উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে দ্বিতীয় দফায় দুই হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও মেঘলা আকাশের কারণে হালদায় ডিম ছেড়েছে মা মাছ। গত বুধবার বিকালের জোয়ারে সংগ্রহকারীরা নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করেন। এরপর ডিম থেকে রেণু ফোটাতে প্রক্রিয়াকরণ শুরু করা হয়।
জানা যায়, গত ২৬ মে রাতে নমুনা ডিম ও ২৭ মে রাতে পূর্ণাঙ্গ রূপে ডিম ছাড়ে মা মাছ। গত ২৭ মে বৃহস্পতিবার রাতভর হালদা নদীর হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার ৩৮৩টি নৌকায় ৮০০ ডিম সংগ্রহকারী ডিম সংগ্রহ করে। তখন সাড়ে ৬ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়। তবে গত বছরের তুলনায় ডিম সংগ্রহ কম হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েন সংগ্রহকারীরা। তাছাড়া লবণাক্ত পানি ও হ্যাচারি অব্যবস্থাপনায় নষ্ট হয় ডিম।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিচার্স ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদা নদীতে দ্বিতীয় দফায় ব্রুড মাছ থেকে প্রায় দুই হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়। এর আগের দফায় সাড়ে ৬ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। গত কয়েকদিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ের ঢল ডিম সংগ্রহকারীদের মুখে নতুন করে হাসি ফুটিয়েছে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, দ্বিতীয় দফায় ডিম পাওয়াতে সংগ্রহকারীরা বেশ খুশি। হালদার রেণুর মান দেশজুড়ে খ্যাত। তাই পরিমাণে কম হলেও হালদার রেণুর চাহিদা আছে। ফলে বিক্রিও চড়া মূল্যে হয়েছে।
জানা যায়, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান ও ফটিকছড়ি উপজেলার প্রায় ৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকাজুড়ে হালদা নদীর অবস্থান। প্রতি বছর এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে পূর্ণিমা-অমাবস্যার তিথিতে বজ্রসহ বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢল নামে হালদা নদীতে। তখনই তাপমাত্রা অনুকূলে থাকলে ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মাছ। এবার পূর্ণিমা তিথি থাকলেও বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢল ছাড়াই মা মাছ ডিম ছেড়ে দিয়েছে। প্রথম দফায় মিলেনি আশানুরূপ ডিম।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছর হালদা নদীতে রেকর্ড পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল- ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি। ২০১৯ সালে সংগ্রহ করা হয় প্রায় সাত হাজার কেজি, ২০১৮ সালে সংগ্রহ করা হয় ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৭ সালে মাত্র ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন