইংরেজি ৪৬), তানভীর (৪৬), রায়হান (৪৬), নাফিস (৪৬) সহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজন অনশনকারী প্রত্যয় ও তার সাথে থাকা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে।
একপর্যায়ে অনশনরত শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে মেডিকেলে পাঠিয়ে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় বাঁধা দিতে গেলে সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচীকে মারধর করা হয়। এছাড়া ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ, মাশিয়াত সৃষ্টি, মনিকা নকরেক এবং শারমিন সুরকে হেনস্তা করা হয়। হামলায় জড়িতদের অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত বলে জানা যায়। এ ঘটনায় আহতদের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর আগে, সন্ধ্যায় মীর মোশররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আলম এবং হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়ে অছাত্রদের তালিকা করতে যান। তার প্রেক্ষিতে ছাত্রলীগের নেতারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক সাব্বির আলম বলেন, এটা একটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এদেরকে চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ঘটনা শুনে এসেছি। এখানে যেসব শিক্ষার্থী হামলা করেছে তাদেরকে আমরা শনাক্ত করতে পারেনি। কারা হামলা করেছে আমরা তদন্ত করে বের করে ব্যবস্থা নেব।
এদিকে, এ ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে রাত বারোটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ