২৭ মার্চ, ২০২৩ ২১:৪৬

খলিফাপট্টিতে নির্ঘুম রাত

একটি ফ্রক সেলাইয়ের মজুরি মাত্র ৩০ টাকা!

আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

খলিফাপট্টিতে নির্ঘুম রাত

কাপড় সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত কর্মীরা

জীর্ণশীর্ণ পুরনো ভবন। ছোট ছোট কক্ষ। কেউ থান কাপড় কাটছেন, কেউ সেলাই করছেন। কেউ বোতাম লাগাচ্ছেন, কেউ আবার জামার গায়ে জরি-চুমকির কাজ করছেন। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হচ্ছে, বিকেল শেষে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতের শেষ প্রহরেও চলছে কাজ। এভাবেই পার হচ্ছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দর্জি পাড়াখ্যাত খলিফাপট্টির দিনরাত।

১০-২০ বছরের হাজারখানেক কিশোর তরুণ ও নারী ঈদের নতুন জামা বানাতে দিনে ১৬-১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করছেন। সাত চল্লিশে দেশভাগের পর কলকাতা থেকে আইয়ুব আলী নামে এক দর্জি চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার খলিফাপট্টিতে কাপড় সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন। তার হাত ধরে অনেকে সেলাইয়ের কাজ শিখে তারাও নতুন প্রতিষ্ঠান গড়তে থাকেন। সময়ের পরিক্রমায় সেখানে দর্জির দোকান বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে তা তৈরি জামা-কাপড়ের পাইকারি বাজারে পরিণত হয়। গত ৭৭ বছর ধরে নানা উত্থান-পতনের পরও টিকে আছে ‘মেড ইন খলিফাপট্টি’ খ্যাত এই বাজার।

খলিফাপট্টি বণিক কল্যাণ সমিতির নেতারা জানান, বর্তমানে এই বাজারে ২৫০টি পাইকারি কাপড়ের দোকান আছে। এদের সবার নিজস্ব ছোট আকারের কারখানা আছে। এসব কারখানায় শিশুদের কাপড়, ফ্রক, থ্রি পিচসহ নানা রকমের কাপড় তৈরি হয়। এসব কাপড় চট্টগ্রাম নগর, আশপাশের উপজেলা ছাড়াও তিন পার্বত্য জেলা, কক্সবাজার, সিলেটসহ দেশের বেশকিছু জেলার খুচরা বিক্রেতারা কিনে নিয়ে যান।

শাহজালাল গার্মেন্টস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আবুল হোসেন বলেন, ‘মূলত ঈদকে কেন্দ্র করে এখানকার ব্যবসায়ীরা বছরজুড়ে নানা প্রস্তুতি নেন। আর রমজানের এক মাস আগে থেকেই শুরু হয় কাপড় তৈরির কাজ। স্থায়ী কর্মীরা ছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে চুক্তিভিত্তিক দর্জিরা এখানে কাজে যোগ দেয়। এসব কর্মীকে নির্দিষ্ট কোনো ডিজাইন দিলে তারা হুবহু কাপড় তৈরি করে দিতে পারে।’

বেশ কয়েকটি কারখানা ঘুরে দেখা যায়, যারা চুক্তিভিত্তিক কাজ করছেন তাদের বেশিরভাগই কিশোর, তরুণ। এসব কর্মীরা যে যতো বেশি জামা সেলাই করতে পারবেন, ততো বেশি আয় করতে পারবেন। একারণেই বছরের এই সময়টায় তারা সর্বোচ্চ সময় কাজ করেন বলে জানান আঁখি গার্মেন্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী রাশেদ উল্ল্যাহ।

যদিও এতোটা একাগ্রচিত্তে কাজ করা কর্মীরা মজুরি নিয়ে হতাশ। মোহাম্মদ রাসেল নামের এক তরুণ জানালেন, তিনি ৮/৯ বছরের শিশুদের ফ্রক সেলাইয়ের কাজ করছেন। প্রতিটি ফ্রক সেলাই করে তিনি পাবেন ৩০ টাকা। দিনে ১২টির মতো ফ্রক সেলাই করতে পারেন তিনি। তবে জরি চুমকি, লেসের কাজ থাকলে ৬০/৭০ টাকা পাওয়া যায়। অন্য কোথাও যেহেতু কাজ পাননি, তাই তিনি এখানে কাজ করছেন।

এ প্রসঙ্গে খলিফাপট্টি বণিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন বলেন, ‘যারা কাজ করছে, তাদের সাথে আগে কথা বলা হয়েছে। সে কাজ করতে রাজি হয়েছে বলেই তাকে ওই দামে কাজ দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা যদি টিকে না থাকে, লাভ করতে না পারে, তাহলে তো কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। যার কাজ যেমন, তার মজুরিও তেমন। যেসব কাজে বেশি সময় ও দক্ষতা লাগে, সেসব কাজের মজুরি বেশি।’

সমিতির সভাপতি খন্দকার নুরুল ইসলাম জানান, করোনা মহামারির সময় কয়েক বছর ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েন। তবে গত বছর ও এবার মিলিয়ে সেই লোকসান কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন তারা। এবছরের বেচাকেনা ও কার্যাদেশে তারা সন্তুষ্ট বলেও জানান তিনি। তবে এখানকার ঘিঞ্জি পরিবেশ ও পুরনো ভবনগুলো নিয়ে ব্যবসায়ীরা চিন্তিত। নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে কারখানাগুলো নিরাপদ স্থানে সরানো দরকার বলে জানান তিনি।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর