কোথাও চলছে রাস্তা প্রশস্তকরণ, আবার কোথাও ড্রেন নির্মাণ। ছড়া খাল উদ্ধারেও চলমান রয়েছে খনন ও সংস্কার কাজ। এছাড়াও চলমান উন্নয়ন কাজের মধ্যে রয়েছে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের লাইন সঞ্চালন, বাস টার্মিনাল ও ডাম্পিং গ্রাউন্ড উন্নয়ন, সুইপার কলোনি নির্মাণ, সৌন্দর্যবর্ধন এবং নানা ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ। সবমিলিয়ে সিলেট নগরীতে বর্তমানে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার উন্নয়নযজ্ঞ চলমান।
কিন্তু ঠিকাদারদের গাফিলতি ও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে এসব উন্নয়ন কাজ চলছে ধীরগতিতে। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসব উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়া নিয়েও নগরবাসীর মাঝে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। কাজে ধীরগতি দেখা দেওয়ায় বাড়ছে নাগরিক দুর্ভোগও। বৃষ্টিপাতের কারণে কাজে ধীরগতির কথা স্বীকার করছে নগর কর্তৃপক্ষ। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চলমান উন্নয়ন কাজ শেষ করার ব্যাপারে আশাবাদী তারা।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে সিলেট নগরীর আম্বরখানা থেকে কোর্ট পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তার নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন নেয়ার কাজ শুরু হয়। গত ৬ মাসেও শেষ হয়নি লাইন টানার কাজ। ফলে দীর্ঘ এই সময় ধরে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া নগরীর ব্যস্ততম জিন্দাবাজার, বারুতখানা ও মজুমদারিসহ বিভিন্ন এলাকায় চলছে প্রায় ৬ মাস ধরে রাস্তা সম্প্রসারণ ও ড্রেন নির্মাণের কাজ। রাস্তার উপর নির্মাণ সামগ্রী রাখায় এখন গুরুত্বপূর্ণ এসব এলাকায় প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হয়। ছড়া খাল উদ্ধার ও সংস্কার কাজও বর্ষার আগে শেষ করতে পারেনি সিটি করপোরেশন।
নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনের আওতায় ভারত সরকারের অর্থায়নে প্রায় এক বছর পূর্বে শুরু হয়েছিল নগরীর ধোপাদিঘী সংস্কার ও চারপাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজ। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর সিকিভাগ কাজও শেষ হয়নি। অপরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু করায় কাজে এ ধীরগতি দেখা দিয়েছে বলেও নগর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেছে।
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এমজিএসপি’র আওতায় ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল আধুনিকায়ন, ৬০ কোটি টাকায় দক্ষিণ সুরমার পারাইরচকে ডাম্পিং ইয়ার্ড উন্নয়ন, ৩০ কোটি টাকায় রাস্তা ও ড্রেন উন্নয়নের কাজ চলছে। ধোপাদিঘী সংরক্ষণ, চারদিকে ওয়াকওয়ে নির্মাণ, নগরীর চারাদিঘীরপাড়ে ৬ তলা স্কুল ভবন নির্মাণ ও কাস্টঘরে ৬ তলা সুইপার কলোনি নির্মাণের জন্য ভারতীয় সরকার বরাদ্দ দিয়েছে ২১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। কিন্তু একবছরেও এই কাজের সিকিভাগও শেষ হয়নি। ছড়া খাল সংস্কার ও খনন প্রকল্পের জন্য ৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ পেলেও বন্ধ রয়েছে এই প্রকল্পের কাজ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে রাস্তা, ড্রেন ও ডিভাইডার নির্মাণ এবং জলাশয় সংরক্ষণের জন্য সিটি করপোরেশনকে বরাদ্দ দেয়া হয় একশত কোটি টাকা। কিন্তু সেই কাজও চলছে ডিমেতালে।
এ ব্যাপারে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), সিলেটের সভাপতি আজিজ আহমদ সেলিম বলেন, ‘নগরীর বিভিন্ন স্থানে এই বর্ষায়ও চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। দীর্ঘদিন থেকে এসব কাজ ধীরগতিতে চলায় নগরবাসী মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। অপরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু করায় এই ধীরগতি ও নাগরিক দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।’ উন্নয়ন কাজে ধীরগতি ও নাগরিক দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজর রহমান। তিনি জানান, সঠিক সময়ে শ্রমিক না পাওয়ায় এবং বৃষ্টি হওয়ায় কাজে কিছুটা ধীরগতি দেখা দেয়।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক