১৮ মে, ২০২২ ১৭:০০

চট্টগ্রামে শিশু আরাফ হত্যায় তিনজনের ফাঁসি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে শিশু আরাফ হত্যায় তিনজনের ফাঁসি

চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া থানাধীন মিয়াখান নগর এলাকায় বাড়ির মালিককে ফাঁসাতে পানির ট্যাংকে ফেলে দুই বছরের শিশু আবদুর রহমান আরাফকে হত্যার দায়ে তিন আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। 

বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. জসিম উদ্দিন আসমিদের উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডিত আসামিরা হলেন- বাকলিয়া থানার মিয়াখান নগরের মো. ফরিদ (৩৮), শিশু আরাফের পরিবার যে বাড়িতে ভাড়া থাকত, সেই ভবনের দারোয়ান মো. হাসান (২৩) ও হাসানের মা নাজমা বেগম। রায়ের পর তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়।

এর আগে গত ৩০ মার্চ এ মামলায় রায় ঘোষণার দিন নির্ধারিত থাকলেও সেদিন রায় হয়নি। নতুন দিন ঠিক করা হয়েছিল ২৮ এপ্রিল। কিন্তু এক আসামি শিশু আরাফের বাবা-মায়ের ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করলে রায় পিছিয়ে যায়। সেই আবেদন নাকচ করে বিচারক তিন আসামির সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেয়া হয়।

আরাফ একটি বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী আবদুল কাইয়ুম ও গৃহিনী ফারহানা ইসলাম দম্পতির একমাত্র সন্তান। ছেলে হারানো মা-বাবার দাবি ছিল, সন্তানের হত্যাকারীদের যেন সর্বোচ্চ সাজা হয়।  

আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, শিশু আরাফ হত্যা মামলায় ২০২১ সালের ১০ মার্চ আদালতে চার্জ গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ২০ জন ও আসামিপক্ষে ১০ জন সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামি ৩ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অপরাধ প্রমাণিত হওয়া তিন আসামির উপস্থিতিতে বিচারক মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ৬ জুন বিকেলে নগরের বাকলিয়া থানার মিয়াখান নগরে একটি ভবনের ছাদে পানির ট্যাংকে ফেলে হত্যা করা হয়েছিল শিশু আরাফকে। এ ঘটনায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এই তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। পরে আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছিলেন। ঘটনার দিন বিকালে মিয়াখান নগরে ভবনের সামনে গাড়ি রাখার জায়গায় খেলছিল শিশু আরাফ। মায়ের কাছে চানাচুর খাওয়ার পর সে পানি খেতে চেয়েছিল। এ সময় আরাফের মা ফারহানা ইসলাম পানি আনতে ঘরের ভেতরে যান। তিনি ফিরে এসে দেখেন ছেলে নেই। এ ফাঁকে আদর করার ছলে আরাফকে নিয়ে ভবনের ছাদে চলে যান নাজমা বেগম। সেখানে পানির  ট্যাংকে ফেলে আরাফকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর নাজমা বেগম, নাজমার ছেলে হাসান ও তাদের পাশের ভবনের বাসিন্দা ফরিদকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। নাজমা বেগম আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে বলেছিলেন, বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে প্রতিবেশীর শিশুকে আদর করার ছলে পানির ট্যাংকে ফেলে হত্যা করেন। তিনি বলেছিলেন, ঋণগ্রস্ত হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় অর্থের লোভ এবং পাশের ভবনের বাসিন্দা ফরিদের প্রলোভনে বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। ঘটনার সময় নাজমার ছেলে হাসান (২৩) গেইট খুলে দিয়ে তাকে ছাদে উঠতে সহায়তা করেছিলেন।

জানা যায়, ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আলম মিয়া ছিলেন আটতলা ওই ভবনের মালিক। তাকে ‘মামলায় ফাঁসাতে’ ওই ভবনের বাসিন্দা কোনো শিশুকে হত্যা করতে নাজমাকে ২০ হাজার টাকার লোভ দেখান ফরিদ। ফরিদ বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর অনুসারী ছিলেন। ঘটনার আগে কাউন্সিলর প্রার্থী ও ভবন মালিক নুরুল আলম মিয়ার প্রচারে হামলার ঘটনায় ফরিদকে আসামি করা হয়েছিল। এ কারণে তিনি ক্ষুব্ধ ছিলেন।  

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর