ফুটফুটে শিশু। মায়াবি তার চেহারা। দেখলেই মন জুড়ে যাবে যে কারও। বয়স আট মাসের বেশি নয়। আপন মনে খেলছে সে। পৃথিবীর আলো সে দেখেছে। কিন্তু পৃথিবীতে সন্তানের শ্রেষ্ঠ কোল মায়ের মমতা সে পায়নি। জন্মের পর থেকে হাসপতালেই তার বেড়ে ওঠা। মা-বাবার স্নেহ মমতার ভালবাসার এতটুকু পরশ সে পায়নি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু সার্জারি ওয়ার্ডই হয়ে উঠে তার ঠিকানা। নাম তার সানজিদা জাহান আরাবি।
২০১৫ সালের ২৫ জুলাই। বেলা ৩টা। চমেক হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের পাশের বারান্দার মেঝেতে কাপড় জড়ানো এক নবজাতক কেবলই কাঁদছে। শিশুকে একা ফেলে কেউ চলে গেছে। দেখে এক শিক্ষানবিশ চিকিত্সক তাকে শিশু সার্জারি বিভাগে নিয়ে যান। তখন তার বয়স হয়তো ১৪ দিনের মত। এরপর থেকে আরাবীর ঠিকানা হয় হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগে। পরে কেউ খোঁজ নেয়নি তার। আপন আঙিনা হয়ে উঠেছে হাসপাতাল। চিকিৎসক-সেবিকারা হন পরম স্বজন।
হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. তাহমিনা বানু বলেন, শিশুটির জন্মগত বেশ কয়েকটি গ্রুটি আছে। তবে অপারেশনের মাধ্যমে তার ‘মেনিনগোমাইলোসিল’ নামক রোগের গ্রুটি সারানো হয়েছে। এখন তার মূল সমস্যা মের’দণ্ড ও পক্ষাঘাতগ্রস্থ দুই পা। এটি হয়তো ভালো হবে না। কিন্তু আমরা এখানকার সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়েছি। তিনি বলেন, মেরুদণ্ড ও পায়ের সমস্যা ছাড়া আর কোনো রোগ নেই। সে এখন স্বাভাবিক ঘুরাফেরা করছে, হাসছে, খাবার খাচ্ছে। চোখে মুখে তার আকুতি স্বাভাবিক জীবনে ফেরার। কোনো হৃদয়বান যদি তার দায়িত্ব নেন, তাহলে তার একটি স্থায়ী ঠিকানা হবে। হাসপাতালের স্বেচ্চাসেবী তরুণ প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম নেসার বলেন, ‘হাসপাতালের সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এখন তার দরকার মায়ের মমতার পরশ। না হয় তাকে হাসপাতালেই থাকতে হবে।
শিশু সার্জারি ওয়ার্ডের সেবিকা আসমা, হোছনে আরা ও আরতি বলেন, ‘আমরা পালা করে কাজ করি। এক গ্রুপ গেলে অন্য গ্রুপ তার দায়িত্ব পালন করেন। এখন যত্নের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তার একটি স্থায়ী ঠিকানা দরকার।’
বিডি-প্রতিদিন/২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/শরীফ